প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
কালরাতের বেদনা ভুলি অর্ঘ্যশিখার দীপে
ভূমিকা
বাংলাভাষার নিদর্শনের যে নমুনা পাই
চর্যাপদের চর্যাগুলো তার তুলনা নাই
চর্যাকবি ভুসুকু পা'র চর্যা হতে জানি
আদি হতেই দস্যু এসে এদেশ যেত হানি।
হরিণ যেমন নিজের মাংসে বৈরি নিজের প্রাণ
বঙ্গভূমি সোনার খনি তেমনি হয় খান্ খান্
সম্পদে আর সুন্দরেরই লীলাভূমি খানি
বর্গী এসে লুটতো, বলে- ইতিহাসের বাণী।
অনেক রকম দস্যু শেষে গোরার হাতে পড়ে
বঙ্গভূমি অর্ধমৃত প্রাণ ছিল না ধড়ে
সাতচল্লিশে ছাড়ল গোরা পশ্চিমারা এসে
বঙ্গভূমি ধরল তারা পাশব হাতে ঠেসে।
দীর্ঘদিনের শোষণ হতে মুক্তি চেয়ে চেয়ে
এ জনপদ রক্তগাঙে উঠল শুধু নেয়ে
মুক্তিদাতার পথ চেয়ে রয় বাংলা জনপদ
টুঙ্গিপাড়ায় আসলো খোকা শোষিতের সম্পদ।
খোকার হাসি ধরল মেলে সময় যাদুকরে
কান্না ভুলে সব শোষিত হাসলো ঘরে ঘরে
খোকা হতে মুজিব হয়ে বঙ্গবন্ধু শেষে
মুক্তি পাওয়ার আলোর রেখা জ্বাললো হেসে হেসে।
পটভূমি
পশ্চিমারা দস্যু তো নয় শ্বাপদ প্রাণির বংশ
তাদের চেয়ে ছিলোই ভালো কৃষ্ণ-মামা কংস
শ্বাপদ এসে কাড়তে চেয়ে মায়ের মুখের ভাষা
বীর বাঙালি জীবন দিলো ছাত্র-যুবা-চাষা।
নিষ্পেষণের মাত্রা বাড়ে চাকরি কোটা নিয়ে
পশ্চিমারা ভবন বানায় আমার টাকা দিয়ে
শেখ মুজিবের মাথার ভেতর জন্ম নিল যাদু
ছয় দফাতে মুক্তি সবাই বললো সাধু সাধু।
ছয় দফাকে সামাল দিতে মিথ্যে মামলা সাজায়
সময় কিন্তু নিজ গতিতে মুক্তি-ভেরী বাজায়
আগরতলার মিছে মামলা মুজিবের সংগ্রামে
যুক্ত করে অগ্নি-গতি আন্দোলনের নামে
ঊনসত্তর উঠলো জ্বলে আসাদ হলো বীর
রক্তমাখা শার্টখানা তার অমূল্য এক তীর।
মুজিব নামে নির্বাচনে নৌকা হলো আশা
সত্তরের এই ভোট-জোয়ারে বিজয় এলো খাসা
কিন্তু তবু পশ্চিমারা টাল-বাহানা করে
সাত মার্চে উঠলো জ্বলে মুজিব বজ্রস্বরে।
ভয় পেয়ে যায় ইয়াহিয়া ভুট্টো ডরে কেঁপে
আঁধার পথে চাললো গুটি রাস্তা মেপে মেপে
গোল টেবিলের ঝুলায় মূলো আনলো তলে তলে
পাকিস্তানের খান সেনাদের বঙ্গে দলে দলে।
গোল টেবিলের ভাঙলো সভা অশ্ব ডিম্ব পেড়ে
সাপের মতো হিসহিসিয়ে আসলো ওরা তেড়ে
সময় ক্ষয়ের নকশা তাদের সফল হলো শেষে
বাংলাজুড়ে জ্বললো আগুন ইয়াহিয়ার নির্দেশে।
পঁচিশে মার্চ কালরাত
ফরমান আলী নকশা করে খাদেম রাজার চাল
