সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

এরা কেমন স্ত্রী-সন্তান?

এরা কেমন স্ত্রী-সন্তান?
অনলাইন ডেস্ক

গত মঙ্গলবার চাঁদপুর কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় 'নিজের স্ত্রী-সন্তানের কাছেই অচেনা বৃদ্ধ রশিদ হাওলাদার' শিরোনামের বিশেষ প্রতিবেদনটি প্রায় সকল পাঠকের নজর কেড়েছে। এ প্রতিবেদনে চাঁদপুর কণ্ঠের ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধের অস্বাভাবিক জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন।

তিনি লিখেছেন, দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটানোর পর নিজের চাকুরি শেষে একমাত্র ছেলেকে দিয়ে চলে আসেন দেশে। এরপর দেশেই শুরু করেন গরুর ব্যবসা।বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে গরু এনে তার নিজের উপজেলায় যৌথ অংশীদারদের মাধ্যমে বিক্রি করতেন। এভাবে দীর্ঘদিন ব্যবসা করার পর তিনি ফাঁদে পড়ে ভারতের মাটিতে এক যুগ জেল খাটেন। জেল থেকে বের হয়ে বাংলাদেশে নিজের বাড়িতে ফিরে আসলে গত এক বছর ধরে তিনি নিজের স্ত্রী-সন্তানের কাছে অবহেলার পাত্র হিসেবে চিহ্নিত। সম্পত্তির মোহে স্ত্রী-সন্তানরা এখন তাকেই নিজ ঘরে থাকতে দিচ্ছেন না। দিচ্ছেন না চিকিৎসা খরচ, উল্টো হত্যা করে সম্পত্তি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত তারা। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বৃদ্ধ আবদুর রশিদ হাওলাদার (৭৫)-এর।

আবদুর রশিদ হাওলাদার জানান, আমি গরুর ব্যবসা করতাম, ভারত থেকে গরু এনে দিতাম আমার ব্যবসায়িক পার্টনারদেরকে। ভারত থেকে ৯ লাখ টাকার গরু দেশে পৌঁছলে আমার স্ত্রী-সন্তানরা সে টাকা আত্মসাৎ করে। আমাকে ওপারে আটক করে রাখে। এক পর্যায়ে আইনী জটিলতায় পড়ে ১২ বছর জেল ভোগ করি ভারতে। আমি দেশে এসেছি এক বছর হলো। দেশে ফিরে আসার পর থেকে আমার স্ত্রী নাজমা বেগম কাঞ্চন এবং একমাত্র ছেলে শাহআলম এখন আমায় বাড়ি-ঘরে উঠতে দেয় না। আমার ঘর-দরজা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টায় বার বার আক্রমণ করছে। আমার নিজের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তারা সকল চেষ্টা করছে। আমার ছেলের ঢাকায় বাড়ি এবং গ্রামে বাড়ি থাকলেও আমাকে থাকতে হচ্ছে ভাঙ্গাচুরা একচালা টিনের ঘরে। তিনি জানান, আমি এখন আমার পরিবারের কাছে বোঝা। নিজের স্ত্রী-সন্তানের কাছে আমি অচেনা রশিদ হাওলাদার। অথচ প্রবাসের চাকুরি আমার ছেলেকে দিয়ে এসেছিলাম বলেই আজ সে বড়লোক। ঢাকায় বাড়ির মালিক, গ্রামে বাড়ির মালিক, ব্যবসা করে। কিন্তু আমি পিতা হয়েও পথে পথে ঘুরছি। বয়স হয়েছে, বয়সের ভারে অনেক সময় তাদের সাথে হয়তোবা আচরণ একটু খারাপ করতে পারি। সেজন্যে আমাকে এভাবে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে থাকতে হবে, খেতে হবে-- এই কোন্ দুনিয়ায় রয়েছি! রশিদ হাওলাদারের স্ত্রী নাজমা বেগম জানান, তিনি আমাদের সাথে রূঢ় আচরণ করেন। তাই তার সাথে পরিবারের কারো সাথেই সম্পর্ক ভালো না। ছেলে শাহ আলম জানান, বাবা যা ইচ্ছা করুক। এই বাড়ি-ঘর আমার, তাকে (বাবাকে) আলাদা থাকার জায়গা দেয়া হয়েছে। তার বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদ হোসেন গাজী জানান, পিতা-পুত্রের দ্বন্দ্বের বিষয়ে মীমাংসা করতে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ কয়েকবার চেষ্টা করেছি। তারা কেউই কাউকে মানতে রাজি নয়। সর্বশেষ আমাদের স্থানীয় চেয়ারম্যান উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেখানেও কোনো সফলতা আসেনি। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী পিতা হয়তো ভরণ-পোষণের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।

প্রবীর চক্রবর্তীর এ প্রতিবেদনটিতে পাঠকদের মধ্যে যারাই সংবেদনশীল, তারা প্রত্যেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, বৃদ্ধ আঃ রশিদ হাওলাদারের এ কেমন স্ত্রী-সন্তান! ভারত থেকে গরু এনে ব্যবসা করার দায়ে আঃ রশিদ আইনি মারপ্যাঁচে এক যুগ জেল খেটে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন। তিনি খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই সহ অন্যান্য জঘন্য অপরাধ নিশ্চয় করেন নি, যার জন্যে স্ত্রী-সন্তানের নাক-চুল কাটা যেতে পারে। তারপরও তার স্ত্রী-সন্তান তার প্রতি যে জঘন্য আচরণ করছেন, সেটা আইনের দৃষ্টিতে তো বটেই, মানবিক দৃষ্টিকোণে অত্যন্ত আপত্তিকর। আমরা এই বৃদ্ধের পাশে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দাঁড়াতে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়