সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

রূপসার জমিদারদের মরণোত্তর মূল্যায়ন কি করা যায় না?
অনলাইন ডেস্ক

‘চাঁদপুর পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ এবং ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে চাঁদপুর জেলা সংক্রান্ত প্রামাণ্য যে দুটি গ্রন্থ রয়েছে, তাতে যদি কোনো ঐতিহ্যের বিবরণ দিতে গিয়ে কার্পণ্য করা হয়ে থাকে, তাহলে সেটা রূপসা জমিদার বাড়ি নিয়েই করা হয়েছে। এ বাড়ি নিয়ে দুটি গ্রন্থের বিবরণ একই। সেটি হচ্ছে : ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫ নং রূপসা উত্তর ইউনিয়নে এ দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। এটিই চাঁদপুরের একমাত্র ব্যবহারযোগ্য জমিদার বাড়ি। অন্য সকল জমিদার বাড়িই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিনষ্ট হয়ে গেছে। মূলত খান বাহাদুর আবিদুর রেজা চৌধুরীর পূর্বপুরুষগণই এ বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। এখন এ বাড়িতে কেয়ারটেকার থাকে। আর জমিদারের বংশধরগণ ঢাকায় থাকেন।

ফরিদগঞ্জের আরো দুটি জমিদার বাড়ি সম্পর্কেও উপরে উল্লেখিত দুটি গ্রন্থে লিখা হয়েছে। একটি হচ্ছে লোহাগড়ের জমিদার ও আরেকটি হচ্ছে কড়ৈতলী জমিদার বাড়ি। কিন্তু এ দুটি বাড়ির জমিদারদের সম্পর্কে প্রজা-নিপীড়নের ইতিহাস বিধৃত আছে। আর এ দুটি বাড়ির ধ্বংসপ্রাপ্ত নিদর্শন ছাড়া ইতিবাচক কিছু সম্পর্কে জানা যায় না। অত্যাচারী জমিদাররা যে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়, সেটি জমিদার বাড়ি দুটির বংশধরদের পালিয়ে যাওয়া এবং নামনিশানা মুছে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে। এর বিপরীতে একই উপজেলার রূপসা জমিদার বাড়ির বংশধরদের সম্মানজনক অস্তিত্ব এবং প্রজাহিতৈষণার বাস্তব নমুনা দেখে শ্রদ্ধায় মন ভরে যাচ্ছে।

রূপসার জমিদাররা যে কতো বড় সমাজসেবক ছিলেন, সেটা তাদের বংশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব আবিদুর রেজা চৌধুরীর ‘খান বাহাদুর’ উপাধি প্রাপ্তির মধ্য দিয়েই তো প্রমাণিত। ‘খান বাহাদুর’ উপাধিটা হচ্ছে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক কোনো মুসলমানকে প্রদত্ত সর্বোচ্চ উপাধি। চরম রক্ষণশীল মানসিকতার ব্রিটিশরা যাকে তাকে এই উপাধি প্রদানের নজির নেই। তারা ভারত শাসনকালে সামাজিক ভালো কাজের মূল্যায়নস্বরূপ মুসলমানদের মধ্যে উপযুক্ত ব্যক্তিকে ‘খান বাহাদুর’ আর হিন্দুদের মধ্যে অনুরূপ ব্যক্তিকে ‘রায় বাহাদুর’ উপাধি দিতো। এ উপাধির চেয়ে দুটি সম্প্রদায়ের জন্যে নিম্ন পর্যায়ের উপাধি ছিলো যথাক্রমে ‘খান সাহেব’ ও ‘রায় সাহেব’। সেমতে বলা যায়, রূপসা জমিদার বাড়ির আবিদুর রেজা চৌধুরী পেয়েছিলেন ব্রিটিশ সরকারের সর্বোচ্চ উপাধি। যেমনটি পেয়েছিলেন ঢাকার জমিদার আহসানউল্লাহ, যাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয়সহ কতো কিছুই না আছে। আবিদুর রেজা চৌধুরীর নামে আছে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ এ আর (আবিদুর রেজা) মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কুমিল্লা জেলা পরিষদ কার্যালয়ে একটি মিলনায়তন। তিনি বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা পরিষদে একটানা ত্রিশ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর অবদান হচ্ছে চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়ক পাকাকরণের মাধ্যমে ট্রেনের বিকল্প হিসেবে বাস যোগাযোগ স্থাপন। যে সড়কে তার পূর্বে পায়ে হাঁটা ছাড়া কুমিল্লা ও চাঁদপুরের মধ্যে যাতায়াতের অন্য ব্যবস্থা ছিলো না।

এই খান বাহাদুর আবিদুর রেজা চৌধুরীর পূর্ব ও উত্তর পুরুষরা কতো বড়ো প্রজাহিতৈষী ছিলেন সেটি চাঁদপুর কণ্ঠে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়। সংবাদটি পরিবেশন করেছেন চাঁদপুর কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি মানিক পাঠান। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়ার মাহফিল’। সংবাদটিতে মানিক পাঠান লিখেছেন, বর্ণাঢ্য আয়োজনে মেঘনার পূর্ব পাড়ের জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠিত ফরিদগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতাদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে বিদ্যালয় মাঠে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের অন্যতম সদস্য সৈয়দ আহসান উল্যা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উক্ত বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য জমিদারদের বংশধর সৈয়দ মেহেদী হাসান চৌধুরী। তিনি তাঁর পূর্ব পুরুষ জমিদারদের গণমানুষের জন্যে সেবামূলক কার্যক্রমের বিশদ বিবরণ দিয়ে বলেছেন, ১শ’ ১০ বছর আগে এই রূপসা আহম্মদীয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি যাদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন মরহুম সৈয়দ আহম্মদ চৌধুরী, মরহুম সৈয়দ আবদুল লতিফ চৌধুরী ও মরহুম সৈয়দ আবদুল হাই চৌধুরী। তিনি আরো বলেছেন, আমাদের পূর্ব পুরুষ মেঘনা পাড়ের বিখ্যাত জমিদার পরিবার চাঁদপুর জেলা ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বর্তমান জায়গাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জমিদারদের ৩ হাজার ৫শ’ একর জায়গা জনহিতকর কাজে দান করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

চাঁদপুর শহরের বহুল পরিচিত চৌধুরী ঘাট ও চৌধুরী মসজিদ রূপসার জমিদারদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। আরো কতো কিছু যে তারা প্রতিষ্ঠা করেছেন কিংবা তাদের দানকৃত জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তার বিবরণ অনেক দীর্ঘ। রক্ষণশীল ব্রিটিশ সরকার রূপসার জমিদারদের মূল্যায়ন করতে তাঁদের যোগ্য প্রতিনিধি কিংবদন্তিতুল্য সমাজসেবক আবিদুর রেজা চৌধুরীকে যদি ‘খান বাহাদুর’ নামক সর্বোচ্চ উপাধি দিতে পারে, তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রগতিশীল সরকার ইচ্ছা করলে আবিদুর রেজা চৌধুরীকে নয়, বৃহত্তর কুমিল্লার গর্ব রূপসার জমিদারদের কোনো না কোনোভাবে কি মূল্যায়ন করতে পারে না---এমন প্রশ্ন করাটা কারো জন্যে বাহুল্য হতে পারে বলে মনে করি না, বরং সংগত ও যৌক্তিক বলেই মনে করছি। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখার আন্তরিক অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়