রাত গভীরে চলবে গুলি মিটাবে তার ঝাল
ঢাকা শহর শ্মশান হবে বাংলা বধ্যভূমি
ক্যান্টনমেন্টে চক্র করে ওষ্ঠে মদ্য চুমি।
একযোগে সব ছুঁড়বে গুলি সারাদেশের দেহে
রাত গভীরে থাকবে সবাই ঘুমাবে নিজে গেহে
টিক্কাখুনির পড়লো ছায়া বাংলা মায়ের বুকে
ফরমান আলীর প্ল্যান মোতাবেক টিক্কা বাঁশি ফুঁকে।
নিরীহ লোক মারার ছকে গালভরা নাম দিয়ে
অপারেশন সার্চলাইটে যায় তারা এগিয়ে
ঘুমন্ত সব লোকের পিঠে গুলির বৃষ্টি হেনে
রক্তস্রোতের গাঙ বসালো পরিণাম না জেনে।
মরলো ঢাকায় চাটগাঁতেও মরলো সৈয়দপুরে
মরলো পথে মরলো ঘুমে জননীর কোল জুড়ে
মরলো যারা তাদের কেউই জানতো না তো হায়
ঘুমের ভেতর লাগবে গুলি অপাপ তাদের গায়!
একটি রাতের ঝড়ের তোড়ে দশটা হাজার প্রাণ
খোদ ঢাকাতেই নিথর হলো রক্তে মায়ের ঘ্রাণ
এগারোটার একটু পরে রাতের আঁধার পেয়ে
হায়েনাদের হঠাৎ ত্রাসে আতঙ্ক যায় ছেয়ে।
কালরাতের সেই মহান ক্ষণে লক্ষ প্রাণের দামে
বীর বাঙালি পায় পতাকা দীর্ঘ পরিণামে
যারা গেছে তাঁদের প্রাণের নির্বাপিত শিখায়
বাংলাদেশ আজ পৃথিবীকে অগ্রগতি শেখায়।
কালরাতের পরিণাম
রাত দুপুরে গুলির ঘায়ে সব হলো বিক্ষত
শেখ মুজিবুর বেছে নিলো বেতার বাণীর পথও
এক কথাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নেতা
তাঁর আদেশে নবম মাসে যুদ্ধে হলো জেতা।
রাত দেড়টায় খান সেনারা শেখকে নিলো ধরে
ভাবলো সবাই বঙ্গবন্ধু গেলেন বুঝি মরে
মুজিব ছিলো সব বাঙালির মনের বাতিঘর
প্রতিরোধের দুর্গ বিশাল মাথায় ছাতিধর।
কালরাতের সেই পরিণামে বিশ্বজুড়ে ঢেউ
মার্কিনে গায় জর্জ হ্যারিসন ভারতে কেউ কেউ
রবি শঙ্কর বাজায় সেতার কবিতা লিখেন যিনি
গিন্সবার্গের নাম দিয়ে তার পদ-পরিচয় চিনি।
ইন্দিরাজির মেধার ধারে ভুট্টো পড়ে কাটা
চীন-মার্কিন হটেই গেলো উৎসাহে যায় ভাটা
তিরিশ লাখের রক্তস্নানে আমরা পেলাম ভোর
কালরাত্রের আঁধার চিরে বাড়াই মনের জোর।
যারা সেদিন রাতের ঘোরে প্রাণের প্রদীপ জ্বেলে
দেখিয়েছিল পথ আমাদের রক্তমাখা তেলে
তাদের সেসব অমল প্রাণের পুণ্যস্মৃতি লয়ে
বীর বাঙালি স্মরণ করি স্বাধীন পরিচয়ে।
তারাই দেশের রক্তধারা তারাই দেশের ভূমি
তাদের রক্তে উদিত হয় ভোরের অরুণ চুমি
তারাই আমার জয় ললাটে গর্বে আঁকে টিপ
তাদের জন্যে যাই রেখে যাই অর্ঘ্যশিখার দীপ।