শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৫৪

কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর প্রথম বার্ষিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের স্মৃতিচারণ সভায় বক্তাগণ

অসাম্প্রদায়িক কাজের কারণে তিনি আমাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন

বিমল চৌধুরী
অসাম্প্রদায়িক কাজের কারণে তিনি আমাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন

অখন্ডমন্ডলেশ্বর শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের শ্রীচরনাশ্রিত অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক, অযাচক আশ্রম চাঁদপুরের অধ্যক্ষ প্রয়াত কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর ১ম বার্ষিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সোমবার শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের পুণ্য জন্মস্থান চাঁদপুর অযাচক আশ্রমে পরমারাধ্য গুরুদেব স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের ভক্ত অনুরাগী থেকে শুরু করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় সমবেত প্রার্থনা সভা। এই প্রার্থনা সভায় জাতির কল্যাণ কামনাসহ প্রয়াত সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। এছাড়া শ্রীশ্রী অখ- সংহিতা পাঠ, ব্রহ্মগায়ত্রী জপ ও নীরব মহানাম জপযজ্ঞ, জপ সমর্পণ ও হরিওঁম কীর্ত্তন এবং স্মৃতিচারণ সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্মৃতিচারণ সভায় বক্তাগণ কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর কর্মময় জীবনের বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, তিনি একটি আশ্রমের প্রধান হয়েও নিজেকে কখনো সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজালে আবদ্ধ করেননি। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার প্রতীক। তাই তিনি সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে আপন হতে পেরেছেন। আমরা দেখেছি তার মহাপ্রয়াণে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষই অশ্রু বিসর্জন করেননি, অশ্রুবিসর্জন করেছেন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার ভালো মনের অনেক মানুষ। তারা সেদিন এ ভেবে অশ্রুবিসর্জন করেছেন যে, তারা একজন ভালোমনের মানুষকে হারিয়েছেন। আমার চোখে আপনি মানুষ, আপনার চোখে আমি মানুষ কিন্তু প্রকৃত অর্থে আমরা কি মানুষ হতে পেরেছি? সর্বাগ্রে আমাদেরকে মানুষ হতে হবে। আমাদের বলনে, চলনে মানুষের কল্যাণকর চিন্তা চেতনা থাকতে হবে। যা ছিলো কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর মাঝে। তিনি সহজেই মানুষকে আপন করতে পেরেছেন। যার ফলস্বরূপ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। অসাম্প্রদায়িক কাজের কারণে তিনি আমাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার জীবদ্দশায় তিনি অখ-ম-লেশ^র শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের পুণ্য জন্মস্থানে আন্তর্জাতিক মানের ধ্যান মন্দির নির্মাণের চেষ্টা করে গিয়েছেন, এ লক্ষ্যে তিনি নির্মাণকাজে অনেকদূর অগ্রসরও হয়েছেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তাকে দিয়ে তা সম্পূর্ণ করার সুযোগ দিলেন না, তার আগেই গুরুভ্রাতা থেকে শুরু করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অনেককে কাঁদিয়ে চলে গেলেন পরপারে। আমরা আজকের এ সভা থেকে সকলের প্রতি অনুরোধ জানাব, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে ওঠা এ মন্দির প্রাঙ্গণে যাতে তার ইচ্ছার প্রতিফলন হয় এবং আন্তর্জাতিক মানের ধ্যান মন্দির নির্মাণ হয় সে বিষয়ে আপনারা সকলে চিন্তা করবেন। তার অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়েই তাকে আমরা স্মরণীয় করে রাখবো।

স্মৃতিচারণ সভায় অতিথিদের মাঝে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিক, চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটাঃ কাজী শাহাদাত, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী (পিপি), সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি তপন সরকার, চাঁদপুর রেলওয়ে শিশু বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মাহমুদা খানম ও পৌর কাউন্সিলর মোঃ সোয়েব।

চাঁদপুর অযাচক আশ্রম পরিচালনা পরিষদের সভাপতি দুলাল চন্দ্র দাসের সভাপ্রধানে ও চাঁদপুর অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক মৃণাল দাসের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সম্মিলিত অখ-সংগঠনের সহ-সভাপতি তাপস কুমার সরকার, চাঁদপুর জেলা সম্মিলিত অখ- সংগঠনের প্রধান অধ্যাপক রাধেশ্যাম কুরি, সাধারণ সম্পাদক গৌতম সাহা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনকুমার দাস, নীরব সমাজকর্মী রনজিৎ সাহা, অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্টের সদস্য অঞ্জন কুমার দাস, চাঁদপুর বিবেকানন্দ যুব সংঘের সভাপতি জয়রাম রায় প্রমুখ। চাঁদপুর জেলা পুজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল সাহা, সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, চাঁদপুর অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্টের ডাঃ মিলন সরকার, অরুণ কুমার ঘোষ, তাপস দাস, সঞ্জয় ভৌমিক, মৃদুল দাস, প্রণব সাহা, গৌতম কুমার ঘোষ, সুকুমার দাস, সুমন ভৌমিক, মানিক দাস, টিটু সাহা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অখ-বিধিমতে বার্ষিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ব্যাপক ভক্তসমাগম পরিলক্ষিত হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকলের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাজারো ভক্ত হৃদয়ের প্রিয় ব্যক্তিত্ব, অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজারো মানুষকে কাঁদিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হন। তার প্রিয় গুরুভ্রাতাগণ শ্রীশ্রীস্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের পুণ্যজন্মস্থান তার নিজ হাতে গড়া অযাচক আশ্রমেই তাকে চির শায়িত করেন। এদিন ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অনেককেই তার সমাধি মন্দিরে নীরবে নিভৃতে অশ্রুবিসর্জন করতে দেখা যায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়