শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০

বকরির খাসি হওয়া প্রসঙ্গে

অনলাইন ডেস্ক
বকরির খাসি হওয়া প্রসঙ্গে

‘পালবাজারে জবাইয়ের পর বকরি হয়ে যাচ্ছে খাসি ॥ প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তা’ শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে একটি সরেজমিন প্রতিবেন। এতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর শহরের পালবাজারে বকরি ছাগলকে খাসি বলে বিক্রি করায় ভোক্তাগণ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। শরিয়তপুরের সখিপুর থেকে আনা হচ্ছে এসব বকরি ছাগল। ভোজন রসিকদের খাসির চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ ভোক্তার সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে বাজারের কতিপয় অসাধু চক্র মোটা দাগে এই প্রতারণায় মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। ২৪ মে শুক্রবার সকালে পালবাজারে অবস্থান নিলে ভোক্তাগণ বকরি ছাগলকে খাসি বলে বিক্রির প্রতারণার অভিযোগ তোলেন। ক্রেতা শ্যামল, আলমগীর, পার্থসহ আরো অনেকে জানান, পালবাজারে খাসির মাংস কিনতে গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছি। ওজনে কম, মাংসে পানি প্রয়োগ, বকরির মাংস খাসি বলে চালিয়ে দেয়া, খাসির মাংসে বকরি মিশিয়ে বিক্রি, ক্রেতার অগোচরে চর্বি, হাড় ও খাওয়ার অযোগ্য অংশ মিশিয়ে বিক্রি যেনো এ বাজারে নিয়মে পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, পালবাজারে হানিফ ঢালী, খলিল বেপারী, আলমগীর বেপারী ও সুফিয়ান বেপারী, জাকির দীর্ঘদিন যাবৎ খাসি বিক্রির নামে বকরি বিক্রি করে লোক ঠকাচ্ছেন। অনেক সময় এরা না থাকলেও তাদের দোকানের কর্মচারী কসাইরা একই কায়দায় লোক ঠকাচ্ছে। তাই এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। সরজমিনে দেখা যায়, যারা মাংস চিনে ফেলছে তাদের কাছে বকরি ছাগলের মাংস ৮৫০ থেকে ৯শ’ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। আর যারা চিনতে পারছে না তাদের কাছে এই বকরির মাংসই খাসির মাংস বলে ১১০০ হতে ১২০০ টাকা দাম কেজি প্রতি রাখা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের ব্যবসায়ীগণ জানান, শরিয়তপুরের সখিপুর থেকে রোগা ও দুর্বল বকরি ছাগলগুলো কিনে আনেন এই পালবাজারের খাসি বিক্রেতারা। সকাল ৬টা হতে দুপুর ২/৩ টা পর্যন্ত এগুলো খাসি বলে বিক্রি করে লোক ঠকাতে তারা ব্যস্ত থাকেন। সখিপুর থেকে শহরে নিয়ে আসার পর বকরি ছাগল জবাই শেষে এগুলো বিশেষ কায়দায় কসাইরা খাসিতে রূপ দেয়। যা সরল বিশ্বাসে কিনে প্রতিনিয়ত ভোক্তারা ঠকছেন। প্রতারক এসব খাসি বিক্রেতারা খাসির একটি পায়ের সাথে জবাইয়ের পর বকরির একটি পা মিলিয়ে ঝুলিয়ে রেখে খাসির মাংস বলে বিক্রি করেন। মাংস কেটে ওজন দেওয়ার আগে পলিথিন ব্যাগে রাখার সময় হাতে লুকিয়ে রাখা চর্বি বা খাওয়ার অযোগ্য অংশও দ্রুতই মিশিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়াও মাংসে পানি মিশিয়েও ওজন অনেক বাড়িয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বকরিকে খাসি বলে বিক্রি করছেন। ‘মায়ের দোয়া খাসি বিতানে’র কর্মচারী মনির পাটোয়ারী বলেন, লবণের দাম বেশি হওয়ায় খাসি বা বকরি ছাগলের চামড়া বিক্রি করা