প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ট্রাক্টর দমান, রাস্তা বাঁচান

ট্রাক্টর যে সকল প্রকার সড়কের, বিশেষ করে গ্রামীণ সড়কের বড় শত্রু সেটা ভুক্তভোগীরা বুঝলেও অন্য অনেকেই বুঝে না। আবার দায়িত্বশীল কেউ কেউ বুঝলেও না বোঝার ভান করে। এতে ক্ষতি যা হবার তা হতেই থাকে, আর ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি বাড়তেই থাকে। ট্রাক একসময় যন্ত্রদানবের কুখ্যাতি পেলেও এখন সে কুখ্যাতি পেয়েছে ট্রাক্টর। কারণ ট্রাক্টর শুধু সড়কের ক্ষতি করে না, এর ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকের বেপরোয়া চলাচলে প্রাণহানিও ঘটে। চাঁদপুর জেলায় ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রাণহানি লাগাতার ঘটতে থাকলে সাবেক পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার ট্রাক্টরবিরোধী কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এতে গেল পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে ট্রাক্টর চলাচল আশানুরূপ কমে গেলেও সম্প্রতি আবার বাড়ছে। সেজন্যে চাঁদপুর কণ্ঠে গতকাল ট্রাক্টর নিয়ে পরিবেশিত হয়েছে শীর্ষ সংবাদ।
‘হালচাষের ট্রাক্টর পণ্য পরিবহনে ব্যস্ত’ শীর্ষক সংবাদে চাঁদপুর কণ্ঠের ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, চাষাবাদের জন্যে আমদানি করা হলেও ফরিদগঞ্জে পণ্য নিয়ে সড়ক দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ যন্ত্রদানব ট্রাক্টর ও ট্রলি। ৬ চাকার এই ট্রাক্টর গ্রামীণ পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা সড়কে ইট-মাটি-বালি, কাঠ-গাছ পরিবহন করছে। সরকার নতুন সড়ক নির্মাণ ও পুরাতন সড়ক সংস্কার করলেও এ যন্ত্রদানবের কারণে সড়কগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। দিনে-রাতে সমান তালে পণ্য নিয়ে অবৈধ এই ট্রাক্টর চললেও এসব বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
জানা যায়, কৃষি উন্নয়নের জন্যে এসব ট্রাক্টর আমদানি করা হলেও মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছে ইট, বালু মাটি, ফার্নিচার ইত্যাদি মালামাল পরিবহনের কাজে। ট্রাক্টরের বিরামহীন চলাচলে সড়ক ভেঙ্গে ছোট-বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে, উড়ছে বালি, হচ্ছে শব্দদূষণ, রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। রূট পারমিটবিহীন ট্রাক্টর ও লাইসেন্সহীন চালকরা বিকট শব্দে মালবোঝাই করে সাদা পাউডারের মতো ধূলো উড়িয়ে অবাধে চলছে। কৃষি জমি থেকে মাটিবোঝাই করে সড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কগুলোর ওপর দিয়ে ব্যাপক হারে চলাচল করছে।
হালচাষের এই ট্রাক্টর হালচাষ বাদ দিয়ে কোন্ ক্ষমতাবলে পণ্য পরিবহন করছে তা অনেকের জানা নেই। গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান পাটওয়ারী ও গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদ বলেন, আমরা বিভিন্ন সড়কের কাজ করি, আর এসব ট্রাক্টর চলাচল করে সেগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। অনেক সময় আমরা ট্রাক্টরের মালিক ও চালকদের বললেও তারা কর্ণপাত করে না। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেই ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য প্রতিরোধ করা সম্ভব। ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমুন নেছা বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে ট্রাক্টর মালিকদের সতর্ক করেছি। এসব ট্রাক্টরকে পণ্য পরিবাহনের কাজে পেলেই কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
আমরা ফরিদগঞ্জের ইউএনওর এমন বক্তব্যে আশাবাদী হলাম। তাঁর সাথে থানার ওসি যদি একাত্ম হন, তাহলে ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ করা কিংবা নিয়ন্ত্রণ করাটা মোটেও কঠিন কাজ নয়। হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি থানায় সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে ফরিদগঞ্জ থানায় সদ্য যোগদানকৃত ওসি আঃ মান্নান ফরিদগঞ্জে ট্রাক্টরের অবাধ চলাচলের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা নিয়ে জনপথ তথা সড়ক রক্ষা করবেন বলে আশা ব্যক্ত করছি।