শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে কচুক্ষেত থেকে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২২

‘ইলিশ চত্বর’ থাকবে, শেষ পর্যন্ত ইলিশ কি আর থাকবে?

অনলাইন ডেস্ক
‘ইলিশ চত্বর’ থাকবে, শেষ পর্যন্ত ইলিশ কি আর থাকবে?

চাঁদপুর কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. মিজানুর রহমান গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ‘ইলিশ চত্বর’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন পরিবেশন করেছেন। তিনি লিখেছেন, অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকা চাঁদপুর শহরের ‘ইলিশ চত্বর’টি সংস্কারে আরো দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। গত ক’দিন ধরে চাঁদপুর স্টেডিয়ামের মূল প্যাভিলিয়নের বিপরীতে স্থাপিত ইলিশ চত্বরটি সংস্কারের কাজ চলছে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুরে সংস্কার কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সুজিত বড়ুয়া। এ সময় তিনি জানান, ইলিশের আগের অবয়বের মধ্যে বড়ো জায়গাটি ছোট করা হচ্ছে। মানুষের চলাচল ও যানবাহনের স্পেস বাড়ানোর লক্ষ্যে চত্বরের বাড়তি অংশটি ভেঙ্গে মূলত সংস্কার কাজ করানো হচ্ছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষে দৃষ্টিনন্দন রূপে ফিরিয়ে আনা হবে স্থাপনাটি।

‘ইলিশের বাড়ি’ খ্যাত চাঁদপুর জেলা সারাদেশে মিঠা পানির সুস্বাদু ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে সুপরিচিত। অত্যন্ত সুস্বাদু এই মাছের ব্যাপক জনপ্রিয়তার ফলে দেশে ও বিদেশে ‘চাঁদপুরের ইলিশ’ ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাই ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ এই স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যে পুরানো শহরের ব্যস্ততম এলাকা তালতলা, চাঁদপুর স্টেডিয়াম, পৌর বাসস্ট্যান্ড এবং সরকারি অফিসার্স কোয়াটারের ত্রিমুখী রাস্তার মিলনস্থলে চাঁদপুর পৌরসভার উদ্যোগে বিখ্যাত ভাস্কর শিল্পী স্বপন আচার্যের নিখুঁত কারুকাজে স্টেডিয়ামের সামনের সড়কের অনেকখানি জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয় এই ইলিশ চত্বর। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে চাঁদপুর শহরে ব্যাপক হারে যানবাহনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত যানবাহনের ফলে সৃষ্ট যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় পথচারী ও শহরবাসীদের। বিশেষ করে ইলিশ চত্বরের এই জায়গাটিতে যানজট হয়ে যায় নিত্যদিনের সঙ্গী। যানজট নিরসনে রাস্তা প্রশস্ত করার লক্ষ্যে অনেকটা বাধ্য হয়েই জেলা প্রশাসকের পরামর্শক্রমে চাঁদপুর পৌর কর্তৃপক্ষ ইলিশ চত্বরের মূল কাঠামো ঠিক রেখে উত্তর-পূর্ব কর্নার ও পশ্চিম-দক্ষিণ কর্নারের এই দুদিকের বর্ধিত অংশ ভাঙ্গার উদ্যোগ নেয়। এতে করে চত্বরটির চারদিকে রাস্তা প্রশস্ত হবে এবং যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌর প্রশাসক মো. গোলাম জাকারিয়া (উপ-সচিব) বলেন, চাঁদপুরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক বহনকারী ইলিশ চত্বরের মূল কাঠামো ঠিক রেখে এর বর্ধিত অংশ ভেঙ্গেছি। যানজট নিরসন ও রাস্তা প্রশস্ত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পরামর্শক্রমে আমরা এই কাজ করি। এতে করে রাস্তা চতুর্দিকেই প্রশস্ত হচ্ছে। গাড়ি ঘোরাতে ও যানজট নিরসনে সুবিধা হবে। একদিকে উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা, অন্যদিকে সংস্কৃতির প্রতীকের সংরক্ষণ--এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বর্ধিত অংশ ভাঙ্গার পরে আমরা ইলিশ চত্বরের মূল কাঠামোটাকে বেষ্টনী করে আরো নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তুলবো। যা কিনা যুগের পর যুগ প্রতীক হিসেবে চাঁদপুরের ইলিশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংস্কৃতি বহন করবে।

প্রতিবেদক মিজানুর রহমান চাঁদপুরকে ইলিশের অভয়াশ্রম বলে আত্মতুষ্টি খুঁজেছেন। আসলে চাঁদপুর ইলিশের বাড়ি খেতাব পেয়ে মেঘনাকে ইলিশের অভয়াশ্রম বানাতে পেরেছে? মোটেও না। প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিল দু মাস জাটকা রক্ষা মৌসুমে এবং অক্টোবর-নভেম্বরে ২০ দিনের মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমে চাঁদপুরের মেঘনায় যখন অভয়াশ্রম ঘোষিত হয়, তখন কী চলে? চোর (অসৎ জেলে)-পুলিশ খেলা চলে। পারে না চোররূপী অসৎ জেলেরা ইলিশের বংশবিস্তার রোধে ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মেঘনাকে ছেঁকে ফেলে। জাতীয় মাছ ইলিশের প্রতি সে কী নির্মমতা! অভয়াশ্রম চলাকালে নির্বিচারে কিশোর ইলিশ জাটকা ও মা ইলিশ ধরে ফেলে ইলিশের প্রাচুর্যরোধের সকল তৎপরতা চালায়। এটা ‘ইলিশ চত্বরে’র ভাস্কর স্বপন আচার্য লক্ষ্য করেছেন। তিনি তাতে ব্যথিত হয়েছেন। তিনি তখন চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেছিলেন, আপনাদের ইলিশ চত্বর করে দিচ্ছি ‘ইলিশের ঊর্ধ্বমুখী গতি’র প্রতিচ্ছবি দিয়ে। কেননা, ইলিশের বংশবিস্তারকালেও মেঘনাসহ অন্য নদীগুলোতে যেভাবে নির্বিচারে ইলিশ নিধন হচ্ছে, তাতে কোনো একদিন খোদ চাঁদপুরের লোকজনও ইলিশ দেখবেন না, ক্ষুব্ধ অভিমানী ইলিশ নদী থেকে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে আকাশে হাওয়া হয়ে যাবে। তখন ইলিশ কেবল স্মৃতি হয়ে ছবিরূপে কিংবা ভাস্কর্য হয়ে কোনো জাদুঘরে স্থান পাবে কিংবা চাঁদপুরের ইলিশ চত্বরে থেকে যাবে। এই ম্যাসেজ আমি ইলিশ চত্বরে প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যদি গভীরভাবে হৃদয়ঙ্গম করেন, ইলিশ রক্ষায় সতর্ক ও সচেতন হন, তাহলে ভালো। অন্যথায় আপনাদের ইলিশের ভবিষ্যৎ কালো।

সে যা-ই হোক, চাঁদপুরের ইলিশ চত্বরের সীমানা সঙ্কোচন সত্ত্বেও এই চত্বরের ঊর্ধ্বমুখী ইলিশ ভাস্কর্য অন্তত টিকে থাকবে পৌরসভার সমকালীন চাহিদা পূরণের উদ্যোগের মধ্যেই। আমরা চাই, ইলিশ চত্বরে ও জাদুঘরেই কেবল ইলিশ না থাকুক, নাগরিক সচেতনতায় নদীতেও ইলিশের প্রাচুর্য থাকুক। ইলিশ সহজলভ্য ও সুলভ হোক-এটাই আমাদের নিরন্তর প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়