প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:২৪
জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন মেরুকরণ: ডাকসু নির্বাচনে চমক দেখালো শিবির, শীর্ষ তিন পদেই জয়
ডাকসুর ইতিহাসে প্রথম: শিবিরের হাতে ছাত্র সংসদের চাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত 'ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট' প্যানেল অভাবনীয় জয় পেয়েছে। যেখানে অতীতে শিবির কখনো ডাকসুর কোনো পদে জয় পায়নি, এবার তারা ভিপি, জিএসসহ ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টি জিতে নিয়েছে।
|আরো খবর
ছয় বছর পর মঙ্গলবার ডাকসু নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হয় উৎসবের আমেজে ও শান্তিপূর্ণভাবে। প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেন। প্রায় সবকটি হলের ভোটার কেন্দ্রীয় ভিপি ও জিএস পদে শিবিরের প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে দেন। বিশেষ করে মেয়েদের হলগুলোতে শিবিরের প্রার্থীরা নজিরবিহীন সমর্থন পান। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রার্থীরা, তবে কোনো পদেই তারা জয়ের মুখ দেখেননি। তিনটি সম্পাদকীয় পদে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

ডাকসুতে জয়ী ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম ও জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ফলাফল
ভিপি: সাদিক কায়েম; ভোট: ১৪,০৪২; প্রতিদ্বন্দ্বী: আবিদুল ইসলাম খান ৫,৭০৮ ভোট
জিএস: এসএম ফরহাদ; ভোট: ১০,৭৯৪; প্রতিদ্বন্দ্বী: শেখ তানভীর বারী হামিম ৫,২৮৩ ভোট
এজিএস: মুহা. মহিউদ্দীন খান; ভোট: ১১,৭৭২; প্রতিদ্বন্দ্বী: তানভীর আল হাদী মায়েদ ৫,০৬৪ ভোট
সম্পাদকীয় পদে বিজয়ী শিবির সমর্থিত প্যানেল
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক: ফাতিমা তাসনীম জুমা; ভোট: ১০,৬৩১
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক: ইকবাল হায়দার; ভোট: ৭,৮৩৩
কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: উম্মে সালমা; ভোট: ৯,৯২০
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক: জসীমউদ্দিন খান (খান জসীম); ভোট: ৯,৭০৬
ক্রীড়া সম্পাদক: আরমান হোসেন; ভোট: ৭,২৫৫
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক: আসিফ আব্দুল্লাহ; ভোট: ৯,০৬১
ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক: মাজহারুল ইসলাম; ভোট: ৯,৩৪৪
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক: আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ; ভোট: ৭,০৩৮
মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক: সাখাওয়াত জাকারিয়া; ভোট: ১১,৭৪৭
জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক: মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ; ভোট: ৭,৭৮২
সমাজসেবা সম্পাদক: যুবাইর বিন নেছারী; ভোট: ৭,৬০৮
গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক: সানজিদা আহমেদ তন্বি; ভোট: ১১,৭৭৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থীর স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতি দেখা গেছে। ছবি :সংগৃহীত
ভোটগ্রহণ ও নির্বাচনী পরিবেশ
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে আট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ চলাকালে কোনো বড় অনিয়ম দেখা না গেলেও দুপুরের পর কিছু প্যানেলের প্রার্থীরা বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা, আচরণবিধি লঙ্ঘন ও ব্যালেটে আগে থেকে টিক দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ভোটকে গ্রহণযোগ্য মনে করেছেন। নির্বাচনে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই বলে জানান উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।ছবি :সংগৃহীত
বিজয় উদযাপন ও প্রতিক্রিয়া
ফল ঘোষণা রাত পৌনে ১টার দিকে শুরু হয়। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকায় নিরাপত্তা কড়াকড়ি বাড়ানো হয়। রাত ৩টার দিকে ছাত্রশিবির কর্মীরা বিজয় মিছিল শুরু করেন। ভিপি পদে জয়ী সাদিক কায়েম বলেন, “ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের প্রজন্ম বিজয়ী হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের উপর নেতৃত্বে আমানত রেখেছে। আমরা তার হক আদায় করব।”
স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা ফল বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, "অভিনব পন্থায় নির্বাচন কারচুপি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো রাত হয়ে থাকবে।"
ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে রাজনীতি চালাতে পারেনি। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাড়া এবারই প্রথম সরাসরি ডাকসু নির্বাচন দেখল বিশ্ববিদ্যালয়। ভোটে ৩৯,৮৭৪ জন ভোটার অংশ নেন। কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ৪৭১ জন এবং হল সংসদের জন্য ১,০৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
ছাত্রী হলগুলোতে শিবিরের প্রার্থীরা বিশেষ সমর্থন পান। ১৩টি হলের মধ্যে জগন্নাথ হল ছাড়া আর কোনোটিতেই ছাত্রদল সুবিধা করতে পারেনি।

ডাকসু নির্বানের ভোট গণনা ঘিরে ক্যাম্পাসের প্রবেশ মুখেও ছিল বহিরাগতদের অবস্থান।ছবি :সংগৃহীত
ডিসিকে/এমজেডএইচ