প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩
উচ্ছেদের পর পুনর্দখল, ফলোআপ নয় কেন?
'শাহরাস্তিতে দিনভর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ' শিরোনামের সংবাদে মো. মঈনুল ইসলাম কাজল লিখেছেন শাহরাস্তি উপজেলায় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে সড়কের দুপাশে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলো কিছু অসাধু লোক। মঙ্গলবার সকাল থেকে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানে নামে প্রশাসন। এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের নোটিস পেয়ে গত দুদিন ধরে ওইসব অবৈধ ব্যবসায়ী তাদের স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে শুরু করে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর ২০২৪) সকাল থেকে সড়কের দুপাশে স্থায়ী স্থাপনাগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় প্রশাসন। শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা চৌধুরীর উপস্থিতিতে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুক, মেহের স্টেশন, দোয়াভাঙ্গা ও কালিয়াপাড়া বাজার এলাকায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। সন্ধ্যার পরেও শাহরাস্তি গেইট দোয়াভাঙ্গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থায়ী স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়। এ সময় বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও সেনা সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানান, বারবার এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী স্থানীয় লোকজনকে ম্যানেজ করে আবারো সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে থাকে। এতে করে যান চলাচলসহ জনগণের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উচ্ছেদ করা জায়গায় যাতে নতুন করে কেউ দখল করতে না পারে সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে দাবি জানানো হয়।
এমন দাবির প্রতি আমরাও একাত্মতা পোষণ করছি। কিন্তু এ দাবি পূরণে কি আন্তরিকতা দেখা যায়?--মোটেও না। বাস্তবতা হচ্ছে, অধিকাংশ স্থানে উচ্ছেদের পর পুনর্দখল চলে। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে ইতোমধ্যে হাজীগঞ্জের বাকিলা ও বলাখালে উচ্ছেদকৃত জায়গায় পুনর্দখলের মহড়া দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সড়ক ও জনপথ এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেই কিংবা ম্যানেজ করার কৌশল অবলম্বন করে দখলদাররা স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের পদক্ষেপ নেবে--এমনটি আন্দাজ করা যাচ্ছে।
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচলে অন্যতম বাধা হচ্ছে ফুটপাত ও সড়কের শোল্ডার, এমনকি সড়কের দুপাশ পর্যন্ত কিছু দখলদারের অবৈধ দখলে থাকা। এই দখলদারদের উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে ক্ষুদ্র ও বড়ো ব্যবসায়ীরা। তারা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানোর প্রয়োজনে অস্থায়ী ও স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে ফেলে। এই স্থাপনার পরিমাণ দৃষ্টিকটু পর্যায়ে পৌঁছলে এবং গণমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি হলেই তবে সড়ক ও জনপথের টনক নড়ে এবং তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে তারা ব্যাপকভাবে উচ্ছেদ অভিযানে যায়। এই অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিলেই তারা শাসক দলীয় নেতা, জনপ্রতিনিধি সহ প্রভাবশালী মহলের চাপের মুখে পড়ে। এই চাপ সামলিয়ে কিংবা সুযোগ বুঝে তারা অভিযান চালায়। বর্তমানে নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়টাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সে সুযোগ নিচ্ছে। কথা হলো, ফলোআপ কি করছে বা করবে?
ফলোআপ বলতে কী বোঝায়? যে কোনো পদক্ষেপ বা কার্যক্রমের ফলপ্রসূতা পর্যবেক্ষণ করাটাই হচ্ছে ফলোআপ। খোলসা করে বললে বলতে হয়, যে কোনো সমস্যা সমাধানের পর সমস্যাটি স্থায়ীভাবে সমাধান হলো কিনা সে বিষয়ে কিছুদিন পর্যবেক্ষণ ও সে আলোকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাগ্রহণ। সে আলোকে বলছি, চাঁদপুরে সড়ক ও জনপথের জায়গায়, পৌরসভা ও রেলওয়ের জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পরই চলে পুনর্দখল প্রক্রিয়া। কিন্তু ফলোআপ হিসেবে তাৎক্ষণিক চালানো হয় না উচ্ছেদ অভিযান। মনে হয়, এই ফলোআপে আছে কোনো প্রচ্ছন্ন বাধা। এই বাধা দূর করার কোনো উপায় কি নেই?