প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২২, ০০:০০
বিধাতার সেরা সৃষ্টি মানুষ। মানুষের মধ্যে যারা সেরা তারাই নারী। নারী ধারণকারী। নারী পালনকারী। নারী শক্তির আধার, নারী জাগরণের বার্তা বাহিকা। নারী সুন্দরের উদ্বোধক, নারী দুষ্টের দমনকারী আর শিষ্টের পালয়িত্রী। প্রাচীন কৃষিভিত্তিক সমাজে গুহাজীবী মানুষকে সভ্যতার আলো দেখান নারীরাই, যারা ফলের বীজ বিস্তারণের মাধ্যমে কৃষির উন্মোচন করেন। পুরুষেরা শিকার ধরতে গেলে নারীরা মাঠে কৃষিতে মগ্ন থেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন সভ্যতা।
যারা শিক্ষার আলো পেয়েছেন এবং একটু সচেতন, সেইসব কর্মজীবী নারী কর্মক্ষেত্রে মজুরি বৈষম্যের কারণে নিজেদের অধিকার আদায়ে সেদিন যে পথে নেমেছিলেন ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষে, তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাতেই, পৃথিবী ‘বিশ্ব নারী দিবস’ পালন করেছিল প্রথমে ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, পরের বছর ১৯১০ সালের ১৯ মার্চ এবং এরপর ১৯৭৫ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি বছর ৮ মার্চ। বছরের এই একটি দিন নারী দিবস পালিত হওয়া মানে কিন্তু পুরুষের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নয়। বরং পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে সমান মজুরি ও সম্মান পাওয়ার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিকে প্রকাশ করা।
আধুনিককালে নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদে, বিদ্যায়-বুদ্ধিতে, কর্মে-কল্যাণে প্রভূত উন্নতি সাধিত হলেও পুরুষশাসিত সমাজে নারী এখনও পণ্য, এখনও নারী প্রদর্শনীর বস্তু। নারীর প্রতি পুরুষশাসিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এখনও সেই গুহাজীবী মানুষের স্তরেই রয়ে গেছে। যদিও আমরা আজকাল নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলছি এবং নারীকে তার সক্ষমতার চর্চা করতে বলা হচ্ছে, কিন্তু তবুও বৃহত্তর অংশে নারী আজও পরাধীন, নারী আজও ঘরের ও পরিবারের তৈরি নিয়ম-নীতিতে আবদ্ধ।
আজও যে কোনো চলচ্চিত্রে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয়-দক্ষতার চেয়ে সৌন্দর্যের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে পাত্রী নির্বাচন করা হয়, অপ্রাসঙ্গিকভাবেই নারীকে বিজ্ঞাপনে প্রদর্শন করা হয়। তা সে মোটর সাইকেলের বিজ্ঞাপন হোক কিংবা ব্লেডের। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের অভ্যর্থনা কেন্দ্রগুলোতে সুদর্শনা নারীকে রাখা হয় ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি হতে, দক্ষ অথচ দেখতে সুন্দর নয় বলে সে নারীর কদর নেমে আসে শূন্যের কোটায়। যদিও কালো মেয়েকে হেয় করে বিজ্ঞাপনের প্রচার আজ নিষিদ্ধ হয়েছে, তবুও ফর্সা মেয়ের নির্গুণত্ব উপেক্ষা করা হয় আর কালো মেয়ের দক্ষতাকে খাটো করে দেখা হয়। সমাজ আজও নারীকে তেঁতুলের মতো উপমায় দেখে এবং নারীকে সে অজুহাতে ঘর থেকে বের হতে দিতে বাধা দেয় সর্বাত্মক শক্তি খাটিয়ে। নারীর নেতৃত্ব এখনও অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং কীভাবে নারীকে নেতৃত্বে সহায়তা না করে বিরোধিতা করা যায় তা ধর্মীয় আঙ্গিকে ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর প্রয়াস অব্যাহত আছে। পুরুষের সমান কাজ করে কিংবা কখনো কখনো পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করেও নারী এখনো বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বেসরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে। দিনমজুর হিসেবে কাজ করলে সেখানেও নারীর মজুরি কম পুরুষের চেয়ে।
