মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৩:৪০

ক্রিকেটারদের বয়স চেতনা ও বাস্তবতা

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
ক্রিকেটারদের বয়স চেতনা ও বাস্তবতা

ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা আজকাল সব ঘরেই কম-বেশি হয়। আমি ও প্রখর দুজনেই মাঝে মাঝে আলোচনা করি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ও ক্রিকেট বিশ্ব নিয়ে। কৈশোরে আমার বাবার ক্রিকেট আগ্রহকে সাহচর্য দিতে আমি যেমন ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতাম, তেমনি প্রখরও ক্রিকেট নিয়ে আমাকে সাহচর্য দেয়। তবে সে ক্রিকেটের হালনাগাদ তথ্যে অনেকবেশি সমৃদ্ধ। কথা বলতে বলতে সে এক পর্যায়ে তুলে ধরলো, বাংলাদেশের ক্রিকেটে জেনারেশন গ্যাপের বিষয়টা নিয়ে আমিও বেশ কয়েকবার ভিন্ন আঙ্গিকে লিখেছি। কিন্তু তার বলাটা একদম সরাসরি। তার কথা হলো, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে পঞ্চপাণ্ডবকে সুযোগ দিতে গিয়ে তরুণরা উপেক্ষিত হচ্ছে বার বার। সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ এবং মাশরাফিকে অফ ফর্মের পরও সুযোগ দিতে গিয়ে কয়েক বছর আগেও তরুণদের প্রতি সুবিচার করা যায়নি। অর্থাৎ তারা এদের ছায়ায় ঢাকা থেকে আর কখনও নিজেদের ম্যাচিওর বা পরিপক্ক হিসেবে তকমা লাগাতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দলে একজন খেলোয়াড় তেত্রিশ বছরে পা দেওয়া সত্ত্বেও আটত্রিশ বছরের তারকাকে জায়গা দিতে ঐ তেত্রিশ বছর বয়সী খেলোয়াড়কে এখনও তরুণ বলে তকমা মেনে নিতে হচ্ছে। অথচ গড়পরতায় চৌত্রিশ বছর বয়সে একজন ক্রিকেট খেলোয়াড় অবসরে যায়। মূলত এ কারণেই আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দল এখনও সুস্থির হতে পারেনি। এখনও শামীম পাটোয়ারী-মেহেদী হাসানদের মতো উঠতি খেলোয়াড়দের একম্যাচ পরে সাইডলাইনে বসে থাকতে হয় অফফর্মে থাকা বেশি বয়সীদের জায়গা দিতে। এবারের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিলো সবচেয়ে বেশি। ক্রিকেটারদের বয়স নিয়ে ভাবতে ভাবতে বেশ কিছু তথ্যের ঘাঁটাঘাঁটি হয়ে গেলো। এতে এ কথা পরিষ্কার হয়ে যায়, আসলে কারও কারও জন্যে বয়স কোনো বাধা হতে পারেনি। বরং একটা সংখ্যা হয়েই ছিলো মাত্র।

