প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খালকে মানুষ প্রয়োজনীয় কিছু বলে ভাবার অবকাশ যেনো খুঁজে পায় না। নির্বিঘ্নে দখল করার একটি জায়গা বলেই খালকে সবাই মনে করে। সেজন্যে খালের পাড় দখল, খাল দখল, খাল ভরাট ইত্যাদি সংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রায়শই লক্ষ্য করা যায়। খালকে মানুষ দখল না করলেও অন্তত কচুরিপানা দখল করে পরিবেশ নষ্ট করে এবং স্বাভাবিক পানি প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে।
চাঁদপুর জেলার বড় খালগুলোর অধিকাংশ যেখানে অস্তিত্বের বিপন্নতায় ভুগছে, সেখানে ছোট খালগুলোর অবস্থান কী হতে পারে সেটা আন্দাজ করা যায়। চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারস্থ বাদিয়া বাড়ি খাল ভরাট হয়ে মেয়র রোডে পরিণত হয়েছে। বিদ্যাবতী খাল পুরোপুরি ভরাট না হলেও কিছু অংশ ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হারিয়েছে, কিছু অংশ দখলদারিত্বে সরু হয়ে গেছে, সর্বোপরি নাব্যতা হারিয়েছে। চাঁদপুর শহরের ‘লাইফ লাইন’ বলে খ্যাত এসবি (শ্রীরামদী-বিষ্ণুদী) খালের উত্তরাংশ ব্যাপক দখলদারিত্বে অস্তিত্ব হারিয়েছে। মেঘনার পানি প্রবাহ এ খালে ঢোকার কোনো সুযোগ আর বাকি নেই। বর্ষায় দক্ষিণাংশে ডাকাতিয়ার জোয়ার-ভাটার পানিতে খালটির প্রবহমানতা লক্ষ্য করা গেলেও শুষ্ক মৌসুমে খালটিকে আর খাল মনে হয় না, মনে হয় একটি বড় নালা। সংস্কার ও খননের অভাবে এবং দখলকৃত জায়গা পুরোপুরি পুনরুদ্ধার না হওয়ার কারণে বিদ্যাবতী ও এসবি খাল নাব্যতা সংকটে শ্রীহীন ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে শহরবাসীর বিড়ম্বনা ও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমন রূঢ় বাস্তবতায় গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে পুরাণবাজারের নাপিত বাড়ি খাল নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি সংবাদ। এ সংবাদটিতে ভালো কিছুই উপজীব্য হয়নি। খালটির লোহারপুল অংশ ক্রমশ সরু হয়ে আসছে ক্ষমতাবান কতিপয় ব্যক্তির সুবিধার্থে পাড় দখল করার কারণে। দখলকৃত অংশে স্থায়ী-অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে সেটিকে নিজস্ব সম্পত্তিতে পরিণত করেছে।
মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর সাথে সংযোগ রক্ষাকারী চাঁদপুর শহরের উপরোক্ত খালগুলোতে এক সময় পাল তোলা নৌকা/নৌযান নির্বিঘ্নে চলাচল করতো। এখন ভরা বর্ষা ছাড়া এমন কিছুর চলাচল বিরলদৃষ্ট হয়ে গেছে। ময়লা-আবর্জনার প্রাচুর্যে খালগুলোর পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ খালগুলোর দিকে তাকিয়ে এখন দৃষ্টিতে প্রশান্তির সংযোগ ঘটে না। সচেতন ব্যক্তিমাত্রই কম-বেশি পোড়েন ক্ষোভের অনলে।
আশার কথা হলো, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল পর্যায়ক্রমে পৌর এলাকার খালগুলো পুনরুদ্ধার পূর্বক সংস্কার করার আশ্বস দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ফিরিয়ে আনবেন চাঁদপুরের ঐতিহ্য, রক্ষা করবেন পরিবেশের ভারসাম্য, আর দৃষ্টিনন্দন করবেন শহরকে-এমন পরিকল্পনার কথাও তিনি তাঁর আশ্বসের সাথে শুনিয়েছেন। শহরবাসী মেয়র মহোদয়ের এমন আশ্বস-পরিকল্পনাতে কম-বেশি উচ্ছ্বসিত বলে মনে হচ্ছে। আমাদের বিশ্বস, মেয়র মহোদয় তাঁর আশ্বস ও পরিকল্পনাতে অটল থাকবেন এবং বাস্তবায়নের পথে যথাসম্ভব কম সময়েই হাঁটা শুরু করবেন।