প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
বাস্তবতা উপলব্ধি না করলে যা হয়-
সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এক ব্যক্তি স্বাধীনতোত্তর কন্যাদায়গ্রস্ত হয়ে পড়লেন। উপর্যুপরি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি আর্থিক সঙ্কটে পড়লেন। দেশে চলছিলো দুর্ভিক্ষ। ঘটক তাঁর কাছে মেয়েদের জন্যে একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। এই প্রস্তাবে প্রবাসী পাত্রের কথা শুনলেই তিনি বিনয়ের সাথে ঘটককে বলতেন, দেখুন, এমন পাত্র ধনী হওয়াটাই স্বাভাবিক, তার বাড়িতে দালানকোঠা থাকবে সেটাও সত্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সে বিয়ে করে বিদেশে চলে যাবে। অর্থ, দালানকোঠা, ভালো খেতে পারা ও পরতে পারাটা আমার মেয়েকে সুখ ও স্বস্তি দিতে পারবে না। এতে আমার মেয়ে বিপথগামিতা ও অস্বস্তির মুখোমুখি হতে পারে। আপনি এমন পাত্রের সন্ধান দিন, যে আমার মেয়েকে বিয়ে করে মোটা ভাত ও মোটা কাপড়ে কুঁড়ে ঘরে রাখবে এবং সুখে-দুঃখে একসাথে থাকবে।
|আরো খবর
বাস্তবতা উপলব্ধি করা এমন কন্যার পিতার বড়ই অভাব। প্রবাসী পাত্রের প্রস্তাব আসলেই অনেক পিতা যেনো অর্থলিপ্সায় লকলকে জিহ্বা বের করে ঘটককে উপঢৌকন দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন এবং মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে বাল্য বিবাহ দেন। তারপর কী হয় তার অসংখ্য ঘটনা এখানে উল্লেখ করবার মতো ফুরসত নেই। তবে গতকাল চাঁদপর কণ্ঠে ‘ডিভোর্সের কথা গোপন রেখে সাবেক স্বামী থেকে টাকা আদায় ॥ ব্যাংকারের সাথে দুই সন্তানের জননীর নতুন সংসার’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখিত ঘটনাটির বর্ণনা না করে আর পারলাম না।
২০১১ সালের ২ মার্চ পারিবারিকভাবে জনৈক সোহেল আহম্মদের সাথে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ রাঢ়ী বাড়ির রুহুল আমিনের মেয়ে সালমার বিয়ে হয়। সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিয়ের দু বছরের মধ্যে সোহেল পাড়ি জমান সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায়। কারণ, কম টাকায় চলবে না স্ত্রীর। সংসারের সুখের জন্যে নাকি অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু বিধিবাম, স্ত্রীর স্বপ্নের মঞ্জিলের পথে হাঁটতে গিয়ে নিজের পথটিই হারিয়ে বসলেন সোহেল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, যার জন্যে এতো ত্যাগ আর পরিশ্রম সেই প্রিয় মানুষটিকেই ধরে রাখতে পারলেন না। স্ত্রী সালমা পরকীয়ায় আসক্ত হলো দুজনের সাথে। সালমার বাবা ও ভাইয়ের কঠোর ভূমিকায় এবং পুলিশের সহযোগিতায় এক প্রেমিককে সরানো সম্ভব হলেও আরেকজনকে সরানো যায়নি। সে হলো ফরিদগঞ্জ মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এক কর্মচারী, নাম যার আবির। ২০১৬ সালে এই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে সোহেলই আবিরের সাথে সালমার পরিচয় করিয়ে দেন। সেই পরিচয় থেকেই প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয় এবং পরিণতিতে ১১ ও ১০ বছর বয়সী সন্তান থাকা সত্ত্বেও সালমা গোপনে সোহেলকে ডিভোর্স দিয়ে ছয় মাস ধরে তার পাঠানো টাকা ভোগ করে আবিরের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়।
সালমার দাবি, ৮ম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় তাকে তার পরিবার বিয়ে দেয়, যেটি ছিলো বাল্যবিবাহ ও তার প্রতি জুলুম। সোহেলের সাথে বিয়ের বয়স ১১ বছরের বেশি হলেও মাত্র ২২ মাস তিনি স্বামীকে কাছে পেয়েছেন। এই কাছে না পাওয়াটাই যে সালমাকে বিপথগামী করেছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ সত্যটা অনেক কনের বাবা-মা, অভিভাবক বোঝে না। সেজন্যে প্রবাসীর স্ত্রীরা পরকীয়া ও বিপথগামিতায় অনেক এগিয়ে। এমন দৃশ্যপট পাল্টানোর জন্যে করণীয় সম্পাদনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলকে গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে।