প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:২৬
হাসান আলী হাই স্কুল মাঠে জেলা বিএনপির স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, সংস্কারের জন্যে যৌক্তিক সময়ের কথা বলে দীর্ঘ সময় নেয়া ঠিক হবে না। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা চাই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। সংস্কারের নামে কোনো টালবাহানা চলবে না। আমরা এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলাম, এখনো দিচ্ছি। কিন্তু এই সরকারের সময়ে যেভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে, তার থেকে উত্তরণের একটাই পথ দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা। কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না। যে দল ষড়যন্ত্র করবে, জনগণ তাদের সমুচিত জবাব দেবে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) বিকেলে চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চাঁদপুর জেলা বিএনপি আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
|আরো খবর
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সরকারের কাছে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চাই। যৌক্তিক সময় বলে দীর্ঘ সময় নেওয়া ঠিক হবে না। সরকার কী করতে চায়, কতোদিন সময় নিবে, কী কী সংস্কার হবে এগুলো আমরা জানতে চেয়েছি। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, প্রতিটি প্রজন্ম তার আগের প্রজন্ম থেকে বেশি দূরদর্শী। ভবিষ্যতে নতুন নতুন সংস্কারের প্রয়োজন হবে। বেশি সংস্কার করে লাভ হবে না। জনগণের নির্বাচিত সরকার দ্বারা পাস করা না হলে সে সংস্কার টেকসই হবে না। তাই কেবল অতীব জরুরি সংস্কার করে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে আমরা বলতে পারি আমাদের গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত সরকার আছে। চাঁদপুর জেলা বিএনপি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, নিজেদের একতাবদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। অতীতে কী হয়েছে তা ভুলে যেতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে জয়লাভ করাতে হবে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু আরো বলেন, আজকে বাংলাদেশের সকল জায়গায় আমরা কয়েকটি কারণে একত্রিত হচ্ছি। তা হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণাসহ বিভিন্ন জনদাবি। এই সরকারের দায়িত্ব হলো একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। আপনারা জানেন, গত ১৭ বছর আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে, উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যে।
তিনি বলেন, আমরা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যে আন্দোলন করেছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন আমাদের ছোট ছোট ভাই-বোনেরা মনে করে যে, তাদের আন্দোলনেই বিগত সরকার বিদায় নিয়েছে। এটা কি ঠিক? এটা ঠিক নয়। আমরা চাই একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। অন্যথায় এদেশের জনগণ
যদি আন্দোলন-সংগ্রামে নামে, তাহলে আপনাদের অবস্থাও কিন্তু নড়বড়ে হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, এই সরকার সংস্কারের কথা বলছে। আমরাও সংস্কার চাই, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু সংস্কারের নামে টালবাহানা চলবে না। জনগণ যদি চায় তাহলে আশা করছি আগামীতে আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে সরকার গঠন করবো।
তিনি বলেন, যারা আজকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চায়, আমরা মনে করি এটিও একটি ষড়যন্ত্র। পাশাপাশি একটি কথা বলবো, আমাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। নিজের মধ্যে বিভেদ করা যাবে না। অদূর ভবিষ্যতে যখন নির্বাচন হবে, তখন যে-ই মনোনয়ন পাক তাকে নির্বাচিত করতে হবে।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সলিম উল্যাহ সেলিমের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মো. মোস্তাক মিয়া।
আরো বক্তব্য রাখেন এলডিপি কেন্দ্রীয় নেতা আবু তাহের, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ব্যাংকিং ও রাজস্ব বিষয়ক সম্পাদক লায়ন হারুনুর রশিদ ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব রাশেদা বেগম হীরা। এছাড়া জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহবুব আনোয়ার বাবলু, জসিম উদ্দিন খান বাবুল, এম এ শুকুর পাটোয়ারী, দেওয়ান মো. শফিকুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনির চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিমুছ সালাম, আক্তার হোসেন মাঝি, অ্যাড. হারুনুর রশিদ, অ্যাড. মোহাম্মদ বাবর বেপারী, অ্যাড. শামসুল ইসলাম মন্টু, শাহজালাল মিশন, অ্যাড. জাহাঙ্গীর হোসেন খান, আফজাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোশাররফ হোসাইন, জেলা মহিলা দলের সভাপতি অ্যাড. মনিরা চৌধুরী, জেলা কৃষক দলের সভাপতি এনায়েত উল্যাহ খোকন, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা মুক্তা, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাদল, জেলা যুবদলের সভাপতি মানিকুর রহমান মানিক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নূরুল আমিন খান আকাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বাহার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাসুদ মাঝি, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইমাম হোসেন গাজী প্রমুখ। সভার শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন জেলা ওলামা দলের আহ্বায়ক মাও. জসিম উদ্দিন পাটওয়ারী।
হাসান আলী হাই স্কুল মাঠে চাঁদপুর জেলা বিএনপির স্মরণকালের বৃহত্তম এই জনসভায় জেলা বিএনপির প্রবীণ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ মাস্টার, আলহাজ্ব সফিউদ্দিন আহমেদ, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক, বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান শাহীন, মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী, ডা. সরদার মাহবুব, কৃষক দলের ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপু, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান গাজী, ফেরদৌস আলম বাবু, অ্যাড. এটিএম মোস্তফা কামাল, ডিএম শাহজাহান, জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ আব্দুল কাদের বেপারী, দপ্তর সম্পাদক হযরত আলী, জেলা মৎস্যজীবী দলের সাবেক সভাপতি প্রবীণ নেতা আলহাজ্ব আবুল কালাম জমাদার, জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক শরিফ উদ্দিন আহমেদ পলাশ, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারীসহ বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জনদাবির ব্যানারে প্রথমবার অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচিতে এই প্রথম চাঁদপুরে বড় ধরনের জনসমাবেশ করলো বিএনপি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও পতিত ফ্যাসিবাদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশের ৬৪ জেলায় বিএনপি ঘোষিত আট দিনের সমাবেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চাঁদপুর জেলা বিএনপি এই জনসভা আয়োজন করলেও নেতা, কর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে এই জনসভা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। ব্যাপক মিছিল স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শহরের সকল রাজপথ এবং জনসভাস্থল।