রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৩, ০০:০০

এটা যেনো শিক্ষকদের অসহায়ত্বের বিকট রূপ!

এটা যেনো শিক্ষকদের অসহায়ত্বের বিকট রূপ!
অনলাইন ডেস্ক

আমাদের দেশে অভিভাবকরা আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজের সন্তান বা পোষ্যকে ভর্তি করাতে গিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান বা শিক্ষকগণকে বলতেন, ওকে আপনাদের কাছে সোপর্দ করে গেলাম। ঠিকমত লেখাপড়া না করলে কিংবা কোনো অপরাধ করলে তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেবেন। কোনো কোনো অভিভাবক শাস্তির সর্বোচ্চ মাত্রা বোঝাতে গিয়ে বলতেন, মাংস আপনাদের, হাড় আমার। এর অর্থ ছিলো এমন, পিটাতে পিটাতে প্রয়োজনে শরীরের মাংস খসিয়ে ফেলবেন, কিন্তু জানে মারবেন না। এমন কথায় কিছু অতি উৎসাহী শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের এতোটা পেটাতেন যে, শিক্ষার্থীদের কিছু মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো, গুরুতর আহত হতে থাকলো অনেকে। তদন্তে অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়াসহ আপত্তিকর কিছু কারণ একের পর বেরুতে লাগলো, যাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত উপর্যুপরি সংবাদের প্রেক্ষিতে সচেতন অভিভাবক সমাজের চাপে সরকার বাধ্য হলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে।

ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী যখন শিক্ষা সচিব, তখন (২১-৪-২০১১ তারিখে) একটি পরিপত্র জারি করেন। এর শিরোনাম দেন ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা সংক্রান্ত নীতিমালা ২০১১’। এতে এমন শাস্তি প্রদানকারী শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্চারীরা দেশে প্রচলিত কোন্ আইনে সুনির্দিষ্ট শাস্তির মুখোমুখি হবেন কিংবা আইনি ঝামেলায় পড়বেন সেটা পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে। উপরোল্লিখিত পরিপত্রে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ অভিভাবক নিজে আইন হাতে তুলে নিতে পারার ক্ষমতা সংক্রান্ত কোনো কিছু লিখা হয়নি। তারপরও কিছু অভিভাবক শিক্ষকদের ওপর চড়াও হবার অভিযোগ একের পর পাওয়া যাচ্ছে। এমন অভিযোগ এতোদিন বাতাসে ভেসে বেড়ালেও বা মৌখিক শোনা গেলেও এখন লিখিতভাবে পাওয়া যাচ্ছে, এমনকি সে অভিযোগের আলোকে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হচ্ছে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে এমন একটি দুঃখজনক সংবাদ।

‘ফরিদগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষককে পেটালেন অভিভাবক’ শিরোনামের সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, ফরিদগঞ্জে মাদ্রাসায় ঢুকে এক শিক্ষককে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ১৬ মে মঙ্গলবার সকালে বোয়ালিয়া নুরানী হাফেজিয়া মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টির বিচার প্রার্থনা করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রাও। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকালে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছিলেন ওই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আলী আজগর। এ সময় অভিযুক্ত অভিভাবক কাজী জসিম উদ্দিন ও কাজী আল-আমিন মাদ্রাসার ক্লাসরুমে ঢুকে শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষককে মারধর করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ও ভাংচুর করার হুমকি প্রদান করেন। জানা গেছে, জসিম উদ্দিন ওই মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক। মাদ্রাসার নিয়মণ্ডশৃঙ্খলা না মেনে তার ছেলে ছুটি কাটিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীকে হুজুর শাসন করার কারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষককে মারধর করেন। মারধরের শিকার শিক্ষক আলী আজগর জানান, আমি ক্লাসে পড়ানোর সময় হঠাৎ তিনি এসে আমাকে মারধর করা শুরু করেন। মাদ্রাসার কোষাধ্যক্ষ মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, হুজুর দীর্ঘদিন আমাদের মাদ্রাসায় চাকুরি করে আসছেন। কেনো তিনি মারধরের শিকার হলেন? আমরা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিচার দাবি করছি। বর্তমানে এ ঘটনায় এলাকা জুড়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে অভিযুক্ত কাজী জসিম উদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমার ছেলে এই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। জরুরি কাজে আমার ছেলে ঢাকা গিয়েছিলো। আসার পর শিক্ষক আমার ছেলেকে মেরেছে। তাই আমি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মেরেছি। ছুটির জন্যে আবেদন করেছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন কোনো বিষয় আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবদুল মান্নান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

এখন দেখার অপেক্ষা, ফরিদগঞ্জ থানা যে কোনো চাপের ঊর্ধ্বে থেকে অভিযুক্ত অভিভাবকের বিরুদ্ধে ত্বরিৎ কী ব্যবস্থা নেয়। সেটি দেখার আগে আমাদের এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, ঘটনাটি দ্বারা শুধু ফরিদগঞ্জের একটি মাদ্রাসার শিক্ষকদের অসহায়ত্বই প্রকাশ পায়নি, কিছু অভিভাবকের কাছে দেশের পুরো শিক্ষক সমাজের অসহায়ত্বই বস্তুত প্রকাশ পেয়েছে। এর প্রতিকারে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা সংক্রান্ত নীতিমালা ২০১১’ বাতিলের দাবি কেউ করুক সেটা আমরা চাই না। তবে এই নীতিমালার প্রেক্ষিতে অবৈধ ক্ষমতা প্রদর্শনকারী অভিভাবকদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা যায় কিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সেটা ভেবে দেখার সময় যে এসে গেছে সেটা বলতে চাই। এ ব্যাপারে শিক্ষকদের সংগঠনগুলো সোচ্চার হওয়া এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে দাবি উত্থাপন করার উপযুক্ত প্রেক্ষাপট যে তৈরি হয়ে গেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়