সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

অনুকরণীয় জীবনের শেষ যাত্রায় লুৎফর রহমান

অনুকরণীয় জীবনের শেষ যাত্রায় লুৎফর রহমান
অনলাইন ডেস্ক

পৃথিবী মানেই জীবন-মৃত্যুর পরিসর। জন্মের মাধ্যমে জীবনের যে সূচনা, মৃত্যুতে প্রস্থানের মাধ্যমেই তার অবসান। জন্ম-মৃত্যু তাই অবিচ্ছেদ্য পরিণাম। তবু মানুষ বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষায় জীবন চলে প্রতিনিয়ত। পরিণত বয়স বা বার্ধক্য মানুষকে মৃত্যুর বার্তা এনে দিলেও কোন মৃত্যুই কাম্য নয়, আকাঙ্ক্ষিত নয়। সেই মৃত্যু যদি প্রিয়জনের হয়, পিতার হয় তবে তা হয়ে ওঠে দুর্বহ শোকের আকর। এই শোক সহ্য করা কঠিন। এ শোক বহন করে জীবন চলা দুঃসাধ্য। পিতা হারানোর বেদনা আর মাথার ওপরে ছাদ হারানোর দুঃখ সমতুল্য। তবে পিতার প্রয়াণে সন্তান কেবল পিতাকেই হারায় না বরং হয়ে ওঠে মমতাহীন নিরাশ্রয় ও নিঃসঙ্গ।

চাঁদপুর পৌরসভার সুযোগ্য মেয়র অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েলের পিতা মোঃ লুৎফর রহমান সাহেব গত ৫ মার্চ ভোর ৪.৩৫ টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর এই মৃত্যু সংবাদ আমাদের ব্যথিত করেছে। আমরা তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক সংহতি জানাই এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই। পঁচানব্বই বছরের জীবনে তিনি রেখে গেছেন অসংখ্য গুণগ্রাহী, শুভাকাক্সক্ষী, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-নাতি-নাতনীসহ আত্মীয়-স্বজনের সমৃদ্ধ সংঘ। তিনি একজন সাবেক ব্যাংকার ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন। চাঁদপুরের উপমহাদেশ খ্যাত ব্যবসা কেন্দ্র পুরানবাজারের তিনি একজন বিদিত ব্যবসায়ী। তিনি কেবল ব্যবসায়ী হিসেবেই সফল ছিলেন না, বরং পিতা হিসেবেও তাঁর সাফল্য এবং সার্থকতা রয়েছে। পুত্রকন্যাদের সুশিক্ষার সাথে সাথে মানবিক জীবনবোধে তিনি উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন সার্থকভাবে। এ কারণেই আজ তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রের হাতে বর্তেছে চাঁদপুর পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের ভার। তাঁর বড় একটি সার্থকতা হলো পুত্রের জন্যে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে স্বীয় আত্মজকেই জয়ী করে আনা।

তাঁর দোয়ার বদৌলতেই পর্যটন, ঐতিহ্য ও বাণিজ্যের নগরী হিসেবে চাঁদপুরের গৌরব ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পেয়েছেন তাঁরই কনিষ্ঠপুত্র অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েল। পিতার শেষ যাত্রার নামাজে জানাজার পূর্বে তাই যথার্থভাবেই তিনি পিতার জন্যে সবার দোয়া কামনা করেছেন। একজন মানুষ হিসেবেও প্রয়াত লুৎফর রহমান ছিলেন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সম্মানীয়। পিতৃভূমি রামগঞ্জ হতে শ্বশুরালয় চাঁদপুরে এসে তিনি নিজগুণেই সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন। তাঁর আচার-আচরণ ছিল অজাতশত্রুর মতো। কখনো কাউকে তাঁর বিরুদ্ধে কোন নেতিবাচক মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। তিনি ছিলেন নিরীহ ও নির্বিবাদী। তাঁর প্রয়াণে তাই সকলের মধ্যেই শোকের প্রকাশ ছিল আন্তরিক ও গভীর। জীবন কারও বয়সে অক্ষয় হয় না, অক্ষয় হয়ে থাকে তার কর্মে। প্রয়াত লুৎফর রহমান সাহেব তাঁর মানবিক ও সামাজিক কর্মে গুণগ্রাহীদের কাছে অনির্বাণ থেকে যাবেন। হয়ত প্রাকৃতিক নিয়মে তাঁর জীবনের দীপ নির্বাপিত হয়েছে, কিন্তু তাঁর কর্মের ও চেতনার দীপে আলোকিত সুধীজন তাঁকে স্মরণ করবেন কালে-কালান্তরে। আমরা প্রয়াত লুৎফর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং পরকালে তাঁর সুকর্মের যথাযোগ্য পুরস্কারের জন্যে প্রার্থনা করি। মহান স্রষ্টা তাঁর যাপিত জীবনের সকল ত্রুটি মাফ করে দিয়ে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউসে স্থান দিন। আমিন। প্রয়াত মোঃ লুৎফর রহমানের শেষ যাত্রা হতে আমরা আবারো সেই শিক্ষাই গ্রহণ করি, জীবন হচ্ছে এই পৃথিবীতে ক্ষণকালের যাত্রাবিরতি মাত্র। সবাইকে একদিন এই শেষ যাত্রায় শামিল হতেই হবে। কাজেই,আসুন, মানবিক প্রীতি ও প্রেমের বাঁধনে সবাই সবাইকে বেঁধে এই ক্ষণকালের জীবনকে করে তুলি আনন্দ ও সার্থকতায় পরিপূর্ণ; যেন মহাকালের পথে এই ক্ষুদ্র যাত্রাবিরতি মধুময় হয়ে ওঠে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়