প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

আমাদের দেশে ক্রীড়া, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজসেবাসহ যে কোনো ক্ষেত্রের বড় আয়োজনে বড় অতিথি না হলে চলে না। বড় অতিথি না এনে বড় আয়োজন উদ্বোধন ও সমাপন না করলে তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় কিংবা বড় আয়োজন বড় বাধায় ভেস্তেও যায়। অবস্থা এমন হয় কখনও, বড় অতিথির পেছনে ঘুরতে গিয়ে বড় আয়োজনের তারিখ বারবার পরিবর্তন করতে হয়। আবার বড় অতিথির আগমন-অপেক্ষায় দিনব্যাপী আয়োজনের বড় সময় ব্যয় হয়ে যায়। এতে আয়োজনের স্বাভাবিক সমাপ্তি হয় না। অস্বাভাবিক সমালোচনার মুখে পড়ে আয়োজককে নিরুৎসাহ বোধ করতে হয়। এমন কঠিন বাস্তবতার মধ্যেই সম্প্রতি মতলব উত্তরে একটি বড় আয়োজন সাদামাটা উদ্বোধন ও সমাপ্তিতে অনেকের নজর কেড়েছে। সেটি ছিল আমির হোসেন মিয়াজী মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিনামূল্যে দশ সহস্রাধিক রোগীকে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ প্রদান।
চাঁদপুর কণ্ঠের মতলব উত্তর ব্যুরো ইনচার্জ মাহবুব আলম লাভলু জানিয়েছেন, অমর ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মতলব উত্তরে নিশ্চিন্তপুর আমির হোসেন মিয়াজী মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। সকালে নিশ্চিন্তপুর গ্রামে মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করা হয়। ক্যাম্পে ১১৫ জন গুণী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেবা দিয়েছেন এবং প্রায় ১০ সহস্রাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ গ্রহণ করেন। বিনামূল্যে এই চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম আয়োজন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও আমির হোসেন মিয়াজী মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডাঃ শামীম আহমেদ। ক্যাম্প উদ্বোধন করেন নিশ্চিন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মোঃ মোশারফ হোসেন ও নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মোঃ মোজাফফর হোসেন। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হাজেরা বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। শহরে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। এই ধরনের মেডিকেল ক্যাম্প আমাদের মতো অসহায় মানুষের খুব উপকারে আসে। আগামী দিনগুলোতেও যেন এমন চিকিৎসা সেবার আয়োজন করা হয়। নিশ্চিন্তপুর কলেজের প্রভাষক আল-আমিন পারভেজ বলেন, গ্রামের অবহেলিত মানুষের চিকিৎসা সেবা দেয়ার এই মহান উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি মেডিকেল ক্যাম্পের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা একান্ত জরুরি।
গ্রামের অসহায় মানুষের মধ্যে ওষুধ বিতরণের জন্যে বিশিষ্ট চিকিৎসক, সমাজের বিত্তবান মানুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজক ডাঃ শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, এভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে পারলে এলাকার অনেক মানুষ উপকৃত হবে। তিনি আরো বলেন, গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিটত করতে আমার বাবার নামে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
দশ সহস্রাধিক লোককে চিকিৎসাসেবা দিতে একটি গ্রামীণ এলাকায় ১১৫ জন চিকিৎসকের আগমন চাট্টিখানা কথা নয়। এতো চিকিৎসককে এক জায়গায় জড় করতে আয়োজকদের যে কতোটা অক্লান্ত শ্রমণ্ডঘামণ্ডমেধা-অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে, সেটা ভাবলেও যে কাউকে কম-বেশি বিস্ময় প্রকাশ করতেই হয়। তারচে’ বেশি বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে, আয়োজকরা এতো বিশাল আয়োজনে স্থানীয় এমপি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কিংবা বড় রাজনৈতিক নেতাকে উদ্বোধন ও সমাপনে আমন্ত্রণ না জানিয়ে স্থানীয় দুজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে দিয়ে উদ্বোধনের কাজটা সম্পন্ন করেছেন। যেটা সাধারণ হলেও যে অসাধারণ হয়েছে, সেটা যারা বোঝার তারা ঠিকই বুঝেছেন। মূল কাজ সুসম্পন্নে যে সকল আয়োজক মনোযোগী থাকেন, তারা স্বচ্ছতায় সদুদ্দেশ্যে সাহসিকতারও পরিচয় দেন। এমন সাহসিকতা প্রদর্শনকে অনেকে ঝুঁকি মনে করে। বস্তুত এটা ঝুঁকি নয়, গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়াস। এই প্রয়াসকে অবশ্যই সচেতন মানুষ মাত্রকেই সাধুবাদ জানানো উচিত।