কবি জীবনানন্দকে উদ্ধৃত করে বলতে হয়, ‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ চোখে আজ সবচেয়ে বেশি দেখে তারা।’ এই অন্ধ-দৃষ্টিবানরাই আজকে মধ্যযুগীয় ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ধর্ষিত হওয়ার জন্যে নারীর পোশাককে দায়ী করে উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপায় অথবা ধর্ষকের সাথেই নির্যাতিত নারীর বিয়ের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়। নারী ঐ ধর্ষককে বিয়ে করতে চায় কিনা তার মতামত নেয়ার প্রয়োজনও মনে করে না সমাজপতিরা।
নারী আজও এদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই দ্বিতীয় লিঙ্গ। নারীকে নরের বিপরীতে, মহিলাকে পুরুষের বিপরীতে কিংবা মেয়েকে ছেলের বিপরীতে চিন্তা করা হয়। নারীর কোনো স্বাধীন সত্তা নেই, নারীর কোনো নিজস্ব পরিচয় নেই। নারীকে পিতার পরিচয়ে, স্বামীর পরিচয়ে কিংবা ছেলের পরিচয়ে পরিচিত হতে হয়। যেদিন নারীর সামগ্রিক অর্থে নিজস্ব পরিচয় জন্মাবে সেদিনই নারীর স্বাধীনতা অর্থবহ হবে। এ সমাজে মেয়ের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলেও পুত্রবধূর স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। আবার অফিসের কলিগকে মর্যাদা দেয়া হলেও ঘরের বৌকে দূর ছাই করা হয়। নারী আসলে এ সমাজে ছাই ফেলতে একদিকে ভাঙা কুলো, আর অন্যদিকে বিশেষ প্রয়োজনে নারীকেই পণ্য করে সামনে টেনে আনা হয়। যে সমাজ নারীকে অসূর্যস্পর্শা হতে শেখায়, সে সমাজই আবার বড় বড় ব্যবসায়িক ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করতে নারীকে সামনে ঠেলে দেয়। এ ধরনের গর্হিত কাজে স্বামী-বাবা-ভাই সবারই একই ভূমিকা।
আজকের বাংলাদেশে পেশাজীবী হিসেবে নারী রাজনীতিতে এসেছে এবং সফল হয়েছে। নারী বৈমানিক, নারী মেজর জেনারেল, নারী বিচারক, নারী পুলিশ সুপার, নারী জেলা প্রশাসক- এসব ভূমিকায় নারী সুনাম বজায় রেখে আজ কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বৃহত্তর সমাজের নারীরা আজও অবহেলিত। আজও আমাদের বলতে হচ্ছে, ‘ছেলে হোক, মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’। মধ্যযুগে কন্যাশিশুর ভ্রূণকে হত্যার যে নারকীয় চর্চা বজায় ছিলো তা আজও গ্রামে-গঞ্জে ভিন্নরূপ নিয়ে বর্তমান। আমরা বলতে পারছি না, ‘একটি হলে ভালো হয়, দুটি হলে আর নয়।’ হাজার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হচ্ছে না।
এসডিজিতে নারীদের জন্যে বেশ চমৎকার করে আগামী পৃথিবীর পরিকল্পনা করা হয়েছে। নারীদের জন্যে শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার-সাম্য এবং সবার জন্যে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু এসব সফল করতে হলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। নারীদের যতই নিজের ক্ষমতা নিজেকে নিতে বলি, পারিপার্শ্বিকতার পরিবর্তন না হলে এই পরিকল্পনা ছকে থেকে যাবে, বাস্তবায়িত হবে না। নারীর ক্ষমতায়ন কেবল তাদের পক্ষেই কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে, যে সকল নারী রাজনৈতিকভাবে সফল হয়েছেন। অর্থাৎ, নারীর ক্ষমতায়নে রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে নারীর পক্ষে ক্ষমতায়িত হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নারীর ক্ষমতায়নের অন্তরায় যেমন সামাজিক অনড়তা, তেমনি নারীর নেতিবাচক অর্থনৈতিক অবস্থানও দায়ী। নারী যতদিন আর্থিকভাবে সম্পন্ন হবে না, ততদিন নারীকে সমাজের শেকল পরে থাকতেই হবে। আবার অর্থনৈতিকভাবে সক্ষমতা পেতে হলেও নারীকে কর্মজীবিতার জন্যে শেকল ভাঙতে হবে।