টেস্ট ক্রিকেটে দশজন বয়স্ক খেলোয়াড়ের তালিকা করলে তাতে দেখা যায়, পঞ্চাশ বছরের মাইলফলকও কারও কারও খেলোয়াড়ি-দক্ষতায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এ তালিকায় ইংল্যান্ডের উইলফ্রেড রোডস প্রথম স্থানে থাকবেন। তিনি ইংল্যান্ডের একজন বিখ্যাত ক্রিকেটার যার অভিষেক ঘটে আঠারোশ নিরানব্বই সালের এক জুন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে। যখন তিনি ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তখন তার বয়স ছিল বাহান্ন বছর একশ পঁয়ষট্টি দিন। এই অসাধারণ রেকর্ডের ফলে উইলফ্রেড রোডস টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। বয়স্কদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন অস্ট্রেলিয়ার বার্ট আইরনমঙ্গার। উনিশশো আটাশের ত্রিশে নভেম্বরে অভিষিক্ত হওয়া খেলোয়াড় বিদায় নেন উনিশশো তেত্রিশ সালের তেইশে ফেব্রুয়ারি। তখন তার বয়স ছিলো পঞ্চাশ বছর তিনশ সাতাশ দিন। বয়সের বিবেচনায় তৃতীয় জন হলেন ইংল্যান্ডের ডব্লিউ জি গ্রেস। আঠারোশ আশি সালের ছয় সেপ্টেম্বর কেনিংটন ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেকের মাধ্যমে তিনি ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের হয়ে খেলা শুরু করেন। পঞ্চাশ বছর তিনশ কুড়িতম দিনে তিনি নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলেন। ডব্লিউ জি গ্রেস ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত। তিনি দীর্ঘ ক্রিকেট জীবনে অসংখ্য রেকর্ড গড়েছিলেন, যা আজও অক্ষত রয়েছে। তালিকায় চতুর্থ বয়স্ক খেলোয়াড়ও ইংল্যান্ডের। তাঁর নাম জর্জ গান। উনিশশো সাত সালের তের ডিসেম্বর সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা দিয়ে তিনি অভিষেক ঘটান। তিন এপ্রিল উনিশশো তিরিশ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি তাঁর শেষ ম্যাচ খেলেন। অবসরকালীন তাঁর বয়স ছিলো পঞ্চাশ বছর তিনশ তিন দিন। ইংল্যান্ডের জেমস সাউদার্টন ছিলেন বয়স্ক ক্রিকেটারদের তালিকায় পঞ্চম খেলোয়াড়। তাঁর অভিষেক হয় পনের মার্চ আঠারোশ সাতাত্তরে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। এর মাত্র ষোল দিন পরে একই প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একই ভেন্যুতে তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হয়। অবসরের দিন তিনি ঊনপঞ্চাশ বছর একশ’ ঊনচল্লিশ দিন বয়সী ছিলেন। উল্লেখ্য, জেমস সাউদার্টন ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক অভিষিক্ত খেলোয়াড়ও ছিলেন। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্মগ্রহণকারী মিরন বখশ্ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড়দের মধ্যে ষষ্ঠ। বখশের ক্যারিয়ার ছোট ছিল, মাত্র দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। তার অভিষেক ঘটেছিল ঊনিশশো পঞ্চান্ন সালের ঊনত্রিশে জানুয়ারি, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরুদ্ধে। একই বছরের তের ফেব্রুয়ারি ভারতের বিরুদ্ধে খেলেই তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানান। শেষদিনে তাঁর বয়স ছিলো সাতচল্লিশ বছর তিনশ দুই দিন। ইংল্যান্ডের স্যার জ্যাক হবস বয়স্ক ক্রিকেটারদের তালিকায় থাকবেন অন্যতম হয়ে। তিনি সাতচল্লিশ বছর দুশো ঊনপঞ্চাশ দিন বয়সে ক্রিকেটকে বিদায় জানান। এই কৃতিত্ব তাকে টেস্ট ক্রিকেট খেলোয়াড়দের তালিকায় সপ্তম সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে স্থান করে দেয়। হবস শুধু বয়সের জন্যেই নয়, তার অসাধারণ ব্যাটিং দক্ষতার জন্যেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ‘দ্য মাস্টার’ ডাকনামে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তাঁর ক্লাসিক ব্যাটিং স্টাইল এবং নিখুঁত টেকনিক আজও ক্রিকেট বিশ্বে অনুকরণীয়। একই দেশের ফ্রাঙ্ক ওলির স্থান এই তালিকায় অষ্টম। তিনি সাতচল্লিশ বছর সাতাশি দিন বয়সে তাঁর শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার ডন ব্ল্যাকির টেস্ট অভিষেক হয় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঊনিশশো আটাশ সালের চৌদ্দ ডিসেম্বরে। একই দলের বিরুদ্ধেই তিনি শেষ টেস্ট খেলেন ঊনিশশো ঊনত্রিশ সালের এক ফেব্রুয়ারি। ক্রিকেটের ইতিহাসে ডন ব্ল্যাকি একটি বিরল নাম, কারণ তিনি ছেচল্লিশ বছর তিনশ নয়দিন বয়সে তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন। এই অসাধারণ ঘটনা তাকে টেস্ট ক্রিকেট খেলা সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড়দের তালিকায় নবম স্থানে স্থাপন করে। এই তালিকায় দশম স্থানে আছেন ইংরেজ ক্রিকেটার হার্বার্ট স্ট্রাডউইক। এক জানুয়ারি ঊনিশশো দশ সালে শুরু করা প্রথম টেস্টের পর তিনি চৌদ্দ আগস্ট ঊনিশশো ছাব্বিশ সালে তার জীবনের শেষ ম্যাচ খেলেন। হার্বার্ট স্ট্রাডউইক তার শেষ খেলার সময় ছেচল্লিশ বছর দুশো দুই দিন বয়সী ছিলেন।

