সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আনন্দ বিষাদে পরিণত হয় কি শুধুই ভ্রমণকারীর কারণে?
অনলাইন ডেস্ক

গেলো ডিসেম্বরে দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আনন্দ ভ্রমণে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। একই সাথে পর্যটক বা ভ্রমণকারীদের মধ্যে নানা দুর্ঘটনায় নিরানন্দ বা বিষাদের ঘটনাও ঘটে চলছে। পর্যবেক্ষকরা এজন্যে কেবল ভ্রমণকারীদের উদাসীনতা, সতর্কতার অভাব, খামখেয়ালিপনাকেই দায়ী করছেন না, পর্যটনকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতাও খুঁজে পেয়েছেন। একটি পর্যটন স্পটে আসার পর পর্যটকরা কী কী ঝুঁকিতে পড়তে পারেন, সেটা ভালো করে জানান দেয়া ও মনিটরিংয়ের বিষয়টি পর্যটন স্পটের পরিচালক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অন্যতম প্রধান দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে গাফলতির নমুনা পাওয়া প্রায় সকল পর্যটন স্পটেই। দেশের অন্যতম সেরা পর্যটন স্পট কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিনে অনেক পর্যটকের মৃত্যুর পরই তবে সংশ্লিষ্টদের টনক নড়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এমন টনক নড়ার অপেক্ষায় রয়েছে দেশের আরো অনেক পর্যটন স্পট। তন্মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রও। এ কেন্দ্রে যাতায়াতের পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তরুণ-যুবকদের হতাহতের ঘটনার জন্যে কিংবা অন্য দুর্ঘটনার জন্যে কর্তৃপক্ষকে দায়ী করার সুযোগ থাকে না। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে কোনো দুর্ঘটনার জন্যে অবশ্যই দায়ী করার সুযোগ রয়েছে। আনন্দ ভ্রমণে এসে সাঁতার কম জানার পরিণতিতে মেঘনায় নিখোঁজের ৩ দিন পর ভেসে উঠলো স্কুলছাত্রের মরদেহ--চাঁদপুর কণ্ঠে সোমবার প্রকাশিত এমন খবর থেকে জানা যায়, মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে আনন্দ ভ্রমণে আসা একজন স্কুলছাত্রের নয়, আসলে দুজন স্কুলছাত্রেরই মৃত্যু ঘটেছে।

২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে প্রায় ৭৫০ জন শিক্ষার্থী এমভি প্রিন্স কামাল-১ নামক লঞ্চযোগে দুপুরে মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে এসে পৌঁছে। দুপুর ১টায় তিন সহপাঠী মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র সংলগ্ন মেঘনা নদীতে গোসল করতে নামে। এ সময় দুই ছাত্র তলিয়ে যায়। শাহরিয়া ইসতিয়াক শামস (১৬) নামে একজনকে ঘটনার পরপরই আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সেদিনই তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নদীতে ডুব দিতে যাওয়া অপর শিক্ষার্থী সুস্মিত সাহাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অতঃপর তিনদিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি রোববার সকালে তার লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। মোহনপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, সকালে নদীতে টহল দেয়ার সময় লাশ ভাসতে দেখা যায়। পরে তা উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুর রহমান জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলাধীন মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে আসা ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ নারায়ণগঞ্জ শাখার কিছু ছাত্র-ছাত্রী গোসল করতে নদীতে নামে। এদের মধ্যে দশম শ্রেণির ২ জন ছাত্র সাঁতার কম জানায় নদীতে ডুবে যায়। তাক্ষণিক সকল ছাত্র মিলে একজন (শাহরিয়ার ইশতিয়াক শামস-১৪)কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করে এবং দশম শ্রেণির অপর একজন ছাত্র নিখোঁজ থাকে। পরবর্তীতে নিখোঁজ ছাত্রকে উদ্ধারে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড আউটপোস্ট মোহনপুর সার্চ এন্ড রেসকিউ অপারেশন পরিচালনা করে। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রের সামনে মেঘনা নদী হতে সুস্মিত সাহা (১৫)-এর লাশ উদ্ধার করে। পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য মৃতদেহটি মোহনপুর নৌ-পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

এতো বড়ো একটি পর্যটক দল যখন ব্যক্তি মালিকানাধীন মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছলো, তখন তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে কী বলা হয়েছিল--সেটা জানার কৌতূহল কিন্তু অনেকের মধ্যেই জন্মেছে। কেননা এই পর্যটন কেন্দ্রে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শুধু নয়, এর আগেও অনুরূপ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। এমন মৃত্যুরোধের জন্যে কর্তৃপক্ষ কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে সে ব্যাপারে গণমাধ্যমে তাদের বক্তব্য আসা দরকার কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে বিবৃতি আসা দরকার। পর্যটন কেন্দ্রে কোনো দুর্ঘটনার জন্যে কেবল পর্যটকই দায়ী--এমনটি মানতে সচেতন মহল নারাজ। সেজন্যে আমরা সরকারি-বেসরকারিভাবে পরিচালিত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সবার আগে নিরাপত্তা (সেফটি ফার্স্ট) কথাটি ব্যাপক প্রচারের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করছি। এই সেফটি ফার্স্ট কথাটি অবলম্বন করতে পর্যটক তথা আনন্দ ভ্রমণকারীদের উদ্বুদ্ধ করা ও মনিটরিং করার দায়িত্ব পর্যটন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে পালনে ও সুষ্ঠু জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্যে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু এড়ানো যাবে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়