প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
গুরু পাপে কি লঘু দণ্ড?
অভিযোগ দায়েরের ১মাস ১৭ দিনের মাথায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পদাবনতিমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। এই কর্মকর্তা হচ্ছেন হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বেলায়েত হোসেন। তাকে ২০ শয্যাবিশিষ্ট কুমিল্লা শহীদ নগর ট্রমা কেন্দ্রে রেসিডেন্সিয়াল মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদে বদলি করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে শাস্তিমূলক বদলি। কথা হলো, এটি কি তার অনেক বড় পাপে নিতান্তই কম শাস্তি হয়ে গেলো?
|আরো খবর
ডাঃ বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হলো, তার অধীনস্থ হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও একজন স্টাফ নার্সের মেয়েকে যৌন হয়রানি করা এবং নার্সদের করোনা টিকা প্রদানের পারিশ্রমিকের ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা। তার বিরুদ্ধে চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্ণধার সিভিল সার্জন বরাবরে গত ৩ আগস্ট ২০২২ তারিখে উপরোক্ত তিনজন প্রমাণাদিসহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগের আলোকে সম্পন্ন হয় তদন্ত এবং সে তদন্তের আলোকে ডাঃ বেলায়েতকে গত ২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডাঃ মোঃ শামিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বদলি করা হয়। এতে অভিযোগকারীরা কমণ্ডবেশি সন্তুষ্ট হলেও সাধারণ মানুষ এমন শাস্তিমূলক বদলিকে গুরু পাপে লঘু দণ্ডই মনে করছেন।
যে কোনো উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-এর পরে সাধারণ বিবেচনায় থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)কে গুরুত্বপূর্ণ পদ মনে করা হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) পদটি তারচে’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ পদ বলে বাস্তবে মনে হয়। কেননা অপরাধীর চেয়ে রোগীর সংখ্যাই বেশি থাকে। সে কারণে ইউএইচএফপিও-এর জনসম্পৃক্ততাকে তুলনামূলক বেশিই বটে। পেশায় চিকিৎসক বলে তিনি কোমল, মানবিক, দরদী, সংবেদনশীল, ধৈর্যশীল ও পরিশ্রমী হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু তিনি যদি যৌন লিপ্সায় আক্রান্ত হয়ে যান এবং তার সে লিপ্সা অধীনস্থ নারী কর্মী ও সন্তানের প্রতি প্রদর্শনে বেপরোয়া হয়ে যান, তাহলে পরিস্থিতিটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা প্রত্যক্ষ না করলেও যে কোনো মানুষ চোখ বুঁজে আন্দাজ করলে অবশ্যই শিহরিত না হওয়া ছাড়া উপায় নেই। উপর্যুপরি তিনি যদি অসৎ হন, অর্থ আত্মসাৎকারী হন, তাহলে তো নারী কর্মী কেনো পুরুষ কর্মীরাও অস্বস্তিতেই ভুগতে হয়।
যৌন লিপ্সা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের কারণে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ বেলায়েত হোসেনকে প্রথমত চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা, আত্মসাৎকৃত অর্থ আদায় করে ৮জন নার্সের করোনা টিকা প্রদানের পারিশ্রমিকের বকেয়া অর্থ ফেরত দেয়া এবং তারপর নির্দিষ্ট সময়ান্তরে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করাটা ছিলো ভুক্তভোগীসহ অনেকের কাছে প্রত্যাশিত। পদাবনতিমূলক বদলিতেই যদি এমন চরিত্রের চিকিৎসকের শাস্তিটা সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে সেটা কম বলেই বিবেচিত হতে পারে-এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পুনর্বিবেচনার জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।