ক্রিকেটে বয়স্ক উইকেট কিপারের তালিকাটিও কম ঝলমলে নয়। এ তালিকায় শীর্ষে আছেন ইংল্যান্ডের অ্যালেক স্টুয়ার্ট। তাঁকে সঙ্গ দিয়ে তালিকায় আছেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, সৈয়দ কিরমানী, ফারুখ ইন্জিনিয়ার এবং রিডলি জ্যাকবস। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিপার রিডলি জ্যাকবসের টেস্ট অভিষেক হয় একত্রিশ বছর বয়সে। ছয় বছরে পঁয়ষট্টিটি টেস্ট তিনি খেলেছিলেন এবং দুশোটি ক্যাচ লুফেছেন উইকেটের পেছনে থেকে। দুহাজার চার সালে সাঁইত্রিশ বছর বয়সে অবসরগ্রহণ করেন। ভারতের ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার বিশ্ব ক্রিকেটে সেরা উইকেট কিপারদের একজন। টানা ঊনিশশো একষট্টি থেকে ঊনিশশো পঁচাত্তর সাল পর্যন্ত তিনি দলের পক্ষে কিপিং করেন। সাঁইত্রিশ বছর বয়সে ঊনিশশো পঁচাত্তর সালে তিনি ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন।

উইকেট কিপার সৈয়দ কিরমানী শেষ টেস্ট খেলেন ঊনিশশো সাতাশি সালে সাঁইত্রিশ বছর বয়সে। তিনি ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন। আধুনিক ক্রিকেটের এক জনপ্রিয় ব্যক্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ছিয়ানব্বই টেস্ট ও দুশো সাতাশিটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে দুহাজার আট সালে সাঁইত্রিশ বছর বয়সে অবসর নেন। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যালেক স্টুয়ার্ট চল্লিশ বছর বয়সে অবসর নেন। তিনি আট হাজারের অধিক টেস্ট রান করেন।

অফস্পিনার হিসেবে দুহাজার তেইশ সালে বিশ্বকাপ খেলতে নামার আগেই একটি রেকর্ড গড়ে ফেলেছিলেন উগান্ডার ফ্র্যাঙ্ক সুবুগা। তেতাল্লিশ বছর দুশো বিরাশি দিন বয়সী ক্রিকেটার সেই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় ছিলেন। দুহাজার তেইশ সালের জানুয়ারিতে ভারতের বিরুদ্ধে তার অভিষেক হয়। ওই একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলে তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানান।

উগান্ডার অফ স্পিনার ফ্রাঙ্ক এনসুবুগা যখন ঊনিশশো সাতানব্বই সালে প্রথম আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ষোল বছর। এরপর কেটে গেছে প্রায় তিন দশক। অবশেষে তার বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়। উগান্ডার দুহাজার চব্বিশ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে ছিলেন দেশটির সবচেয়ে বয়স্ক এই ক্রিকেটার। শুধু ছিলেন বললে ভুল হবে, তিনি হলেন ওই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড়, যার বয়স ছিলো সে সময় তেতাল্লিশ বছর দুশো বিরাশি দিন।

টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি বয়সে সেঞ্চুরি করেছিলেন জ্যাক হবস্। ঊনিশশো আটাশ-ঊনত্রিশ মৌসুমে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি একশো বিয়াল্লিশ রান করেন। রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন জ্যাক হবস। হাল আমলে চল্লিশ বছর বয়সে টেস্ট সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানের মিসবাহুল হক বয়স্ক সেঞ্চুরিয়ানদের তালিকায় আছেন ঊনিশ নম্বরে। তার আগে আছেন ক্যারিবিয়ান শিবনারায়ণ চন্দরপল। ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ডটি সনাৎ জয়াসুরিয়ার দখলে। দুহাজার নয় সালে ঊনচল্লিশ বছর বয়সী সনাৎ জয়সুরিয়া ভারতের বিপক্ষে একশো সাত রান করেন।

