প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
আমাদের দেশে নগরায়নের প্রশ্নে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বহুবিধ কার্যক্রমই বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব নগর বা শহরে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বর্জ্য অপসারণ করে সুবিধাজনক স্থানে ফেলে দেয়াকেই প্রাত্যহিক কাজ মনে করা হয়, কিন্তু সেটির ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাববার জন্যে যথেষ্ট অবকাশ যেনো স্বয়ং সরকারই খুঁজে পাচ্ছে না। ফলে শহরগুলো প্রকৃত সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হতে পারছে না। কিছু কিছু শহরতো আবর্জনার কারণে শহরবাসী ও আগন্তুকদের কাছে বিড়ম্বনার বিষয়ে যেমন পরিণত হয়, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করে।
চাঁদপুর জেলাধীন বিভিন্ন উপজেলা সদরে গড়ে ওঠা পৌরসভাগুলোর মধ্যে প্রায় সব ক’টিতেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। খোদ জেলা শহরে ১২৫ বছর পূর্বে গড়ে ওঠা চাঁদপুর পৌরসভাতেই নেই। এজন্যে গণমাধ্যমে সাংবাদিকরা সুযোগ পেলেই লিখেন। যেমনটি লিখেছেন ফরিদগঞ্জের এমকে মানিক পাঠান। তার লিখাটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে হয়েছে শীর্ষ সংবাদ, যার শিরোনাম হয়েছে ‘ফরিদগঞ্জ শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পৌরবাসী’। এই শিরোনামের নিচে উপ-শিরোনামে এসেছে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আব্দুল মান্নান পরানের বক্তব্য। তিনি বলেছেন, বর্তমানে আমরা ময়লা-আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলছি। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, জায়গা পেলে যাতে ময়লা রিসাইকেল করা যায়।
বস্তুত জায়গা পেলেই রিসাইকেলকেন্দ্রিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুরু করা যায় না, যেমনটি করতে পারেনি চাঁদপুর পৌরসভা এবং আরো অনেক পৌরসভা। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান অনাগ্রহ। অন্য অনেক প্রকল্পে নানা উৎস থেকে আশানুরূপ, এমনকি আশাব্যঞ্জক অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রকল্পকে দীর্ঘসূত্রিতায় ফেলে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের মাইন্ড সেটের অভাবই বেশি পরিলক্ষিত হয় বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত রয়েছে।
কথা হলো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা ওয়াস্ট ম্যানেজমেন্ট আসলে কী? অভিমন্যু প্রামাণিক এ ব্যাপারে সহজবোধ্য করে যা লিখেছেন, তার সারাংশ হচ্ছে : যে কার্যকর পরিচালন পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থের সংগ্রহ, অপসারণ, পরিবহন, শোধন, ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস ও পুনরায় বর্জ্য পদার্থকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়-সেটিই হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি হলো তিনটি ‘আর’, যাতে রয়েছে রিডিউস বা পরিমাণ হ্রাস, রিইউজ বা পুনর্ব্যবহার এবং রিসাইকেল বা পুনঃনবায়ন।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনার মধ্যেও এতদ্সংক্রান্ত প্রকল্পে জনবল সঙ্কটকে অনেকে সামনে এগিয়ে রাখেন। এ সঙ্কট মোকাবেলায় প্রতিটি পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত সুইপার বা পরিচ্ছন্নতা কর্মী কিংবা হরিজন সম্প্রদায়ের পরিবারের সদস্যগণকে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা যায় পরিকল্পিতভাবেই। সেজন্যে গাড়ির আগে ঘোড়া অর্থাৎ জনবল সৃষ্টিতে মনোযোগী হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। আমাদের বিশ্বাস, এমনটি হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রকল্পে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যাবে।
বলা বাহুল্য, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যে কতোটা পরিবেশবান্ধব এবং উন্নয়নকে টেকসই করার ক্ষেত্রে কতোটা কার্যকর-সেটা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আছে এমন একটি শহর পরিদর্শন করলেই কেবল অনুধাবন করা যায়, অন্যথায় নয়। পর্যটন-গুরুত্ব আছে এমন শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকলে সে শহরটি পর্যটকদের কাছেও অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়। আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনগুলোকে গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখবার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।