সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মানুষের সন্তুষ্টি যখন সীমিত চাহিদায়--

মানুষের সন্তুষ্টি যখন সীমিত চাহিদায়--
অনলাইন ডেস্ক

এ সমাজে সবচে’ অভাবী কারা? এর সহজ জবাব, যার সহায়-সম্পদ নেই, যারা সুবিধাবঞ্চিত তারাই তো অভাবী। এছাড়া অভাবী আর কারা? কিন্তু অভাবী তো তারাও, যাদের চাহিদা অফুরন্ত। এমন অভাবীদের চিনতে পর্যবেক্ষণ করার দক্ষতা থাকতে হয়। আমাদের সমাজে এমন অভাবীর সংখ্যা একেবারে কম নয়। যার কারণে এদের দৃশ্যমান বিত্ত-বৈভব থাকা সত্ত্বেও এরা দরিদ্র, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় না। এ ক্ষেত্রে তাদের কারণ বা অজুহাত অনেক। এ কারণের অন্যতম হচ্ছে তাদের অফুরন্ত চাহিদা সংক্রান্ত অভাব। এর বিপরীতে সীমিত চাহিদায় সন্তুষ্ট ও মানসিকভাবে অভাবমুক্ত খুবই কমসংখ্যক মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়, যারা সম্পদের পাহাড় না গড়ে মানুষের কল্যাণে নীরবে নিভৃতে কাজ করে নির্মল তৃপ্তি খোঁজে। এদেরই অন্যতম আর্মি লিটন। যিনি তার ব্যবসায় লাভের টাকা ব্যয় করেন এতিম শিক্ষার্থীদের পেছনে।

চাঁদপুর কণ্ঠের হাজীগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ কামরুজ্জামান টুটুল তাকে খুঁজে বের করে তার ওপর লিখেছেন একটি প্রতিবেদন। যার সার সংক্ষেপ হচ্ছে, এলাকায় এক নামে সবাই চিনে তাকে আর্মি লিটন হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনীয়ারিং কোরে সার্জেন্ট পদ থেকে অবসরপ্রাপ্ত এই ব্যক্তির পুরো নাম মোঃ হোসেন মোল্লা লিটন। অবসর গ্রহণের পর নিজ এলাকায় ধারাবাহিকভাবে দুটি ফাস্টফুডের ব্যবসা শুরু করেন। এই ব্যবসার আয়ের পুরো টাকা ব্যয় করেন এতিম গরিব আর দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের পেছনে। নিজের পেনশনের টাকা, প্রবাসী ২ ছেলে আর ছোট ভাইয়ের দেয়া অর্থে নিজ সংসার সুন্দরভাবে চলে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। ৪ সন্তানের জনক মোঃ হোসেন মোল্লা লিটন হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের দক্ষিণ ইউনিয়নের সন্না মোল্লা বাড়ির মৃত রুহুল আমিন মোল্লার ছেলে। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, চাকুরি জীবনে তার হাতের স্পর্শে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ, রাজধানীর হাতির ঝিল প্রকল্প, বনানী ওভার পাস, ক্যান্টনমেন্ট ফ্লাইওভার তৈরি হয়েছে। লাইবেরিয়াতে শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৮ সালে অবসরে আসেন তিনি। অবসরের এককালীন টাকা দিয়ে বাকিলা পশ্চিম বাজারে উন্নত মানের ফাস্ট ফুড ব্লু মুন ক্যাফেটেরিয়া নামে ব্যবসা চালু করেন। তার পরের বছর করোনার হানায় পুরো ব্যবসায় ধস নামে। করোনার দাপট কমে আসলে আবারো ব্লু মুন ক্যাফেটেরিয়া পুরোপুরি চালু করেন। এরপরেই মধ্য বাজারে ব্লু মুন-১ নামের আরেকটি ফাস্ট ফুডের ব্যবসা চালু করেন। এই দুটি ফাস্ট ফুডের দোকানে ৪ জনের কর্মসংস্থানে তাদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা দেবার পর মাস শেষে ২০ হাজারের কম-বেশি আয় হয়। মূলত এই পুরো টাকাই তিনি ব্যয় করেন গরিব অসহায় আর এতিম শিক্ষার্থীদের শুধু পড়ালেখার পেছনে। বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান জানান, তিনি (হোসেন মোল্লা লিটন) আমার বিদ্যালয়ের দুঃস্থ, অসহায় আর এতিম সকল শিক্ষার্থীকে সবসময় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে আসছেন। তার এই টাকায় পড়ালেখা করে এসএসসি পাস করে ইতোমধ্যে বহু শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছে কিংবা চাকুরি করছে বলে আমি জানি। তবে তিনি বিষয়টি সবসময় গোপন রাখতে চান।

বস্তুত আর্মি লিটনের ব্যক্তিগত চাহিদা সীমিত বলে তিনি দরিদ্র, এতিম শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে পারছেন। তার অঢেল বিত্ত আছে বলে মনে করি না, তবে বড় একটা চিত্ত বা মন আছে। সেজন্যে নিজের কল্যাণের পাশাপাশি অপরের কল্যাণের প্রতি তার দৃষ্টি বা মনোযোগ বেশি। এমন আত্যন্তিকতায় তিনি হয়েছেন এক কল্যাণবুদ্ধ ব্যবসায়ী, যার তুলনা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমরা অনুকরণীয় এ ব্যবসায়ীর সর্বাঙ্গীণ সাফল্য ও সুস্থতার সাথে দীর্ঘজীবন প্রত্যাশা করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়