ক্রিকেটের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন ক্রিকেটার তাঁদের বয়স চল্লিশ পেরোনোর পরও ডাবল সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন। সর্বশেষ এই কীর্তি ইংলিশ ক্রিকেটার গ্রাহাম গুচের, ঊনিশশো চুরানব্বই সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। জ্যাক হবসও আছেন এই তালিকায় ঊনিশশো চব্বিশ সালে, একচল্লিশ বছর বয়সে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি বয়সে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটা দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনার এরিক রোয়ানের দখলে। ঊনিশশো একান্ন সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুশো ছত্রিশ রানের ইনিংসটি খেলার সময় তাঁর বয়স ছিলো বিয়াল্লিশ বছর সাত দিন।

বেশি বয়সে তথা পঁয়ত্রিশ বছরের চেয়ে বেশি বয়সে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন এমন ব্যক্তি ক্রিকেট ইতিহাসে মাত্র তিনজন। সর্বশেষ নামটি শ্রীলঙ্কার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারার। তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনশ ঊনিশ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন ছত্রিশ বছর বয়সে। ঊনিশশো নব্বই সালে লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে তিনশো তেত্রিশ রানের ইনিংস খেলার পথে গ্রাহাম গুচের বয়স ছিল সাঁইত্রিশ বছর। তবে সবচেয়ে বেশি বয়সে ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যান্ডি স্যান্ডহ্যামের। ঊনচল্লিশ বছর দুশো বাহাত্তর দিন বয়সে কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি করেছিলেন তিনশো পঁচিশ রান।

বেশি বয়সে উইকেট শিকারী হিসেবে টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটার উইলফ্রেড রোডসের দখলে এই রেকর্ডটি। বাহান্ন বছর বয়সে তাঁর শেষ টেস্টটি খেলেছিলেন ক্যারিবিয়ায়, ঊনিশশো ত্রিশ সালে। ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ওপেনার ক্লিফোর্ড রোচকে আউট করে রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নেন এই ইংলিশ অলরাউন্ডার। সবচেয়ে বেশি বয়সে টেস্ট ক্রিকেটের এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন বার্ট আয়রনমঙ্গার।তখন বার্ট আয়রনমঙ্গারের বয়স পঞ্চাশ পূর্ণ হতে কেবল কয়েক মাস বাকি ছিলো। ঊনিশশো একত্রিশ-বত্রিশ মৌসুমে এমসিজিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অবিশ্বাস্য বোলিং কীর্তি দেখান তিনি। তাঁর শিকার প্রথম ইনিংসে ছয় রানে পাঁচ উইকেট ও দ্বিতীয় ইনিংসে আঠারো রানে ছয় উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয়েছিল যথাক্রমে মাত্র ছত্রিশ ও পঁয়তাল্লিশ রানে। ক্রিকেট বাইবেল উইজডেন তখন বলেছিল, ‘আয়রনমঙ্গার আরেকবার প্রমাণ করলেন, তাঁকে খেলা প্রায় অসম্ভব।’

উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিককারী বয়স্ক বোলার হলেন ইংলিশ অফ স্পিনার টম গডার্ড। ঊনিশশো আটত্রিশ-ঊনচল্লিশ মৌসুমে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি হ্যাটট্রিক করেছিলেন আটত্রিশ বছর বয়সে। এর মধ্যে দ্বিতীয় উইকেটটি ছিল নরম্যান গর্ডনের, যিনি প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে শতায়ু হয়েছিলেন।

টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে সবার আগে মৃত্যুবরণকারী বাঁহাতি স্পিনার জেমস সাদারটনের অভিষেক হয় সবচেয়ে বেশি বয়সে। আঠারোশ’ ছিয়াত্তর-সাতাত্তর মৌসুমে তাঁর অভিষেক হয় টেস্ট ইতিহাসের প্রথম টেস্টে। এ সময় তাঁর বয়স ছিলো ঊনপঞ্চাশ বছর।

বেশি বয়সী অধিনায়কের তালিকায় শীর্ষত্রয়ী হলেন ইংল্যান্ডের। আঠারোশ নিরানব্বই সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডব্লু জি গ্রেস পঞ্চাশ বছর বয়সে নিজের শেষ টেস্টে অধিনায়কত্ব করেন। এছাড়াও পঁয়তাল্লিশে গ্যাবি অ্যালেন এবং তেতাল্লিশ বছরে ওয়াল্টার হ্যামন্ড ইংল্যান্ডের পক্ষে অধিনায়কত্বের স্বাদ লাভ করেন।

