প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
তারপরও তিনি নেতৃত্বে আসীন থাকবেন?

মাত্র তিনি ছাত্রনেতা। তাও একটি কলেজ শাখার। তারপরও তিনি যে ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন, সেটি মাত্রাতিরিক্ত হয়েছে। শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা হলে যে এমনটি করতে হয়, সেটি কিন্তু নয়। পারিবারিক প্রশ্রয়ে তিনি ব্যক্তিগত লোভের বশবর্তী হয়ে এমনটি যে করেছেন, সেটি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে। এতে শাসক দলের ভাবমূর্তি যে কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?
|আরো খবর
চাঁদপুর কণ্ঠে ‘কচুয়ায় ছাত্রলীগ নেতা দুরন্ত কর্তৃক সংখ্যালঘুর সম্পত্তি দখলের বায়নাপত্রটি ভুয়া’ শীর্ষক সংবাদ থেকে জানা যায়, কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মোঃ ইব্রাহিম হোসেন (দুরন্ত) একটি ভুয়া বায়নাপত্র তৈরি করে বাসাবাড়িয়ার উত্তম সরকারের সাড়ে ৮ শতক সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে। জমির মালিক উত্তম সরকার এই বায়নাপত্র ভুয়া-বানোয়াট বলে দাবি করে গত ১১ জানুয়ারি কচুয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসহ চাঁদপুরের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ পায়। এসব সংবাদ প্রকাশের পর গত শনিবার দুপুরে চাঁদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (কচুয়া সার্কেল) মোঃ আবুল কালাম চৌধুরী, কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইব্রাহীম খলিল ও অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) নাজিম উদ্দীন ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করেন। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম সওদাগর, কচুয়া উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ফনী ভূষণ মজুমদার তাপু, উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রাণধন দেব, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ পোদ্দার ও কচুয়া প্রেসক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
তদন্তকালে উত্তম সরকার তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনে উপস্থাপন করেন যে, সম্প্রতি কচুয়া বাজারে গেলে ইব্রাহিম গং ফিল্মি স্টাইলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে বাজারে অবস্থিত রূপসী হোটেলের একটি কেবিনে নিয়ে যায়। সেখানে ৩টি খালি স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক তার স্বাক্ষর নেয়। এই স্বাক্ষর নেয়া অলিখিত স্ট্যাম্প দিয়ে কচুয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লিখক জহিরুল ইসলামের মাধ্যমে ভুয়া বায়নাপত্র দলিল সৃষ্টি করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দলিল লেখক জহিরুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তাদেরকে জানান, পূর্বে স্বাক্ষর করা স্ট্যাম্পে বায়নাপত্র লেখা হয়। এ সময় ইব্রাহিম গং ব্যতীত অপর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এছাড়া বায়নাপত্রের গ্রহীতা ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহিমের মা ফাতেমা বেগমের কাছে বায়না দলিলের অর্থ জোগান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বায়না দলিলের প্রথম সাক্ষী ইব্রাহিম নিজে, দ্বিতীয় সাক্ষী তার ভাগিনা হাসানাত ও তৃতীয় সাক্ষী তার ভাতিজা রবিউল। তারা উভয়ে নাবালক। ইব্রাহিমের বায়নাপত্র ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তাগণ উপস্থিত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম সওদাগরকে ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহিম কর্তৃক অবৈধভাবে দখল করা সম্পত্তি মুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দায়িত্ব দেন।
উপরোক্ত সংবাদ থেকে মোঃ ইব্রাহিম হোসেন দুরন্তের বাড়বাড়ন্ত আচরণের নিকৃষ্ট নমুনা খুঁজে পাওয়া যায়। কচুয়ার সাংবাদিক সমাজ দুরন্ত কর্তৃক এমন আচরণের শিকার উত্তম সরকারের পাশে নিরাপোষভাবে দাঁড়ানোর কারণে স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন করতে বাধ্য হয়েছে। অন্যথায় উত্তম সরকারকে অধম হয়ে মুখ বুঁজে থাকার কষ্টটাই না করতে হতো। ইউপি চেয়ারম্যান সালিসের মাধ্যমে দুরন্ত কর্তৃক দখলকৃত উত্তম সরকারের জায়গা উদ্ধার করে দেবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। এতে ইব্রাহিম হোসেন দুরন্ত আইনগত কঠোর ব্যবস্থার হাত থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন বলে অনেকের ধারণা। সেটা যদি হয়ই, তাহলে দলীয় তথা সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণ থেকেও কি তাকে রেহাই দেয়া ঠিক হবে? আমরা অনুরাগ-বিরাগের শিকার না হয়েই বলতে পারি, এমন রেহাই দেয়া ঠিক হবে না। দুরন্তকে কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজের আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি/ অপসারণ কিংবা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করার জন্যে সংশ্লিষ্টদের ত্বরিৎ উদ্যোগ নেয়া দরকার। আর প্রচ্ছন্ন/অপ্রচ্ছন্ন চাপে যদি সেটি করা না যায়, দুরন্ত যাতে সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি হতে না পারেন সেটি ঊর্ধ্বতন দলীয় নেতাদের মাথায় রাখা দরকার। ছাত্রলীগের কলেজ ইউনিটের সামান্য আহ্বায়ক হয়ে যিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়গা দখলের ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেন, তিনি ভবিষ্যতে সভাপতি হয়ে আরো কী কী করতে পারেন সেটা সহজেই অনুমেয়। অতএব, সাধু সাবধান।