প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৩৬
১২ অক্টোবর ২০২৫, সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবিতে উত্তাল প্রেক্ষাপট, প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত
ঢাকায় শহীদ মিনার অভিযান: শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন তীব্রতর, পুলিশি বাধা সত্ত্বেও স্থিতিশীল
আজ, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ঢাকা শহরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা ন্যায্য বেতন, ভাতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায্য স্বীকৃতির দাবিতে অবস্থান নেন। শিক্ষকরা বলছেন, “সংস্কারের নামে তালবাহানা আর চলবে না”। সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা রাজধানীতে পৌঁছানো শুরু করেন। প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরানোর চেষ্টা করে।
|আরো খবর

ছবি: প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা থেকে আন্দোলনকারীদের সরাতে পুলিশ জলকামান ছোড়ে।
দুপুরে পুলিশ জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এতে অন্তত ১০ জন শিক্ষক আহত হন এবং কয়েকজনকে আটক করা হয়।
পুলিশের এই হঠাৎ কর্মকাণ্ডে শিক্ষকরা উত্তেজিত হয়ে শহীদ মিনারে চলে যান। সেখানে তারা অবস্থান নেন এবং আরও অন্যান্য শিক্ষকও যোগ দিতে শুরু করেন।

ছবি: শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষক–কর্মচারীরা
শহীদ মিনারে শিক্ষকরা জানালেন, তাদের তিন দফা দাবিগুলো হলো:
- মূল বেতনের ২০% বাড়িভাড়া ভাতা প্রদান
- শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা নির্ধারণ
- কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫%
শিক্ষক নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
শহীদ মিনারে অবস্থানরত শিক্ষকরা বলেন, “আমরা রাজনীতি করি না, আমরা শুধু শিক্ষার স্বার্থে রাস্তায় নামেছি।
আমাদের মানবেতর জীবন ও শিক্ষার্থীর অধিকার রক্ষার জন্য এই আন্দোলন অত্যাবশ্যক।”
অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা সংকুচিত। জনদুর্ভোগ এড়াতে আমরা শহীদ মিনারে অবস্থান করব।”শিক্ষক আন্দোলন শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা, রংপুর, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের সব জেলায় শিক্ষকরা মিছিল, মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
সেখানে তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ করছেন, তবে কোনো চূড়ান্ত সমাধান না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
শিক্ষক নেতারা জানান, আগামীকাল ১৩ অক্টোবর থেকে সারাদেশের সব এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জন ও অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু হবে। তারা আরও বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের জন্যই আন্দোলন করছি। আমাদের মানবেতর জীবন নিয়ে সরকার তামাশা করছে। এজন্য শিক্ষার্থীরাও আমাদের পাশে আছে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকদের আন্দোলন ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শিক্ষকরা টুইটার, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে তাদের দাবি তুলে ধরছেন। #শিক্ষকঅধিকার, #সংস্কারেরবিরোধী, #শহীদমিনারঅবস্থানহামলা হ্যাশট্যাগে পোস্টগুলো ভাইরাল হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংযুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষকরা আজও ক্লাসে অংশ নেননি। এতে শিক্ষার্থীরা সহমর্মিতা দেখাচ্ছে এবং অভিভাবকরা সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। শিক্ষকরা বলছেন, “আমরা শিক্ষার্থীর জন্যই লড়ছি। শিক্ষা ও ন্যায্য বেতনের জন্য আন্দোলন করতেই হবে।”
শহীদ মিনারে অবস্থানরত শিক্ষকরা রাতেও অবস্থান রাখবেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে একাধিক সাক্ষাৎকারে তারা সরকারের প্রতি সরাসরি আবেদন জানাচ্ছেন। তারা জানিয়েছেন, আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, শুধু শিক্ষার মান রক্ষা এবং শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে।
আজকের এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন জানাচ্ছে, আন্দোলনকারীদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নেতাদের মধ্যে এক যৌথ কৌশল নেওয়া হয়েছে। তারা দাবি করছেন, যদি অবিলম্বে সরকার পদক্ষেপ না নেয়, তবে আন্দোলন তীব্রতর হবে এবং ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বড় শহরে বড় ধরনের সড়ক অবরোধের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
শিক্ষক নেতারা আগামী মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলেন, “আমাদের আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জন্য। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মান বজায় রাখতে সক্ষম হোক এবং শিক্ষকরা ন্যায্য সুযোগ সুবিধা পায়।”
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একজন শিক্ষক বলেন, “আমাদের জীবন এবং অধিকার রক্ষার জন্য আমরা একসাথে লড়ছি। সংস্কারের নামে আর কারও কাছে তালবাহানা সহ্য করব না।”
আজকের এই এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, ঢাকাসহ সারাদেশে শিক্ষক আন্দোলন তীব্র আকার নিয়েছে। পুলিশি বাধা সত্ত্বেও শিক্ষকরা স্থিতিশীল এবং সরকারের ন্যায্য পদক্ষেপ না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।
ডিসিকে/এমজেডএইচ