প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

রাজনৈতিক দলগুলোর মূল সংগঠনের শাখা কমিটি তো বটেই, ভ্রাতৃপ্রতিম/অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শাখা কমিটির সভাপতি/সেক্রেটারী হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এজন্যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন তথা নির্বাচন হলে জনপ্রিয়তার ভিত্তি নির্মাণে প্রার্থীকে নিজ সাংগঠনিক বলয়ে তৎপরতা প্রদর্শন, ত্যাগ শিকারসহ আনুষঙ্গিক কাজ করতে হয়। যেটা খুব বেশি কষ্টসাধ্য নয়। কিন্তু কোনো কমিটি সরাসরি পেতে হলে প্রার্থীকে তদবির, লবিং, গ্রপিং, ওয়েলিং করতে গিয়ে এতোটা কাঠখড় পোড়াতে হয়ে যে, তাতে ভারী পকেট পর্যন্ত খালি হয়ে যায়। তারপর সভাপতি বা সেক্রেটারী পদ করায়ত্ত হলে কেউ কেউ বিনিয়োগ তুলে আনতে বেপরোয়া হয়ে পড়েন এবং দলের ভেতরে-বাইরে চাঁদাবাজি শুরু করেন। এমনকি পদের অপব্যবহার করে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।
গত বুধবার চাঁদপুর কণ্ঠে এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘কচুয়ায় ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ’। এ সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মোঃ ইব্রাহীম মিয়া (দুরন্ত ইব্রাহীম)-এর বিরুদ্ধে বাসাবাড়িয়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইব্রাহীম, তার মা ও বোন প্রভাব বিস্তার করে ওই জমি দখল করছেন বলে ভুক্তভোগী উত্তম সরকার কচুয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। উত্তম সরকার তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রায় দুই মাস পূর্বে তার ভাই সুশীল সরকারের সাথে জমি-সংক্রান্ত বিরোধে কচুয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিলো। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে তার ভাই সুশীল সরকার ও পিতা প্রিয়লাল সরকার উত্তম সরকারকে সাড়ে ৮ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার মধ্য দিয়ে ওই অভিযোগের আপোষ-মীমাংসা হয়। বিবাদী দুরন্ত ইব্রাহীম থানা হতে অভিযোগ তুলে নেয়ার কথা বলে খালি ৩টি ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে উত্তম সরকারের স্বাক্ষর নিয়ে নেন। গত ৭ জানুয়ারি রাতের কোনো এক সময়ে লোকচক্ষুর আড়ালে ইব্রাহীম জমি ভরাট ও দখলের উদ্দেশ্যে ওই সম্পত্তির মাঝখানে বাঁশের বেড়া দেন। উত্তম সরকার সংবাদ পেয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে কচুয়ায় এসে ইব্রাহীমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহীম তাকে ভয়ভীতি-হুমকি প্রদর্শন করেন। গত ৯ জানুয়ারি রাতে উত্তম সরকার তার সম্পত্তির দখল ফিরে পেতে কচুয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ছাত্রলীগ নেতা মোঃ ইব্রাহিম মিয়া জানান, উত্তম সরকার জমি বিক্রি করবে বলে আমার মায়ের কাছ থেকে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে টাকা নিয়েছে। বায়নাসূত্রে আমি উক্ত সম্পত্তিতে বাঁশের বেড়া দিয়েছি। ইব্রাহীম মিয়ার মা ফাতেমা বেগম জানান, উত্তম আমার কাছ থেকে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন সে জমি রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছে না। কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইব্রাহীম খলিল জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমরা আপাতত কচুয়ার ছাত্রলীগ নেতা মোঃ ইব্রাহিম মিয়াকে অভিযোগকারী উত্তম সরকারের অভিযোগের সত্যতায় কালিমালিপ্ত করতে চাই না, যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন এবং উত্থাপিত অভিযোগের বিপরীতে ইব্রাহিম মিয়ার দাবি ভিন্নতর। আমরা চাই, দলীয় পদণ্ডপদবীর অপব্যবহার বন্ধ হোক। না হলে মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের ভাবমূর্তি নিয়ে বিদ্যমান খারাপ ধারণার আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসবে না।