শুক্রবার, ০৯ মে, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

স্কুল শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা এবং প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন

স্কুল শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা এবং প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন
অনলাইন ডেস্ক

‘কচুয়ায় স্কুল শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা ॥ প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ’ শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সেটি অনেকের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সংবেদনশীল প্রতিটি মানুষ সুমনার আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবিতে সহমত পোষণ করলেও কিছু প্রশ্নের অবতারণা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারছে না। সেজন্যে সংবাদটির বিবরণ নি¤েœ তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা এড়াতে পারছি না।

সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, কচুয়ায় সুমনা আক্তার শাহনাজ (১৪) নামের নবম শ্রেণির এক স্কুল শিক্ষার্থী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার সকালে করইশ মজু মিয়া প্রধানীয়া বাড়ি সংলগ্ন সড়কে স্কুল শিক্ষার্থী সুমনা ছটফট করলে লোকজন তাকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে। সুমনার বাবা সুমন জানান, প্রতিদিনের মতো সকালে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে আমার মেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর বাড়ির লোকজন মজু প্রধানীয়া বাড়ির সামনের রাস্তায় সুমনাকে ছটফট করতে দেখে আমাকে সংবাদ দেয়। আমি দ্রুত সুমনাকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু আমার মেয়েকে কুমিল্লা নেয়ার আগেই সে মৃত্যুবরণ করে। কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত চিকিৎসক আসাদুজ্জামান সূত্রে জানা যায়, সুমনা নামের স্কুল শিক্ষার্থী ইঁদুরের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। এ সময় চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অবস্থার অবনতি দেখলে তাকে কুমিল্লায় রেফার করেন। কুমিল্লায় নেয়ার পূর্বেই সে মৃত্যুবরণ করে।

স্কুল শিক্ষার্থী সুমনার বিষপানে আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে তার বাবা সুমন ৫ জনকে বিবাদী করে কচুয়া থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, কড়ইয়া গ্রামের শহিদ মুন্সির ছেলে ফুয়াদ হোসেন রিফাতের সাথে আমার মেয়ের ৩ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। প্রেমের সম্পর্কের সময় ফুয়াদ আমার মেয়ের অগোচরে তার বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে সে আমার মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে। আমার মেয়ে বিষয়টি আমাকে ও আমার স্ত্রী শারমিনকে অবহিত করলে আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করে সমাধানের চেষ্টা করি। বিবাদীরা সমাধানে না এসে আমার মেয়েকে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং তাকে হুমকি প্রদান করে যে, আমার মেয়ে সুমনা যদি ফুয়াদের জীবন থেকে সরে না যায় তাহলে তারা আমার মেয়ের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে ভাইরাল করবে। বিবাদীরা পরস্পর যোগসাজশ করে আমার মেয়ে সুমনা আক্তারকে বিভিন্ন ধরনের অপবাদ দিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়। আমি আমার মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুরের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের কাছ থেকে এজাহার পেয়েছি, মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এদিকে নিহত সুমনা আক্তারের মৃত্যুতে কচুয়া ক্যামব্রিয়ান স্কুলের শিক্ষার্থীরা কচুয়া বিশ্বরোড এলাকায় আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে। শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের সহপাঠী সুমনাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া হয়েছে। তার ভিডিও এবং ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়া হয় এবং তার প্রেমিক বিবাহ করতে অস্বীকৃতি জানায় বলেই সুমনা বিষপান করেছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আমরা ফুয়াদ মুন্সিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

সুমনার মৃত্যুর পর পাঁচজনকে আসামী করে তার বাবা সুমন কচুয়া থানায় মামলা করার যে সুযোগ নিলেন, সেটি কিন্তু সুমনার জীবদ্দশায় অভিযোগ আকারে থানায় জমা দিতে পারতেন। থানা পাত্তা না দিলে ইউএনও, পুলিশ সুপার কিংবা জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হতে পারতেন। সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে স্থানীয় প্রেসক্লাবে যেতে পারতেন। কিন্তু সুমনার জীবদ্দশায় থানা সহ এতোসব স্থানে যাবার মতো সাহস নিশ্চয় সুমনার বাবা সুমনের ছিলো না কিংবা স্থানীয় যেসব গণ্যমান্য ব্যক্তির কাছে সুমনার প্রেমিক রিফাতের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের হুমকির প্রতিকার চেয়ে সুমন ব্যর্থ হয়েছেন, সেই গণ্যমান্যদের কেউ সুমনকে ভালো পরামর্শ দেননি। যার ফলে সুমন মেয়েকে শোনাতে পারেননি আশার বাণী। সঙ্গত কারণে সুমনা হতাশার আগুনে পুড়েছে এবং আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। আমাদের দেশে এমন বাল্যপ্রেমের পরিণতিতে কতো আত্মহননের ঘটনা যে ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে তার পরিসংখ্যান আপাতত আমাদের হাতে না থাকলেও এতোটুকু বলতে পারি, সংখ্যাটি নিঃসন্দেহে অসংখ্য। এ আত্মহননের ঘটনা অনেক হ্রাস করা যায়, যদি কিশোর-তরুণ বয়সী শিক্ষার্থী, এমন বয়সী প্রেমিক-প্রেমিকাকে কিংবা তাদের বাবা-মা সহ অন্য অভিভাবককে তাদের করণীয় ও পরিণতি সম্পর্কে ব্যাপকভাবে সচেতন করা যায়। প্রশ্ন হলো, সেটি করবে কে?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়