টেস্ট বোলিং র‌্যাংকিংয়ের চল্লিশ বছর বয়সে শীর্ষে পৌঁছেছেন চল্লিশ বছর পার হওয়া অ্যান্ডারসন, যিনি সামনের জুলাইয়ে পা দেবেন একচল্লিশে। ঊনিশশো ছত্রিশ সালে অস্ট্রেলিয়ার লেগস্পিনার ক্লেরি গ্রিমেটের পর সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান দখলে নিয়েছেন তিনি।

সাদা বলের ফর্ম্যাটে টি-টুয়েন্টি হোক বা ওয়ান ডে ক্রিকেট, সব মিলিয়ে বয়স্কতম অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের নজির রয়েছে পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ইমরান খানের। তিনি ঊনিশশো বিরানব্বই সালে যখন পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে ওডিআই বিশ্বকাপের ট্রফিটি জেতেন তখন তাঁর বয়স ছিল ঊনচল্লিশ বছর একশ বাহাত্তর দিন। আর বার্বাডোজে যেদিন টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলো ভারত সেদিন দলনায়ক রোহিত শর্মার বয়স ছিলো সাঁইত্রিশ বছর ষাট দিন। ফলে টি-টুয়েন্টি ফর্ম্যাটে বয়স্কতম অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জিতলেও রোহিত সব ফর্ম্যাটের তালিকায় রয়ে যান দ্বিতীয় হিসেবে। প্রথম স্থানটি আজও ইমরান খানের দখলে। দুহাজার পঁচিশের নয় মার্চে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার সময় দলনায়ক রোহিতের বয়স ছিলো আটত্রিশ বছরের চেয়ে সামান্য কিছু কম।

ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত ডানহাতি স্যার ডন ব্র্যাডম্যান অধিনায়ক হিসেবে পাঁচটি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ব্র্যাডম্যান অন্যান্য অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী ছিলেন, কারণ স্কোয়াড বাছাইয়ে তিন নির্বাচকের মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন। চল্লিশ বছর বয়সে ব্র্যাডম্যান ছিলেন দলের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড়। তাঁর দলের তিন-চতুর্থাংশ তাঁর থেকে কমপক্ষে আট বছরের ছোট ছিলেন এবং কেউ কেউ তাকে পিতৃতুল্য হিসেবে দেখতেন।

ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সকে নেতৃত্ব দেন চুয়াল্লিশ বছর বয়সী অধিনায়ক ইমরান তাহির। তার নেতৃত্বে দলটি দুহাজার তেইশ সালে সিপিএল শিরোপা জিতেছে। এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বয়সে অধিনায়ক হিসাবে টি-টোয়েন্টি লিগ জিতলেন ইমরান তাহির। দুহাজার ঊনিশ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান খেলোয়াড় হিসেবে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ক্রিকেটার ছিলেন সিসিল রাইট। তিনি খেলেছিলেন পেনি লিগে, আপারমিলের দ্বিতীয় দলের হয়ে। এই ক্রিকেটারের বয়স তখন পঁচাশি বছর। পনের বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন তিনি। দুহাজার ঊনিশের সাত সেপ্টেম্বর তিনি শেষ খেলাটি খেলেন এবং অবসর নেন।

মানুষের ক্ষমতা অসীম। মানুষ বয়সকে যেমন জয় করতে পারে, তেমনি পারে প্রতিকূলতাকেও জয় করতে। খেলার মাঠে বয়সকে জয় করে ক্রিকেটাররা দলের জন্যে সাফল্য বহন করে আনার ইতিহাস নেহায়েৎ ক্ষুদ্র নয়। সাফল্যের জন্যে মূলত চাই জয়ের ক্ষুধা আর সর্বাবস্থায় নিজের শতভাগ ঢেলে দেওয়ার অদম্য মানস।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মাঠজয় করতে হলে মনকে জয় করতে হবে আগে। তবেই নৈপুণ্যে বয়স কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না মোটেও। প্রখরের শুরু করা আলোচনায় আমি সমাপ্তি টানি এই বলে, মানুষ সে নিজেকে জয় করতে পারলে জগৎ জয় করা তার জন্যে কোনো বাধা নয়। মানুষ যে অপরিমেয় সম্ভাবনার আধার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়