প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
শুধু চাঁদপুর নয়, দেশ হারালো এক মানবিক চিকিৎসককে

গত ২৩ জানুয়ারি সোমবার বেলা ১২ টায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল সাক্ষী হয়ে গেলো ব্যতিক্রম এক শোকসভার। এটি আয়োজন করা হয় সদ্য প্রয়াত চিকিৎসক ডাঃ মনিরুল ইসলামের অকাল মৃত্যুতে। এতে বক্তাগণ ডাঃ মনিরুল ইসলামকে মানবিক চিকিৎসকের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন। শোকসভাটির আয়োজক বিএমএ চাঁদপুর জেলা শাখা ও জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
|আরো খবর
ডাঃ মনিরুল ইসলাম ছিলেন উক্ত হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ও বিএমএ চাঁদপুর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। হাসপাতালের তৃতীয় তলার হলরুমে এ শোক সভা ও দোয়া মাহফিলে বিএমএ চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ মোহাম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ গোলাম কাওসার হিমেলের পরিচালনায় শোকসভায় শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা, মরহুমের কর্মময় জীবন ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ হারুন অর রশিদ, আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন, বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ এসএম সহিদ উল্লাহ, চাঁদপুর জেলা পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ ইলিয়াস, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ সাজেদা পলিন, লক্ষ্মীপুর জেলার সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ এমজি ফারুক ভূঁইয়া, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রোটাঃ কাজী শাহাদাত পিএইচএফ, বর্তমান সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, সাবেক সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডাঃ সালেহ আহমেদ, বিএমএ চাঁদপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ডাঃ হারুনুর রশিদ সাগর, হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল, ডাঃ আসিবুল আহসান চৌধুরী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডাঃ আব্দুল আজিজ, মেডিকেল অফিসার ডাঃ মিজানুর রহমান, বিশিষ্ট ছড়াকার চাঁদপুর সনাক সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডাঃ আনিছুর রহমান, অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডাঃ আবু সাদাত আবু সায়েম, ডাঃ সাইফুল ইসলাম, চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটের তত্ত্বাবধায়ক সানজিদা আলম, হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের টেকনোলজিস্ট আব্দুল মালেক, ডাঃ মনিরুল ইসলামের দীর্ঘদিনের ওটি সহকারী আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
সভায় প্রায় সকল বক্তা মরহুম ডাঃ মনিরুল ইসলামের চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিনের কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা করেন। বক্তারা বলেন, শুধু চাঁদপুর জেলা নয় আশপাশের জেলার মানুষগুলোও চিকিৎসা সেবা নিতে মনিরুল ইসলামের নিকট ছুটে আসতেন। তিনি তাঁর পেশাদারিত্বের প্রতি এতোটাই দায়িত্ববান ছিলেন যে, তাঁর যথাযথ সেবা পেয়ে রোগীরা সন্তুষ্ট থাকতেন। তিনি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মানুষগুলোর জন্যে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে 'না' বলে কোনো শব্দ ছিলো না তাঁর।
সভায় ডাঃ মনিরুল ইসলামের সহকর্মীরা অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, তিনি শুধু রোগীদের জন্যে উদার ছিলেন না, সহকর্মীদের প্রতিও ছিলেন উদার। রোগী এবং সহকর্মীরা গভীর রাতসহ যে কোনো সময় যে কোনো প্রয়োজনে ডাক দিলে তিনি সেই ডাকে সাড়া দিয়েছেন। এক কথায় শুধু একজন চিকিৎসক হিসেবে নয়, তিনি ছিলেন মানবতার উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত।
মরহুমের সহকর্মীরা বলেন, যে মানুষটি রোগীকে সুস্থ করার জন্যে বা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করে মহান আল্লাহর দয়ায় শত শত মানুষকে বাঁচিয়ে তুলেছেন, সেই মানুষটি মৃত্যুর সময় নিজে একজন চিকিৎসক হয়েও কোনো চিকিৎসক সহকর্মীর সহযোগিতা নেয়ার সুযোগ পাননি। বক্তারা অকাল প্রয়াত মনিরুল ইসলামের স্মৃতি রক্ষার্থে হাসপাতালের সার্জারী ওটি রুম, লাইব্রেরী বা অন্যকিছু তার নামে নামকরণ করার দাবি জানান। পাশাপাশি সকল বক্তা মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং মহান আল্লাহর নিকট তাঁকে জান্নাতবাসী করার জন্যে সকলের নিকট দোয়া কামনা করেন। সভায় ডাঃ মরহুম মনিরুল ইসলামের সহধর্মিণী ডাঃ শারমিন সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন।
এই শোকসভায় ছিলো উপচেপড়া ভিড়, যেমন ভিড় সাধারণত কুলখানি ও চেহলামে দেখা যায়। ডাঃ মনিরুল ইসলাম যে তাঁর সকল সহকর্মী ও হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসক সমাজ ও রোগী মহলে কতোটা গ্রহণযোগ্য ছিলেন, সেটা এই শোকসভায় যারা সশরীরে অংশ নিয়েছেন, কেবল তারাই উপলব্ধি করার সুযোগ পেয়েছেন। শোকসভায় সেদিন সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন শোকাবহ পরিবেশের, যাতে অধিকাংশ অংশগ্রহণকারীর চোখ হয় অশ্রুসজল। অনেকে কান্নায়ও ভেঙ্গে পড়েন। বক্তাদের মধ্যে ক’জন তো বলেই ফেলেন, ডাঃ মনিরুলের অকাল মৃত্যুতে শুধু চাঁদপুর নয়, প্রকৃতপক্ষে দেশই হারিয়েছে একজন মানবিক চিকিৎসককে। রোগীবান্ধব এমন চিকিৎসকের শূন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়। আমরাও তাতে সহমত পোষণ করছি। আমরা মহান আল্লাহর কাছে এই চিকিৎসকের প্রতি পরকালে ততোটা কিংবা তারচে’ বেশি দয়াবান হতে প্রার্থনা জানাবো, যতোটা এই চিকিৎসক তাঁর রোগীদের প্রতি দরদী ছিলেন। আমরা এই চিকিৎসকের জন্যে অনন্ত সুখের জান্নাত প্রত্যাশা করছি। পরম করুণাময় সেই প্রত্যাশা পূরণ করুক--নিরন্তর এই প্রার্থনা জানাচ্ছি।