শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

জেলার প্রথম নারী পিপিকে অভিনন্দন

অনলাইন ডেস্ক
জেলার প্রথম নারী পিপিকে অভিনন্দন

চাঁদপুর জেলায় একসময় কোনো নারী উকিল ছিলো না। নারীরা ওকালতিতে আসতে পারে--এটা ছিলো চাঁদপুরবাসীর কাছে কল্পনাবহির্ভূত। সেটাকে কল্পনার আওতায় এনে বাস্তবে যিনি রূপায়িত করেন, তিনি হচ্ছেন হোসনে আরা কাজল। চাঁদপুর শহরের আদর্শ মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা এই কাজল ১৯৯২ সালে চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন। তখন তার এই যোগদানের বিষয়টি সকল মহলে ব্যাপক আলোচিত হয় এবং বিস্ময়ও তৈরি করে। কেউ কেউ মন্তব্য করেন, শেষ পর্যন্ত তিনি ওকালতি পেশায় টিকে থাকতে পারবেন তো?--হ্যাঁ তিনি টিকে আছেন প্রায় ৩২ বছর যাবত। আর তার পথ ধরে কিংবা তার মতো আরো অনেক নারী যোগদান করেছেন ওকালতি পেশায়। এঁদেরই একজন কোহিনুর বেগম, যিনি গত পরশু চাঁদপুর জেলায় প্রথম নারী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর কণ্ঠের আদালত প্রতিবেদক চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম যে সংবাদ পরিবেশন করেছেন, তাতে তিনি লিখেছেন, চাঁদপুর জেলার ফৌজদারী আদালতে (জেলা জজ আদালতে) সাময়িক দায়িত্ব পালনের জন্যে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে নিয়োগ পেলেন অ্যাডভোকেট কুহিনুর বেগম। চাঁদপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান গত ২০ আগস্ট পিপি হিসেবে তাকে এ নিয়োগপত্র প্রদান করেন। চাঁদপুর জেলার সদ্য সাবেক পিপি রনজিত কুমার রায় চৌধুরী ১৪ আগস্ট পদত্যাগ করার প্রেক্ষিতে লিগ্যাল রিমেমব্রেঞ্চার্স ম্যানুয়েল ১৯৬০-এর অধ্যায়-২-এর ২৭(১৭এ) বিধি এবং ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ৪৯২ (২) ধারামতে চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডঃ কুহিনুর বেগমকে পিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের এই অনুমোদন দেয়া হয়। তিনি গত বুধবার (২১ আগস্ট ২০২৪) পিপি হিসেবে যোগদান করেন। বিকেলে তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (জেলা জজ)-এর বিচারক ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি পিপি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর চাঁদপুরের আইনজীবীদের মাঝে আনন্দের রেশ ছড়িয়ে পড়ে।

চাঁদপুরে প্রথম নারী জেলা ও দায়রা জজ তথা বিচার বিভাগের প্রধান হচ্ছেন বেগম নাজমুন আরা সুলতানা, যিনি ১৯৯৬ সালের ১৫ জুন যোগদান করে সুনামের সাথে ১৯৯৮ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। আর দ্বিতীয় নারী জেলা ও দায়রা জজ হচ্ছেন বেগম সামছুন নাহার বেগম, যিনি ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর যোগদান করে ২০১০ সালের ২১ জুলাই পর্যন্ত কর্মদক্ষতার সাথে দায়িত্বপালন করেন। চাঁদপুরে প্রথম নারী সিভিল সার্জন তথা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন নেত্রকোণার মেয়ে, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের কৃতী সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরী (হাজীগঞ্জ পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ও হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান)-এর সুযোগ্য সহধর্মিণী ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী (যিনি নিজেও মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত)। তার আগে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেশের প্রথম নারী সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করে গণমাধ্যমের মোক্ষম উপজীব্যে পরিণত হন। তাঁকে নিয়ে পরিবেশিত হয় বিশেষ প্রতিবেদন। একটা বড়ো সময়ের ব্যবধানে ২০১৫ সালের ১২ জুন জেলা পুলিশের প্রধান রূপে চাঁদপুরে ২০তম ও প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন শামসুন্নাহার। বৃহত্তর ফরিদপুরের এই মেয়ে তাঁর বহুমুখী দক্ষতায় শুধু চাঁদপুরে নয়, দেশের পুরো পুলিশ বিভাগে আলোচিত হন পরপর দুবার জাতীয় পুলিশ প্যারেডে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে ২০ তম এবং প্রথম নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন ঢাকা জেলার মেয়ে অঞ্জনা খান মজলিশ, যিনি নানা অনিয়মের প্রশ্নে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তার বড়োভাই ডা. জেআর ওয়াদুদ টিপু ও 'বালু খেকো' নামে কুখ্যাত ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বহুবিধ অনিয়মের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্ট করেন এবং একবছর চার মাস ২৮ দিনের মাথায় বদলি হয়ে ৩১ মে ২০২২-এর পরে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক পদে যোগদান করেন।

উপরে চাঁদপুরের বিশিষ্ট পাঁচজন নারী কর্মকর্তার প্রসঙ্গ তুলে ধরার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, নারীরা তাদের স্বীয় যোগ্যতায় নেতৃত্ব দিতে পারেন ও সামগ্রিক কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেন এমন পদে যোগদান করার সুযোগ পেলে শুধু নিজেদের আলোকিত করেন না, পুরো নারী সমাজকে আলোকিত করেন, বিশেষভাবে দেশকে তুলে ধরেন। চাঁদপুরে প্রথম নারী আইন কর্মকর্তা তথা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে অ্যাডভোকেট কোহিনুর বেগম সাময়িক নিয়োগ পেলেও তার কর্মদক্ষতায় তিনি সেই নিয়োগকে স্থায়ী করতে পারবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। তাকে জেলাবাসীর পক্ষ থেকে প্রথম নারী পিপি হবার জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং তার জন্যে নিরন্তর শুভ কামনা করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়