প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
দিবসে নয় জীবনে স্বাধীনতা প্রতিফলিত হোক

স্বাধীনতার সুখ বাবুইয়ের মতো করে অনুধাবন কেউ করেনি জীবনে। অপরিমেয় বিত্তে থেকেও কেউ কেউ সুখী নয়। অগণিত সুবিধা পেয়েও কেবল স্বাধীনতার অভাবে কারো কারো সুখ সোনার হরিণ হয়ে গেছে। বাঙালিও হাজার বছর ধরে পরাধীন ছিলো জন্মলগ্ন থেকে। তার সম্পদ ছিলো, সমৃদ্ধি ছিলো, কিন্তু ছিলো না স্বাধীনতা। স্বাধীনতা ছিলো না বলেই বর্গীরা এসে যখন তখন লুট করে নিয়ে গেছে সম্পদ। কালে কালে অনেকেরই প্রয়াস ছিলো, আত্মাহুতি ছিলো স্বাধীনতা অর্জনে। কিন্তু সে প্রয়াস সম্মিলিত ছিলো না। বরং গণবিদ্রোহ ছিলো না বলেই যে বা যারা খণ্ডিতভাবে স্বাধীনতা চেয়েছিলো, তারা সবাই দমিত হয়েছে, বিজিত হয়েছে। কিন্তু বার বার সংগ্রামে অভ্যস্ত বাঙালি শোষিত হয়ে শোষকের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। কিন্তু তাতে সাফল্য আসেনি কেবল সাহসী ও যথার্থ নেতৃত্বের অভাবেই।
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে অগ্নিঝরা মার্চে কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্ব পেয়ে বাঙালি ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ার অগ্নি-শপথে। তারই ফলস্বরূপ মার্চ হয়ে গেছে বাঙালির স্বাধীনতার স্তম্ভ। এক থেকে ছয় মার্চের অসহযোগ আন্দোলন আর সাত মার্চের বিশ্বজয়ী ভাষণে মার্চ বাঙালির স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। পঁচিশে মার্চ কালরাত যদিও বাঙালিকে গণহত্যার রক্তগঙ্গায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, তবুও জাতির পিতার ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণাটুকু যারা শুনেছেন তারা বুঝেছেন, এ কেবল ডাক নয় বরং নিজ দায়িত্ব পালনের মহানাদ। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃষক-মজুর-শ্রমিক-ছাত্র সবাই নেমে এসেছে রাজপথে, একটি স্বাধীন দেশ না নিয়ে কেউ ঘরে ফিরবে না। তাদের সেদিনের সেই শপথ বাংলার মাটিকে রক্তগাঙের বিনিময়ে পুতঃ পবিত্র করে তুলেছে। একজন বঙ্গবন্ধু যদি সেদিন না থাকতেন, একজন শেখ মুজিবুর রহমান যদি সেদিন না থাকতেন, তবে স্বাধীনতা হয়ে উঠতো মায়া-মরীচিকা। আশাকে স্বাধীনতায় রূপান্তরিত করে বাঙালি ছাব্বিশে মার্চ রক্ত আখরে লিখেছে নিজেদের ইতিহাস। সেই দুর্মর বাঙালির হাতেই শোষণের কালো থাবা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বাঙালি পেয়েছে নিজেদের অস্তিত্বের শক্তিমান স্বীকৃতি।
কিন্তু যে স্বাধীনতা বাঙালি পেয়েছে নয়মাসের গর্ভে, সে স্বাধীনতা আজ বিভেদ আর বিবিধ বৈষয়িক ব্যবধানের বদৌলতে হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাত্তরের রক্তগঙ্গা আজ হিংসা আর ঈর্ষার পচা নর্দমায় পতিত হয়েছে। স্বাধীনতা আজ চাওয়া-পাওয়ার স্বার্থে এসে বন্দি হয়ে গেছে। এ ঘেরাটোপ থেকে আজ আমাদের মুক্তি চাই। আমাদের স্বনির্মিত খোয়াড় হতে আজ আমাদের মুক্তি পেতেই হবে। যে স্বাধীনতা আনতে প্রাণ দিয়েছিলো তিরিশ লাখ, নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের আগল ভেঙে সে স্বাধীনতাকে আজ আবার আমাদের মুক্ত করতেই হবে। ভালো করার স্বাধীনতা, ভালো ভাবার স্বাধীনতা এবং ভালোকে আঁকড়ে ধরার স্বাধীনতা আজ আমাদের চাই। তাহলেই স্বাধীনতার প্রকৃত সুখে আমরা সুখী হতে পারবো, সুস্থির হতে পারবো। চিন্তা ও সংস্কৃতির মুক্তি না ঘটাতে পারলে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা অর্থবহ হবে না। আমাদের দিবস উদযাপনের স্বাধীনতা নয় বরং স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার স্বাধীনতা চাই। স্বাধীনতাকে দিবসে আটকে না রেখে জনগণের জীবনে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। এই অঙ্গীকারই হোক এবারের স্বাধীনতা দিবসে জাতির জন্যে আমাদের অর্ঘ্য। জয় বাংলা।