প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
হাজীগঞ্জের একটি সাইনবোর্ডকে নিয়ে গেলো আগস্ট মাসে নানা গুজব ছিলো। যেমন-সাইনবোর্ডটিকে উধাও করা হয়েছে, ইউএনও অফিস এতদ্সংক্রান্ত ফাইল খুঁজে পাচ্ছে না ইত্যাদি। অবশেষে উপজেলা প্রশাসন আগস্ট মাসের শেষ দিন (৩১ আগস্ট ২০২২ বুধবার) সেই সাইনবোর্ডটি পুনঃস্থাপন করে গুজব ও বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়েছে। এজন্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সহ সংশ্লিষ্ট সকলে অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যথেষ্ট অবকাশ রাখে।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় একটি সংবাদ পাঠকমাত্রেরই নজর কেড়েছে। এটির শিরোনাম হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর পৈত্রিক বাড়ির বাজেয়াপ্ত সম্পত্তিতে সীমানা পিলার ও সাইনবোর্ড পুনঃস্থাপন’। এ সংবাদে লিখা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের অন্যতম মেজর রাশেদ চৌধুরীর বাড়ি হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের সোনাইমুড়ি গ্রামে। রাশেদ চৌধুরী এই গ্রামের উকিল বাড়ির মরহুম মাওলানা শিহাবুদ্দিনের ছেলে। ফাঁসির দণ্ড নিয়ে বিদেশে পলাতক থাকা রাশেদ চৌধুরীর পৈত্রিক সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ সরকার ১নং খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে। পরে ২০১৪ সালে তা দখলে নেয় সরকার। সেই সময় উক্ত সম্পত্তিতে সাইনবোর্ড টানানো ও সীমানা পিলার বসানো হয়। দীর্ঘ প্রায় ৮ বছরে সেই সীমানা পিলার ও সাইনবোর্ড নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বুধবার (৩১ আগস্ট) তাতে ফের নতুন সীমানা পিলার ও সাইনবোর্ড টানানো হয়। সীমানা পিলার ও সাইনবোর্ড বসানোর সময় নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান মানিক।
রাশেদ চৌধুরী শুধু বঙ্গবন্ধুর খুনিই নয়, তার গ্রামের শ্রদ্ধেয় আঃ লতিফ মাস্টারের খুনিও। সেই মাস্টারের ছেলে আহসান হাবীব হচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, ফের সীমানা পিলার ও সাইনবোর্ড নতুন করে বসানোর কারণে নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে জাতির পিতার খুনির বাড়ি এই সোনাইমুড়ি গ্রামে। ঘৃণিত এই খুনির কারণে পুরো জাতির কাছে আমরা হাজীগঞ্জবাসী লজ্জিত।
প্রশ্ন হলো, এই সাইনবোর্ডে এমন কী লিখা রয়েছে, যা পড়ে নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে এই সম্পত্তি বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর এবং তার বাড়ি সোনাইমুড়িতে। চাঁদপুর কণ্ঠে উক্ত সাইনবোর্ডটির যে ছবি ছাপা হয়েছে, তাতে লিখা আছে : এই সম্পত্তি সরকারি খাস সম্পত্তি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ০৩/১২/২০১২ খ্রিঃ তারিখের ৪৪.০০.০০০০.০৭৪.০৬.০৫৫.০৯-৭৮৩ ও ৪৪.০০.০০০০.০৭৪.০৬.০৫৫.০৯-৭৮৪ নং স্মারক এবং জেলা প্রশাসক, চাঁদপুর, মহোদয়ের কার্যালয়ের বিবিধ মোকদ্দমা নং ২২/২০১৩-১৪ নং আদেশমূলে নিম্ন তফসিলভুক্ত ভূমি সরকারের ১নং খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তারপর সাইনবোর্ডে লিখা হয়েছে ১১৫ শতাংশ সম্পত্তির তফসিল।
এমন সাইনবোর্ড পড়ে আওয়ামী লীগ নেতা আহসান হাবীবসহ সোনাইমুড়ি গ্রামের লোকজন বলতে পারবে, এটি হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মেজর (বরখাস্তকৃত) রাশেদ চৌধুরীর বাজেয়াপ্তকৃত পৈত্রিক সম্পত্তির অবস্থান বা বিবরণ। এছাড়া সাইনবোর্ডটি আগন্তুক কারো চোখে পড়লে তারা কি সেটি বলতে পারবে?-নিশ্চয়ই নয়। সেজন্যে বলছি, আইনগত কোনো বাধা না থাকলে সাইনবোর্ডটিতে খুনির ছবি ও নাম সংযুক্ত করা হোক। সেটি সম্ভব না হলে ৭টি ভুল সংশোধন করে সাইনবোর্ডটিতে পিভিসি প্রিন্ট পুনরায় লাগানো হোক। এ ভুলের জন্যে ইউএনও/এসি-ল্যান্ড দায়ী এমনটি বলার সুযোগ নেই, যেহেতু ভূমি অফিসের অধঃস্তন কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীই সাইনবোর্ডের পিভিসি প্রিন্টটি করিয়েছে। আমাদের মতে, আলোচিত এই সাইনবোর্ডটিতে কোনোরূপ ভুল থাকা সমীচীন বা শোভন নয়।