প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
নিসার মতো ছোট্ট শিশুদের মৃত্যু কাঁদায় অনেককে

গতকাল বুধবার ছোট্ট শিশু নিসা তার স্কুলে যায়নি। তার মতো শিশুদের কেউ কেউ মাঝে মধ্যেই নানান কারণে স্কুলে যায় না। পরদিন স্কুলে গেলে সহপাঠীরা এর কারণ জানতে চায়, আবার চায়ও না। কেননা জানতে চাওয়ার মতো বোধ বা তাগিদ তাদের সবার মধ্যে এখনও পুরোপুরি হয়নি। নিসা মঙ্গলবার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দুপুরে তার বোন ও বাড়ির আরেক শিশুসহ ঘরের সামনে খেলা করছিলো। নিকটেই নূতন ঘর বানানোর জন্যে গাছ কাটা হচ্ছিলো। গাছের ডাল পড়ছে দেখে নিসার খেলার দু সাথী দৌড়ে সরে গেলেও নিসা আর সরতে পারেনি। ডাল পড়লো নিসার গায়ে এবং তাতে সে হলো গুরুতর আহত। পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে দ্রুত ছুটে গেলো ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেলো। নিসা চলে গেলো চির ঘুমের দেশে। কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলেন। নিসা চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের উত্তর চৌরাঙ্গা গ্রামের মোঃ ইসমাইল হোসেনের মেয়ে এবং শোল্লা আশেক আলী স্কুল এন্ড কলেজের শিশু শ্রেণীর ছাত্রী।
|আরো খবর
যে ব্যক্তি নিসাদের বাড়িতে গাছ কাটছিলো সে ব্যক্তি এবং তাকে এ কাজে নিয়োগ দিয়েছেন যে বা যারা, তাদের অসতর্ক থাকার কারণেই যে নিসা গাছের ডালে চাপা পড়ে মারা গেছে-সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। নিসার মতো ফুটফুটে হাসিখুশি নিষ্পাপ শিশুদের মৃত্যুর জন্যে দায়ীরা জবাবদিহিতার মুখোমুখি হলেও শাস্তির মুখোমুখি সাধারণত হয় না। কারণ, দুর্ঘটনা কবলিত শিশুর জীবনের মূল্যকে নগণ্য সংখ্যক মানুষই আমলে নেয়, আর বাকিরা মূল্যহীন কিংবা তুচ্ছ ভেবে আপসকামিতায় লিপ্ত হয়। যেমন-যানবাহনের নিচে চাপা পড়ে মরলে কোনো শিশুর জীবনের মূল্য যানবাহন মালিকরা দালালদের খপ্পরে পড়ে বিশ হাজার টাকার বেশি দেন না, সদিচ্ছা থাকলেও এর বেশি দিতে পারেন না।
নিসার মতো ছোট্ট শিশুদের অকাল মৃত্যু, অপমৃত্যু কেবল তাদের বাবা-মাকে কাঁদায় না, সংবেদনশীল প্রতিটি মানুষকেই কাঁদায়। কবি সত্যেন্দনাথ দত্তের ভাষায় ছোট্টদের জন্যে রোদন হয় এমন-‘হারিয়ে গেছে-হারিয়ে গেছে, ওরে!/ হারিয়ে গেছে বোল-বলা সেই বাঁশি/হারিয়ে গেছে কচি সে মুখখানি,/দুধে-ধোয়া কচি দাঁতের হাসি। ...সবচেয়ে যে ছোট্ট কাপড়গুলি/সেগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে,/যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোটো/আজকে সেটি শূন্যে পড়ে কাঁদে,/সবচেয়ে যে শেষে এসেছিলো/সে গিয়েছে সবার আগে সরে/ছোট্ট যে জন ছিল রে সবচেয়ে/সে দিয়েছে সকল শূন্য করে।’