প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

বিভিন্ন যানবাহনের চালক দিয়ে রোগীর আকালে ভোগা চাঁদপুরের কিছু চিকিৎসক অন্য চিকিৎসকদের রোগী বাগানোর হীন চেষ্টা করছেন প্রায় এক/দেড় দশক যাবৎ। এটার মাত্রা দিনদিন বাড়ছে। এ চেষ্টা শুরুর পর থেকে চাঁদপুরের প্রথিতযশা অনেক পুরানো চিকিৎসক কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে প্রয়াত প্রথিতযশা চিকিৎসক, বিএমএ চাঁদপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি যথাক্রমে আলহাজ্ব ডাঃ এম এ গফুর ও ডাঃ মোঃ এ কিউ রুহুল আমিনসহ বর্তমানে প্র্যাকটিস করছেন এমন কিছু স্বনামধন্য চিকিৎসকও রয়েছেন। যানচালকদের মধ্যে কিছু সংখ্যক অসাধু তথা কমিশনভোগী ব্যক্তি বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, ট্রলার/ নৌকাঘাটে কাউকে রোগী হিসেবে আন্দাজ করতে পারলেই হলো, তার পেছনে ঘুরঘুর করে এবং কোন্ চিকিৎসকের কাছে যেতে চায় সেটা জিজ্ঞেস করে। রোগী নির্দিষ্ট ডাক্তারের কথা বললেই রিকশা/ অটোবাইক/ সিএনজি অটোরিকশার চালক বলে, আরে, ওনি তো মারা গেছেন/ ওনি চাঁদপুরে নেই, ঢাকা বা ভারত চলে গেছেন/ ওনি অসুস্থ হয়ে এখন আর রোগী দেখেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন মিথ্যাচার করতে করতে উদ্দিষ্ট রোগীকে হতবিহ্বলতায় আক্রান্ত করে এসব যানচালক বলে, আমার সাথে আপনার পরিচিত ডাক্তারের চেয়ে আরো অনেক ভালো ডাক্তারের কাছে চলুন। তারপর সেখানে গেলে রোগী কীরূপ প্রতারিত হয় সে সংক্রান্ত একটি খবর ছাপা হয়েছে চাঁদপুর কণ্ঠে গতকাল রোববার।
‘চিকিৎসা পেশার সম্মান রক্ষার্থে ব্যবস্থা নিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিকিৎসকের আহ্বান ॥ দালাল চক্রের খপ্পরে রোগী’ শীর্ষক সংবাদে চাঁদপুর কণ্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার গোলাম মোস্তফা লিখেছেন, চাঁদপুরের এক শ্রেণীর চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ও অটোবাইকের ড্রাইভারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দালাল তৈরি করে রোগী বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ অনেক পুরানো। দালাল চক্র বিভিন্ন চিকিৎসকের নাম বলে এক চিকিৎসকের রোগী বাগিয়ে অন্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছে নিরীহ রোগীরা। এমনি একটা ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার।
চাঁদপুর জেলা বিএমএর সাবেক সভাপতি ও বেলভিউ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ হারুন অর রশিদ সাগরের নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে দেয়া একটি পোস্ট থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়। এতে লিখা হয়েছে, ডাঃ সাগরের উদ্দেশ্যে কচুয়া থেকে চাঁদপুরে আগত জনৈক মেহেরুন্নেছা নামের রোগী বাস থেকে নামার পর বেলভিউ হাসপাতালে যাওয়ার জন্যে এক রিকশাচালককে বলেন। রিকশাচালক রোগীকে শহরের প্রফেসর পাড়াস্থ ডাঃ আহসান উল্লাহর চেম্বারে নিয়ে যায়। এরপর ডাঃ আহসান উল্লাহ রোগীকে দেখে রোগীকে বিভিন্ন টেস্টের জন্য প্যাডে লিখে চেম্বারের কাউন্টারে পাঠান। কাউন্টার থেকে রোগীকে পরীক্ষার নামে সাড়ে তিন হাজার টাকা চাইলে তিনি (রোগী) বলেন, আমাকে তো ঢাকা থেকে ফোন করে আমার আত্মীয় বলেছেন, ডাক্তারের ফিস, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ঔষধ সবকিছু সাগর স্যার দিবেন। তাই আমি শুধু ভাড়া নিয়ে চাঁদপুর আসছি। আমার কাছে টাকা নেই, স্যারকে বলেন। তখন কাউন্টার থেকে বলা হয়, সাগর স্যার চাঁদপুরে নাই, এজন্য এই স্যার আপনাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। ওই রোগী তখন ঢাকায় আত্মীয়ের কাছে ফোন করে ঘটনাটি জানান। ওই আত্মীয় ডাঃ সাগরকে ফোন করে রোগীর কথাগুলো বলেন। তখন ডাঃ সাগর বলেন, আমি তো চেম্বারে, রোগী তো আসেনি। পরে তিনি রোগীর মোবাইল নাম্বারে কথা বলে সে ডাক্তারের চেম্বারের নাম জানেন। এরপর তিনি চেম্বার থেকে বের হয়ে ডাঃ আহসান উল্লাহর চেম্বারে গিয়ে রোগীকে বেলভিউ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তারপর ওই রোগীকে তাঁর চেম্বারে এনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে পুনরায় কচুয়া পাঠিয়ে দেন।
রোগী বিদায় করে ডাঃ সাগর এ বিষয়ে তার নিজ ফেসবুক পেজে কতিপয় চিকিৎসকের দালাল দিয়ে চিকিৎসা করার বিষয়ে সে সকল চিকিৎসককে কীট বলে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এমনকি এসব চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থাগ্রহণের আবেদন জানান।
আমরা চাঁদপুরে কিছু অসাধু চিকিৎসক কর্তৃক বিভিন্ন যানচালককে অন্য চিকিৎসকের রোগী বাগিয়ে নেয়ার কাজে নিয়োজিত করাকে নিতান্তই হীন চেষ্টা নয়, জঘন্য কাজ হিসেবে অভিহিত করতে চাই। এ সকল চিকিৎসককে যথাযথ প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত করে এদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ড্যাব সহ বিএমএ'র মাধ্যমে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া এবং চিকিৎসকগণের নিবন্ধন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়াটা বাঞ্ছনীয় ও জরুরি বলে আমরা মনে করি। অন্যথায় চিকিৎসক সমাজের ভাবমূর্তি ক্রমশ ক্ষুণ্ন ও বিপন্ন হওয়া ঠেকানোর কাজ আর সহজ পর্যায়ে থাকবে না, যেটা হবে অনেক দুর্ভাগ্যজনক।