যায় না। ঢাকাতে ২০/২৫ টাকা চামড়া। সেক্ষেত্রে আধা কেজি লবণের দাম ১৫ টাকা। তাই চামড়া এবং ময়লা আবর্জনা বস্তা বেঁধে নদীতে ফেলে দেই। এতে আমাদের পোষায় না। সেজন্যে কৌশল করে মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে। মাংস বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান বাজারে খাসির আমদানি কম। এই ব্যবসায় আগের মতো লাভ নেই। ঢাকার পার্টির জন্যে আমরা খাসি ছাগল কিনতে পারি না। তারা বেশি দাম দিয়ে খাসি ছাগল কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে। আসল খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও আমাদের পোষাচ্ছে না। তবে বকরির মাংসকে খাসির মাংস বলে বিক্রি করার অভিযোগটি পুরোপুরি সত্য নয়। লিটন শেখ নামের আরেক কসাই বলেন, মুগুর, ছুরি, চাকু ব্যবহার করে মাত্র ১৫ মিনিটেই আমরা একটি ছাগল জবাই করে মাংস ছাড়িয়ে বিক্রি করতে পারি। এখানে দিনে ৬শ’ টাকা হাজিরায় কাজ করছি। বকরিগুলো খাসি বলে চালায় মূলত হোটেল ব্যবসায়ীরা। শহরের প্রায় সব হোটেল রেস্তোরাঁতেই বকরির মাংস খাসি বলে চালানো হচ্ছে। বরং আমরা ক্রেতাদের দাঁড় করিয়ে রেখে তাদের সামনেই খাসি জবাই করে মাংস বিক্রি করছি। যদিও খাসি বিক্রেতাদের সংরক্ষিত মজুদাগারে হাতে গোণা ২/৩টি খাসি বাদে সবই বকরি দেখতে পান এ প্রতিবেদক। বিষয়টি চাঁদপুর জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নূর হোসেন রুবেলকে অবগত করলে তিনি বলেন, দ্রুতই এই বিষয়ে পালবাজারে খাসির মাংসের দোকানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে চাঁদপুর সদরের এসিল্যান্ড মোঃ আল এমরান খানকে অবগত করলে তিনি বলেন, আমরা পালবাজারের খাসির মাংসের পাশাপাশি ৪/৫টি গরুর মাংসের দোকান নিয়েও বিস্তর অভিযোগ পেয়েছি। প্রধান অভিযোগ হচ্ছে, পানি মিশ্রিত ও বয়স্ক গরুর মাংস বিক্রি এবং ভোক্তাদের ওজনে কম দেওয়া। অপরদিকো মাংস বিক্রির বাজারের সামনে ক্রেতাদেরকে নিয়ে বিক্রেতাদের টানাটানি করায় সাধারণ লোকজনও সে পথ দিয়ে যেতে বিব্রতবোধ করেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দ্রুতই ব্যবস্থা নিবো।

চাঁদপুর শহরের প্রসিদ্ধ পালবাজারেই বকরি খাসি হয়ে যায়--এমনটি কিন্তু নয়। দেশের অধিকাংশ বাজারেই এমনটি হয়। চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা স্থানীয় প্রশাসন তাদের নাগালের মধ্যে থাকায় পালবাজারসহ শহরের অন্যান্য বাজারে অভিযান চালাবে হয়তো। কিন্তু নাগালের বাইরের বাজারগুলোতে এমন অভিযান চালানো হবে না বললেই চলে। সেজন্যে বাজার কমিটিকে হতে হবে সক্রিয় ও কঠোর। তাহলে বকরিকে খাসি বলে চালিয়ে দেয়ার সাহস কোনো মাংস বিক্রেতা করতে পারবে না। বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ বাজার কমিটি নামে থাকে, কাজে থাকে না। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে সিটি কর্পোরেশন/ পৌর প্রশাসন কিংবা উপজেলা প্রশাসন বাজার কমিটিকে মাংস বিক্রিতে ভেজাল ও অনিয়মসহ অন্যান্য পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে অনিয়ম রোধে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারেন এবং জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে পারেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়