প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

‘ঝড়ের কবলে চরে আটকা পড়া ২২ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করলো কোস্ট গার্ড'। এটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম। এমন শিরোনামে সংবাদের ভেতরে ঢুকে গতানুগতিক কিছু পাওয়া যাবে--এমনটি পাঠকের সাধারণ প্রত্যাশা। কিন্তু এ সংবাদের ভেতরে পাওয়া গেছে অসাধারণ কিছু। আর সেটি হচ্ছে : ৯৯৯-এ কল পেয়ে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর লঞ্চঘাটের বিপরীতে মেঘনা নদীর পশ্চিমে বাহেরচরে ভ্রমণে গিয়ে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতের সময় আটকা পড়া ২২ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাত ১০টায় কোস্টগার্ড ঢাকা জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুর রহমান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ৯৯৯-এ কল পেয়ে আনুমানিক রাত ৮টার দিকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ঢাকা জোন অধীনস্থ বিসিজি আউটপোস্ট মোহনপুর কর্তৃক কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মোঃ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে মেঘনা নদীর বাহেরচর থেকে ২২ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। উদ্ধারকৃত শিক্ষার্থীরা বিকেলে মেঘনা নদীর পশ্চিমে বাহেরচর পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে গিয়ে সন্ধ্যায় বৈরী আবহাওয়ার কারণে আটকা পড়েন। পরবর্তীতে ৯৯৯-এ খবর পেয়ে কোস্ট গার্ডের একটি উদ্ধারকারী দল দ্রুততার সাথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে নিরাপদে উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে তাদের সকলকে মেঘনার পূর্ব পাড়ে এনে পরিবারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
আমরা এতোদিন জানতাম, ৯৯৯ নম্বরটি হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পুলিশি সেবা পেতে জাতীয় হেল্প ডেস্কের নম্বর। এই নম্বরে ফোন করলে পুলিশের সেবা পাওয়া যাবে নিশ্চিত--এটি সাধারণ্যে এখন বদ্ধমূল ধারণায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু সেই সেবা কোস্ট গার্ডেও বিস্তৃত হয়েছে জানতে পেরে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে। নিশ্চয় ইতঃমধ্যে এই সেবার পরিধি র্যাব সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায়ও বিস্তৃত হয়েছে কিংবা হবে এমন অবস্থায় আছে--এমনটি ধারণা করা বাহুল্য নয় বলে আমরা মনে করি।
মতলব উত্তরের বাহের চরে ২২জন পর্যটক ঝড় কবলিত হয়ে বিপন্ন অবস্থা আন্দাজ করে ৯৯৯-এ কল করেছে। তখন এই কল গ্রহণকারী বলতে পারতেন, মেঘনার মতো বিশাল নৌপথ পাড়ি দেয়ার সামর্থ্য পুলিশের নেই। অতএব, দুঃখিত। অথচ কল গ্রহণকারী পুলিশের সামর্থ্য বহির্ভূত জায়গায় কীভাবে অন্য সংস্থার সাহায্য নেয়া যায় সে বিষয়টি সেবা প্রত্যাশীদের তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করে অপেক্ষা করতে বলেছেন। দ্রুতই সে অপেক্ষার অবসান ঘটে কোস্ট গার্ডের উদ্ধার দলের উপস্থিতি দেখে। এটা নিঃসন্দেহে ৯৯৯ থেকে পাওয়া আশাব্যঞ্জক সেবা। এই সেবাটি জাতীয় হেল্প ডেস্ককে নূতন মাত্রায় ঋদ্ধ করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস।
একটু উল্লেখ করা দরকার যে, বিশ্বে সর্বপ্রথম ১৯৩৭ সালের ৩০ জুন ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে জাতীয় জরুরি নম্বর চালু হয়। এর সুফল দেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেটি চালু হয়। আমাদের দেশে সেটি চালু হতে ৮০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ‘৯৯৯’ নম্বরটি জাতীয় হেল্প ডেস্কের নম্বর হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। উদ্বোধনকালে তাঁর সাথে ছিলেন স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, চাঁদপুরের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক এমকেএম শহীদুল হক। উদ্বোধনের প্রাক্কালে জানানো হয়, ২০১৬ সালের ২১ অক্টোবর পরীক্ষামূলকভাবে ৯৯৯ নম্বরটি চালু হয়। তারপর ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই নম্বরে দেশের নাগরিকেরা তেত্রিশ লাখ কল করেন। সে কল অনুযায়ী ৬৪ শতাংশ পুলিশি সেবা, ৩১ শতাংশ ফায়ার সার্ভিস সেবা ও ৪ শতাংশ অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিশ্চিত করা হয়। এমন সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে নম্বরটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
রাজধানীর আঃ গনি সড়কে পুলিশের কন্ট্রোল এন্ড কমান্ড সেন্টারে চালুকৃত নম্বরটি টোল ফ্রি। মোবাইল ফোন ও টেলিফোন উভয় মাধ্যমে ৯৯৯ নম্বরে কল করা যায়। এতে গ্রাহকের কোনো রকম খরচ হয় না। নাগরিকরা কোথাও কোনো অপরাধ সংঘটিত হতে দেখলে, কারো প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দিলে, কোনো হতাহতের ঘটনা চোখে পড়লে, যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে, জরুরিভাবে অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেই হলো, সম্ভাব্য সহযোগিতা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত। ফলে এই নম্বরটি এখন দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষের নিকট আস্থার প্রতীক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। এটা শুধু আস্থা নয়, রীতিমত আমাদের গর্বের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, এই নম্বরটির কারণে ক্ষমতাবান অনেককে এখন পুরোপুরি ম্যানেজ করা যায় না। নিঃসন্দেহে দেশে বিদ্যমান অনেক নেতিবাচকতার মধ্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক দিক।