প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে আবাসিক এলাকায় অব্যাহত চুরি প্রসঙ্গে

ফরিদগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম. কে. মানিক পাঠান শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠে একটি আবাসিক এলাকার অব্যাহত চুরি নিয়ে এমন সংবাদ পরিবেশন করেছেন, যেটি অনেক পাঠককে কৌতূহলী করেছে ও ভাবনার মধ্যে ফেলেছে। যেখানে ডাকাতি, খুন, ছিনতাইসহ অনেক কঠিন মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ কর্মকর্তারা সাফল্যে ভাস্বর, সেখানে একটি আবাসিক এলাকার অব্যাহত চুরির ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে তারা বছরের পর বছর কেনো ব্যর্থ সেটা কোনোভাবেই ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর মাথায় ঢুকছে না।
মানিক পাঠান তার সংবাদে লিখেছেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ বাজারের সাথে একটি আবাসিক এলাকায় অব্যাহত চুরির ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ ও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ধারাবাহিক চুরির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ওই এলাকা থেকে একটি নতুন মোটরসাইকেল চুরি হয়। চুরির এ ঘটনাটি ঘটেছে প্রবাসী দুলাল মিজির পাঁচতলা ভবনের নিচতলা থেকে। ওই এলাকায় ১০-১২ বছরে অন্তত ৩০টি চুরি সংঘটিত হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা চুরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী। এলাকাটি ফরিদগঞ্জ থানা (পুলিশ স্টেশন) সংলগ্ন পশ্চিম পাশে চিটু বেপারীর মিল এলাকায়। চুরির শিকারের মধ্যে পুলিশের এসআই, এএসআই, কনস্টেবলও রয়েছেন।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ফরিদগঞ্জ (দঃ) ইউনিয়নের পাঁয়া গ্রামের শ্রী কৃষ্ণের ছেলে নারায়ণ চন্দ্র দাস (৩১) একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। অপর ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত উজ্জ্বল ভাড়া থাকেন ঘটনাস্থল প্রবাসী দুলাল মিজির পাঁচতলা ভবনে। নারায়ণ চন্দ্র দাস ‘ডিসকভার’ মোটারসাইকেল চালিয়ে তার বাসায় যান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা প্রায় ৬টায়। মোটরসাইকেলটি ভবনের নিচতলার পার্কিংয়ে রেখে প্রায় দুই ঘণ্টা পর নিচে নেমে দেখেন তার মোটরসাইকেল নেই। খবর পেয়ে বাড়ির মালিকের ছেলে মাসুদ মিজি রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় উপস্থিত হন। তিনি সিসি ক্যামেরা ঘেঁটে ফুটেজ বের করতে পারেননি। তিনি বলেন, তার মনিটরে সমস্যা আছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিজ্ঞ লোক নিয়ে ঠিক করে দেখা হবে। তবে পাশের বাড়ির সিসি ক্যামেরায় একজনকে মোটরসাইকেল চালিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। যে ব্যক্তি নিয়ে যাচ্ছেন তার গায়ে কমলা রংয়ের টি-শার্ট পরা ছিলো। মুখ দেখা যায়নি। এ ঘটনায় নারায়ণ চন্দ্র দাস ওইদিন রাতে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। চুরির ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ওই এলাকায় এতো চুরি কারা করছে। তারা দাবি করেছেন, গত প্রায় ১২ বছরে ওই এলাকায় কমপক্ষে ৩০টি চুরি সংঘটিত হয়েছে। কোনো একটি ঘটনায়ও কেউ আটক ও শনাক্ত হয়নি। শুধু তাই নয়, অন্যান্য অপরাধও হয়েছে। অপরাধী অপ্রতিরোধ্য হয়ে গেছে। চুরির ঘটনার ২/৩টি সন্ধ্যারাতে হলেও বাকি সব হয়েছে দিনের বেলায়। এসব বাড়ির বাসিন্দাগণ বাসা থেকে বের হয়ে সন্তান নিয়ে স্কুলে, বাজারে বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়ার পরই দরজার তালা ভেঙ্গে চুরি হয়েছে। এলাকাটি ফরিদগঞ্জ থানার পশ্চিম পাশের বাউন্ডারির সাথে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গত প্রায় ১০/১২ বছরে চুরির শিকার লোকজনের মধ্যে এসআই, এএসআই, কনস্টেবলসহ অন্তত ১০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। সর্বশেষ দরজার তালা ভেঙ্গে চুরির শিকার হয়েছেন এসআই আবদুল কুদ্দুছ। অধিকাংশ ঘটনায় থানায় অভিযোগ বা মামলা হয়নি। পুলিশ তৎপর হয়নি, ফলে অপরাধী অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসী আরও জানিয়েছেন, ওই এলাকায় বাসায় নারী রেখে দেহব্যবসা করানো হয়েছে। চলেছে মদ, জুয়ার আসর। তারা দাবি করেছেন, এলাকায় ও সংশ্লিষ্ট লিংকে গোপন তদন্ত করলে ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও গোয়েন্দা বাহিনী। তারা বলেছেন, অপরাধীকে আইনের আওতায় নিতে ও মূলোৎপাটন করতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনী প্রশ্নের মুখে পড়বে। এই এলাকার বাড়ির মালিক সাঈদ জানিয়েছেন, আমার এবং আমার ভাইয়ের বাসায় ও এলাকায় অনেক কলের উপরের অংশ চুরি হয়েছে। শুধু একজন প্রবাসীর ভাড়া বাসা থেকে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ আড়াই লাখ টাকা নিয়েছে। অপর একজন প্রবাসীর বাসা থেকে প্রায় ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়েছে। প্রায় ১০ বছর আগে ওই এলাকা থেকে এসআই নূর-এর নতুন মোটরসাইকেল চুরি হয়ে গেছে।
নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, মোটরসাইকেলটি আমার রুটি-রুজির বাহন ছিলো। মাত্র ১৫/১৬ দিন আগে কেনা মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। চুরির ঘটনায় আমি বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি আশা করছি, পুলিশ বাহিনী চোর শনাক্ত করবে ও মোটরসাইকেলটির ফেরত পাবো। বাড়ির মালিক প্রবাসী দুলাল বেপারীর ছেলে মাসুদ বলেছেন, এ এলাকার মতো ফরিদগঞ্জ বাজারের আশপাশে অন্যসব এলাকায় ১০ ভাগের এক ভাগ চুরিও হয়েছে কিনা সন্দেহ আছে। এই এলাকায় এতো চুরির কারণ কী। শুনেছি বাইরে থেকে চোর এলেও এলাকার সহযোগী লাগে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কে সেই সহযোগী? অন্য এক বড়ির মালিক বলেছেন, নিশ্চয় সর্ষের ভেতর ভূত আছে।
আমরা ফরিদগঞ্জের এই আবাসিক এলাকায় অব্যাহত চুরি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ না করে পারছি না। সিসিটিভি ক্যামেরা সঠিকভাবে চালু থাকলে ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চোর ধরা কঠিন কাজ নয়। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক পাহারাদার নিয়োগ কিংবা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কার্যক্রম জোরদার করে নৈশকালীন টহল সদস্য নিয়োগেও চুরি রোধ করা সম্ভব। কথা হলো, এই আবাসিক এলাকার অব্যাহত চুরির ঘটনাসমূহ উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং নেতৃবৃন্দ অবহিত কিনা কিংবা তাদেরকে কেউ অবহিত করেছে কিনা। ফরিদগঞ্জের কমিউনিটি পুলিশিং নিতান্তই কমিটিসর্বস্ব না তৎপরতাঋদ্ধ-সেটাও জানার কৌতূহল আমাদের রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটি ফরিদগঞ্জের ওই আবাসিক এলাকার চুরির বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশকে সহযোগিতা করলে অবশ্যই রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হবে এবং চোর চক্রের কেউ না কেউ ধরা পড়বে। এমনও হতে পারে, চোরের বসবাস ফরিদগঞ্জের ওই আবাসিক এলাকাতেই।