প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
এই আকুতি কি সত্যিকারের চিত্র?

গত ক’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিদ্যুতের অভাব গোছানোর জন্যে গ্রামীণ জনপদের এক ব্যক্তির বিদ্যুতের খুঁটি ধরে জানানো আকুতির ভিডিও দলমত নির্বিশেষে অনেক মানুষের হৃদয় যে ছুঁয়েছে, সেটা ভিডিওটি ভাইরাল হবার মধ্য দিয়ে অনুমান করা যাচ্ছে। ভিডিওতে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় উচ্চারিত কথামালা হচ্ছে : ভাইরে! আমরা অসহায় হইয়া সাধারণ পাবলিক তোর কাছে আইছি। তোর বইরে (পায়ে) ধরছি ভাই। তোরে যেগুনে হালে (পালন করে), হেগুনের কাছে তো যাইতে হারতামনা (পারবো না), গেলে হয় মামলা খাইয়াম, নইলে মিটার কাডি (কেটে) দিবো রে ভাই। তোর দুইয়ান (দুটি) বইরে চাপি ধরছি রে ভাই। সিন্ডিকেট মারানির পুতেরা খাদ্যদ্রব্যডারে খাই হালাইছে ( খেয়ে ফেলেছে)। সর্বশেষ নিজের ঘরে নিজে একটু শান্তিতে ঘুম যাইতাম, হেডাও তুই কাড়ি লই যাইতাছস্ (কেড়ে নিয়ে যাচ্ছস্)রে ভাই। যন (যখন) মাগরিবের নামাজের সময় ইফতার করতে বই (বসি), তন (তখন) তুই কারেন্টটা কাড়ি লই যাছ্গি; যন তারাবির নামাজ হড়তে খাড়াই, কারেন্টটা লই যাছ্গি, সেহেরি খাইতে উডি, তুই কারেন্টটা লই যাছ্গি। হারাদিন তো আছেরে ভাই। এরুম (এরকম) অত্যাচার শুরু কইরছস্ কিল্লাইরে ভাই। আমাগর উপর আর অত্যাচার করিছ্নারে ভাই। সাধারণ পাবলিক তোর বইরে ধরি রে ভাই। দুইয়ান বইরে ধরছি রে ভাই। কারেন্টটা ঠিকমত দেরে ভাই। নাইলে মইরা যাইয়াম। একটু ঘুম যাইয়াম.......
ভিডিওটিতে উচ্চারিত কথামালায় চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর সহ দেশের বিভিন্ন উপজেলার বিদ্যুৎ পরিস্থিতির চিত্র ফুটে উঠেছে দাবি করে অসংখ্য লোক তাদের ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করেছে। এই শেয়ারকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় সরকারবিরোধীই হবে--এটা ধরে নেয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ফেসবুক আইডি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এদের মধ্যে সরকারবিরোধী যেমন আছে, সরকারদলীয় এবং নির্দলীয়ও আছে।
চাঁদপুর শহরসহ যেখানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)-এর সংযোগ রয়েছে, সেখানে ভিডিওতে উচ্চারিত কথামালার হুবহু সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ, ইফতার, তারাবীহ ও সাহরীর সময় বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে যায়। সত্যি বলতে কি, ২৪ ঘণ্টায় অগণিত বার লোডশেডিং হয়। দিনে লোডশেডিং বেশি হলেও রাতে কম হয়। ভিডিওতে উচ্চারিত কথামালায় ফুটে ওঠা বিদ্যুৎ পরিস্থিতির চিত্র যদি হুবহু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকাসহ বিউবো'র আওতাধীন কোনো এলাকায় সত্যিকারের হয়ে থাকে, তাহলে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। ঠিকমত খেতে না পারলেও বৈদ্যুতিক পাখার নিচে সাধারণ মানুষের ঘুমানোর আকুতি প্রকাশ করাটা খ্বুই যৌক্তিক। এতে সাড়া দেয়াটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্যে আবশ্যক। অন্যথায় আকুতি পরিণত হবে ক্ষোভে। যার দুর্দমনীয় রূপে মামলা খাওয়া ও মিটার সংযোগ কেটে দেয়ার ভয় উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। অতএব, বিদ্যুৎ সরবরাহের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আগেভাগে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতে মেগা প্রকল্পসহ সরকারের সব ধরনের প্রকল্পের কথা বেশি না বলে দেশের বিদ্যুৎ সঙ্কট কবলিত এলাকাগুলোর পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র অনুধাবনপূর্বক সঙ্কট নিরসনের গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে মনোযোগী হওয়া দরকার। এটা অতি আবশ্যক বলে আমরা মনে করি।