প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
এক পিতার ব্যতিক্রম ক্ষোভ ও ঘৃণা
ছোট-বড় রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় ব্যক্তি ষড়যন্ত্রমূলক/মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করে জামিনে মুক্তি পেলে তাদেরকে জেলগেটেই ভক্তরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়, আনন্দ মিছিল করে এবং পরবর্তীতে সংবর্ধনাও জানায়। একজন নিরীহ সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এমনটি সাধারণত হয় না। নীরবে নিভৃতে জেলে ঢুকে এবং সেভাবেই বেরিয়ে আসে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এর বিপরীতে অস্বাভাবিক বা অসাধারণ কিছু যদি ঘটে, তাহলে সেটা গণমাধ্যমে প্রকাশযোগ্য সংবাদের উপজীব্য হয়ে দাঁড়ায়। এমন উপজীব্য হওয়ার ঘটনাই ঘটেছে ফরিদগঞ্জে। সেজন্যে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় ঘটনাটি নিয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে এমন-‘দুধ দিয়ে গোসল ও ফুলের মালা দিয়ে জেল ফেরত ছেলেকে বরণ’।
|আরো খবর
এ সংবাদটির সারসংক্ষেপ হচ্ছে : ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার পূর্ব বড়ালী গ্রামের বাসিন্দা অটোরিকশা শ্রমিক গিয়াস উদ্দিনের পুত্র মোঃ সাকিব (১৯) তার গ্রামের একটি খামারে বন্ধু সুজন মোল্লা ও শাহীনের সাথে কাজ করতেন। সুজন মোল্লার সাথে এক মেয়ে তার পরিবারের অজান্তে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সেমতে বৈধ স্ত্রী হিসেবে মেয়েটি সুজন মোল্লার সান্নিধ্য পেতে খামারটিতে আসা-যাওয়া করতেন। এটি টের পেয়ে মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়, যাতে আসামী করা হয় সুজন মোল্লা, সাকিব ও শাহীনকে। পুলিশ আটক করে এই তিনজনকে আদালতে পাঠায়। আর বিচারক তাদেরকে পাঠান জেল হাজতে। এরই মধ্যে কেটে যায় দুমাস। এমতাবস্থায় মেয়েটি সুজন মোল্লার সাথে তার বিয়ের কথা পরিবারকে জানায় এবং বিয়ের প্রমাণপত্র আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপন করেন। বিচারক সম্ভবত ধর্ষণ মামলাটি যে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক সেটি অনুধাবন করতে পেরে আটক তিনজনকে জামিনের আদেশ দেন। সেমতে ২ মাস ২১ দিন অহেতুক কারাভোগের পর গত সোমবার ১৫ আগস্ট সুজন মোল্লা, সাকিব ও শাহীন মুক্তি লাভ করেন। এদের মধ্যে সাকিবের পিতা গিয়াস উদ্দিন জেল ফেরত ছেলেকে স্বীয় সামর্থ্যে ব্যতিক্রমভাবে বরণ করার উদ্যোগ নেন। তিনি ছেলেকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে এবং ফুলের মালা গলায় পরিয়ে ঘরে তোলেন।
গিয়াসউদ্দিন চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, আমি গরিব হলেও আদর-স্নেহ দিয়ে ছেলে (সাকিব)কে তিলে তিলে গড়ে তুলেছি। যাতে বড় হয়ে আমার পরিবারের হাল ধরে। সেই ছেলেটাকেই এমন একটি মামলায় জড়ানো হলো, যা ভাবতেই ঘৃণা হয় আমার। তাই দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ছেলেকে ঘরে তুলেছি, যাতে দুধ ও ফুলের মতো পবিত্র হয়ে বাকি জীবন চলতে পারে সে। এ সময় সাকিবকে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় আশেপাশের লোকজনও ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেন।
আমাদের সমাজে অন্যায় না করেও যে কতো নিরীহ মানুষ মামলার আসামী হয়, সেটার তালিকা অনেক দীর্ঘ। আমাদের আইন ও বিচার প্রক্রিয়ার কারণে যে এমনটি হয় সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। ফরিদগঞ্জের পূর্ব বড়ালী গ্রামের নিরীহ যুবক সাকিব তার প্রমাণ। সেজন্যে তার অহেতুক কারাভোগের পর মুক্তিলাভে দরিদ্র পিতা কর্তৃক তাকে দুধ দিয়ে গোসল করানো এবং ফুলের মালা দিয়ে বরণের মধ্যে মূলত ব্যতিক্রম ক্ষোভ ও ঘৃণাই প্রকাশ পেয়েছে। আমরা এমন ক্ষোভ-ঘৃণাকে সংগতই মনে করছি। এর পেছনে নিহিত উদ্দেশ্য সফল হোক সেটাও প্রত্যাশা করছি। একই সাথে আমাদের আইন ও বিচার প্রক্রিয়ায় হয়রানির মাত্রা হ্রাসের উপায় খুঁজে বের করা যায় কিনা সেটা ভেবে দেখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।