প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
সহজ সরল অসহায় কিছু মানুষের প্রতারিত হবার কষ্টকর চিত্র-

একেতো সহজ সরল, তদুপরি কেউ যদি অসহায় হয়, তাহলে চতুর প্রতিবেশীর শ্যেন দৃষ্টির কবলে পড়ে। দশ বছরেরও অধিক সময় আগে শাহরাস্তির প্রত্যন্ত গ্রামের এক সহজ সরল দিনমজুরের শখ হলো তিনি বিদেশ যাবেন, সেখানকার অধিক রোজগারে সুখ কিনবেন। প্রতিবেশী আদম ব্যবসায়ীর কাছে ধর্ণা দিলেন। ওই ব্যবসায়ী লাখের অধিক টাকা চাইলেন। দিনমজুর তার মাঠের জমি বিক্রি করে আদম ব্যবসায়ীর চাহিদা পূরণ করলেন। টাকা পেয়ে তিনি প্রাপ্তি স্বীকারমূলক কোনো কাগজ না দিয়ে বললেন, পাসপোর্ট করো, পাসপোর্ট হলে যোগাযোগ করলে ভিসা লাগাবো, তারপর বিদেশ নেবো। তারপর কেটে গেলো মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। কিন্তু দিনমজুরের আর বিদেশ যাওয়া হলো না। একসময় তিনি বুঝলেন, আদম ব্যবসায়ী দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন এবং সেজন্যে টাকা ফেরত চাইলেন। ক্ষুব্ধ হলেন আদম ব্যবসায়ী। একদিন দিনমজুর লোকটি আদালত থেকে একটি নোটিস পেলেন। ছুটে গেলেন জেলা শহরে অবস্থানরত প্রতিবেশীর কাছে, যিনি সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বললেন, তোমার বিরুদ্ধে আদম ব্যবসায়ী এমন মামলা দিয়েছে, যাতে তোমাকে উকিল ধরে আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন নিতে হবে। নয়তো জেলে যেতে হবে। বাড়িতে গিয়ে হতাশাগ্রস্ত দিনমজুর গাছ, মুরগি ও ডিম বিক্রি করে সাড়ে চার হাজার টাকা জোগাড় করে ওই কর্মকর্তার হাতে দিয়ে বললেন, আপনি সব ব্যবস্থা করবেন। ওই কর্মকর্তাও সরল বিশ্বাসে এক উকিলকে টাকাটা দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকলেন। কিন্তু দিনমজুরের জামিন নিয়ে বাড়ি যাওয়া আর হলো না, অবশেষে যেতে হলো জেলে।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে শাহরাস্তির পার্শ্ববর্তী কচুয়া উপজেলায় এক অসহায় ব্যক্তি বিদেশ যাবার প্রলোভনে পড়ে কীভাবে প্রতারিত হলেন সে সম্পর্কে প্রকাশিত হয়েছে একটি খবর। এই খবরের শিরোনাম দেয়া হয়েছে 'প্রবাসে নেয়ার কথা বলে অসহায় মোস্তফার শেষ সম্বল বসতবাড়ি দখলের চেষ্টা ॥ আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি'। এতে প্রতিবেদক লিখেছেন, কচুয়া পৌরসভার কোয়া গ্রামের মৃত এয়াকুব আলীর ছেলে অসহায় মোস্তফাকে প্রবাসে নেয়ার কথা বলে সরলতার সুযোগ নিয়ে শেষ সম্বল বসতবাড়ি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী মোস্তফা তার পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পর প্রতিপক্ষ ওই গ্রামের খান বাড়ির বাবুল খান ও তার ছেলে সোহাগ খান দলবল নিয়ে মোস্তাফার ভিটা-বাড়িতে মাটিকাটা শুরু করে। এ ঘটনার পর প্রতিকার চেয়ে মোস্তফা ৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার চাঁদপুরের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারার বিধান মতে আদেশক্রমে নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনা করেন। বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে অস্থায়ী স্থিতাবস্থা বজায় ও কচুয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে নালিশি ভূমির দখল বিষয়ে মতামতসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্যে নির্দেশ প্রদান করেন। শুক্রবার কচুয়া থানার এএসআই অসীম কুমার রায় সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বিজ্ঞ আদালতের নিষেধাজ্ঞা নোটিস প্রদান করে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য বাবুল গংকে অবহিত করেন।
ভুক্তভোগী মোস্তফা জানান, বাবুল খান ও জাকির খান আমাকে সৌদি আরব নেয়ার কথা বলে আমার হাতে ২০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পাসপোর্ট করার জন্যে বলে। পরবর্তীতে আমার ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে ছেলের চিকিৎসা বাবদ আরও ৩০ হাজার টাকা ধার দেয়। ওই সময় টাকা লেনদেনের বিষয়টির কথা বলে আমার কাছ থেকে খালি ৩টি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। এই স্ট্যাম্প দিয়ে আমার শেষ সম্বল বসতভিটা রেজিস্ট্রি করে নেয় বাবুল খান গং। আমার ৩ সন্তান, স্ত্রী নিয়ে তাদের হুমকি-ধমকির ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
বিবাদী বাবুল ও জাকির বলেন, মোস্তফা সাড়ে ৫ শতক বসতভিটার জমি আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রেজিস্ট্রি করে দেয়। কচুয়া থানার এএসআই অসীম কুমার রায় সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বিজ্ঞ আদালতের নিষেধাজ্ঞা নোটিস প্রদান করে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য বাবুল গংকে অবহিত করেছেন।
সহজ সরল মানুষ কীভাবে বিদেশ যাবার লোভে পড়ে চতুর প্রতিবেশী আদম ব্যবসায়ী কর্তৃক প্রতারিত হয়, প্রাগুক্ত দুটি ঘটনাই তার প্রমাণ। সরলতায় কিছু অসহায় মানুষ গরল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, সেটা যেনো তাদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাসই বটে। স্রষ্টা কেনো তাদের এমন পরিস্থিতিতে নিপতিত করেন, সেটা বুঝা বড়ো দায়।