প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
ক’মাস আগে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কমিটি গঠনে ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও গ্রুপিং জনসমক্ষে প্রকটরূপে ধরা দেয়। তবুও জেলা বিএনপির দীর্ঘদিনের আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক সভাপতি ও অ্যাডভোকেট সলিম উল্যাহ সেলিম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন পান। তাঁরা সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলো জেলা সদরে ভালোভাবেই পালন করে চলছেন। শেখ মানিক বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর-হাইমচর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন এবং ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশ নেয়, তাহলে অবশ্যই বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হবেন। চাঁদপুর-৩ সংসদীয় এলাকায় সাবেক এমপি জি.এম. ফজলুল হক ও বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান শাহীনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রণোদনায় বিএনপির গ্রুপিং কিছুটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও জেলা বিএনপির সম্মেলনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে চাঁদপুর-২ (মতলব-মতলব উত্তর) সংসদীয় এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. জালাল এবং সাবেক মন্ত্রী ও এমপি নূরুল হুদার ভক্ত-অনুসারীদের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে গ্রুপিং অনেকটা স্পষ্ট। চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে বিএনপি মনোনীত সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা লায়ন হারুনের সাথে প্রভাবশালী বিএনপি নেতা এম.এ. হান্নানের গ্রুপিংতো দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) সংসদীয় এলাকায় সাবেক এমপি এম.এ. মতিনের সাথে তাঁর জীবদ্দশায় বিগত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনীয়ার মমিনুল হকের গ্রুপিংটা যতোটা দৃশ্যমান ছিলো, এম.এ. মতিনের মৃত্যুর পর সেটা এখন কম দৃশ্যমান। চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনের সাবেক মন্ত্রী-এমপি এহছানুল হক মিলনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদাবনতির পর কচুয়ায় বিএনপির গ্রুপিংটা অনেকটাই স্তিমিত।
চাঁদপুর-১ (কচুয়া) সংসদীয় এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বর্তমান এমপি ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীরের সাথে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদের দ্বন্দ্ব অনেকটা চরম পর্যায়ে। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সম্পাদক এমপির বিরুদ্ধে নিয়েছেন প্রকাশ্য অবস্থান। চাঁদপুর-২ (মতলব-মতলব উত্তর) সংসদীয় এলাকায় সাবেক মন্ত্রী-এমপি মায়া চৌধুরীর সাথে বর্তমান এমপি অ্যাডঃ রুহুলের দ্বান্দ্বিক অবস্থান কখনও কখনও সাংঘর্ষিক পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে। চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) সংসদীয় এলাকায় বর্তমান এমপি সাংবাদিক মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সাথে স্বদলীয় প্রতিপক্ষের দ্বন্দ্বটা সাংঘর্ষিক অবস্থা থেকে বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থায় থাকলেও পুরোপুরি স্তিমিত হয়নি। চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) সংসদীয় এলাকায় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংটা বিগত সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রকট থাকলেও বর্তমানে স্তিমিত। চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর-হাইমচর) সংসদীয় এলাকায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউসুফ গাজীকে কেন্দ্র করে গ্রুপিংটা সাময়িক স্তিমিত হলেও তার মনোনয়নপত্র বাতিলকে কেন্দ্র করে সে গ্রুপিংটা যে ক্রমশ চাঙ্গা হয়ে উঠছে সেটা ফেসবুকে চোখ রাখলেই বোঝা যায়।
চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির গ্রুপিংটা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কমিটি গঠনের পর অনেকটা স্তিমিত হলেও এমপি রাঙ্গাকেন্দ্রিক যে কোনো সময় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া নবগঠিত কমিটির প্রতিপক্ষরা ছোটখাট অনুষ্ঠান করে নিজেদের গ্রুপিংটা জানান দেয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল বর্তমানে দৃশ্যমান না হলেও জাতীয় পার্টির বাহুধা বিভক্তির আলামত প্রকটভাবে দৃশ্যমান। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দেশের সর্ববৃহৎ দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে স্ব স্ব দলীয় অবস্থানে আপাতত ঐক্যবদ্ধ দেখতে পেয়ে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ স্বস্তি বোধ করলেও এ দুটি দলের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের গ্রুপিং ও এর কুফল প্রত্যক্ষ করে কম-বেশি অস্বস্তিতে আছে। এ গ্রুপিং জিইয়ে রাখার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের কারো কারো প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইন্ধনের গুঞ্জন শোনা যায়। ধরে নিলাম, এ গুঞ্জন অসত্য। কথা হলো, দলের কর্ণধারদের পক্ষ থেকে উক্ত গ্রুপিং নিরসনে সময়োচিত কঠোর নির্দেশনা জারি বা হুঙ্কার দ্রুত উচ্চারিত হয় না কেন?-এই না হওয়ার পেছনে সুবিধাভোগী কারা সেটা তদন্ত বা অনুসন্ধান করে বের করা দরকার।