নারীর স্বাধীনতার জন্যে, নারীকে তার মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হলে সবার বাবা-স্বামীকে উদার হতে হবে এবং বাধা দিয়ে নারীকে আটকে রাখা যাবে না। তৃণমূলের নারীর অধিকারকে যখন সমীহ করা হবে সর্বত্র, তখনই নারী দিবসের সার্থকতা প্রতিপন্ন হবে। আমাদের কৌতুকে, নাটকে সর্বত্র নারীকে তথা বৌকে খাটো করে রস সৃষ্টির যে আদিম প্রক্রিয়া বহমান, তা রোধ করতে হবে। তাহলেই নারীর প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধার উদ্রেক হবে এবং আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের সম্মিলনে সমৃদ্ধি উছলে উঠবে। অসেচতন নারীদের মনে-মননে সচেতনতার চর্চা তৈরি করতে নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় সফল ও সার্থক হোক। নারীরা আর আড়ষ্টতায় নিজেকে জড়িয়ে না রাখুক। ডিজিটাল যুগে নিজের ভালো কাজগুলোকে সবার সামনে বেশি বেশি তুলে ধরার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যাক দৃঢ়তার সাথে। কে কী মনে করলো তাকে পাত্তা না দিয়ে নিজেকে ভালোবাসতে শিখুক, নিজের পরশ্রীকাতর মনকে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজেকে মানবকল্যাণে নিয়োজিত করুক। নারী হোক সমাজ-প্রগতির অগ্রসেনানী।
এটাই কামনা করি আজকের নারী দিবসে।
মুক্তিযুদ্ধে নারী
ইলা ইয়াসমীন
দীর্ঘ ২৩টি বছরের অবিচার, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের পরিণতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আয়োজন যে কেবল বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা ছিল না, এই যুদ্ধ যে অন্যায়-অবিচার-অপরাজনীতির বিরুদ্ধে দেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সংগ্রামী চেতনার চূড়ান্ত প্রকাশ ছিল, এই স্বাধীনতা যে এই দেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের প্রাণের আকুতি ছিল তা পরিষ্কার বোঝা যায় মুক্তিযুদ্ধে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জাতির সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে। মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী ৯টি মাস যে যেভাবে পেরেছে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, কী নারী, কী পুরুষ। যতই নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে, এই মাটির নিরীহ নিরাপরাধ সন্তানদের বুকে রক্তপিপাসু পাকিস্তানি হায়েনারা গুলি চালিয়েছে, ততই যেন স্বাধীন বাংলায় নিঃশ^াস নেবার জন্য পুরো জাতি পাগলপারা হয়ে উঠেছে। সমস্ত জাতি ফুঁসে উঠেছে এক সাথে। পাকিস্তানের শাসকরা ও ধর্মগুরুরা চেয়েছিলো ধর্মের নামে নারীদেরকে গৃহবন্দী করে রাখতে। অথচ ধর্ম কখনোই নারী-স্বাধীনতার অন্তরায় নয়। ক্ষুব্ধ নারীরা তাই রুখে দাঁড়াল নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। মুক্তির নেশায় তারাও ছুটে চলল ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ এই স্লোগানকে বুকে ধরে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী এই ‘সোনার মেয়ে’দের অমর কীর্তিগাঁথা কোনোদিন মুছে যাবার নয়।
তবে বাঙালি মেয়েরা শুধু এদেশ থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন নি, প্রবাসী বাঙালি নারীরাও অনেক অবদান রেখেছেন এই স্বাধীনতা সংগ্রামে। দেশের মাটি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থান করেও জাতির প্রতি মমত্ববোধ, দেশের প্রতি ঐকান্তিকতা ফুটে উঠেছে তাঁদের আচার-আচরণে। প্রবাসে অনেক বিত্ত-বৈভবের মধ্যে দিন কাটলেও বাঙালি জাতির সার্বিক দুরবস্থা ও পশ্চিম পাকিস্তানের অত্যাচার-নিপীড়ন দেখে তাদেরও মন কেঁদে ওঠে। এমনি একজন প্রবাসী বাঙালি নারী আমেনা পন্নী। টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান তিনি। তিনি মুক্তিযুদ্ধ না করেও মুক্তিযুদ্ধের একজন আন্তরিক কর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাঙালির হৃদয়ে।
পাক সেনারা ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে একযোগে আক্রমণ চালাল। নিরীহ বাঙালিদের ওপর চালাল নির্যাতনের স্টিম রোলার। তারা নির্বিচারে নারী ও পুরুষদের হত্যা করতে লাগল। সারা দেশে রক্তগঙ্গা বয়ে গেল। এদিকে সাংবাদিকদের রাখা হলো নজরবন্দি করে। ফলে পৃথিবীর অনেক দেশই জানতে পারল না কী হচ্ছে এ দেশে। আমেনা পন্নী সেবার সবেমাত্র এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেছেন। তিনি জানতে পারলেন ২৫ মার্চের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের কাহিনী। সংবাদ পাওয়ামাত্র তিনি সানফ্রান্সিসকো এবং আশেপাশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ করলেন। তিনি মনে মনে প্রতিরোধের পরিকল্পনা করলেন। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা চলল। ২৭ মার্চ গভীর রাত অবধি পরবর্তী কর্মপন্থা কী হবে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলো। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, পাকিস্তান কনস্যুলেট ভবনের সামনে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন। শুধু বিক্ষোভই নয়, ঐ ভবনে তাঁরা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করবেন। দল বেঁধে পরদিন তাঁরা পাকিস্তান কনস্যুলেট ভবনের সামনে বিক্ষোভ করলেন। তাঁরা ভেতরে ঢুকতে চেষ্টা করলে পুলিশ প্রচ-ভাবে বাধা দেয়। প্রচ- বাধার মুখে তাঁরা কনস্যুলেট ভবনে ঢুকতে ব্যর্থ হন। উপায়ন্তর না দেখে তাঁরা চরম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে সামনের পতাকাদ- থেকে পাকিস্তানি চাঁদতারা খচিত পতাকা নামিয়ে ফেলে সেখানে উড়িয়ে দেন বাংলাদেশের পতাকা।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই মহীয়সী নারী ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন শহরে ঘুরে এসব এলাকায় ওষুধ কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের জন্য ওষুধ জোগাড় করলেন এবং লন্ডন ও ভারত হয়ে সেই ওষুধগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে এসে পৌঁছালেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি ইংল্যান্ড-আমেরিকার বিভিন্ন স্টেট ও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে প্রায় হাজার তিনেক চিঠি লেখেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সাহায্যার্থে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করেন। এসব অর্থ তিনি মুক্তিসংগ্রামে জড়িত ব্যক্তিদের কল্যাণে ব্যয় করেন। এভাবেই এই মহৎপ্রাণ নারী নিজের অমূল্য কীর্তিগাঁথা রচনা করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্মরণীয় ও বরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে বাঙালির হৃদয়ে জায়গা করে নেন। এই স্বাধীনতার মাসে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমেনা পন্নী ও তাঁর মতো হাজারও সংগ্রামী নারীকে আবারও স্মরণ করছি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে।
ইলা ইয়াসমীন : কলাম লেখক।