প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
‘হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬ বছর পর চালু হলো অপারেশন থিয়েটার’ শিরোনামের সংবাদটি সোমবার চাঁদপুর কণ্ঠের ষষ্ঠ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে। প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপার উপযোগী এ সংবাদটি স্থানাভাবে ভেতরের পৃষ্ঠায় ছাপা হলেও সংবাদটির গর্ভে বর্ণিত বিষয় মনোযোগী পাঠকের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কেননা এ হাসপাতালটির প্রধান (উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা) ডাঃ মোঃ গোলাম মাওলার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও ব্যক্তিগত আর্থিক সহযোগিতায় অর্ধ যুগ পর যেনো একটি অসাধ্য সাধন হয়েছে। ২০১৫ সালে তৎকালীন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে অ্যানেসথেসিয়া যন্ত্র, ডায়াথার্মি মেশিন, সাকার মেশিন, হাইড্রোলিক ওটি টেবিল, অটোকেভ যন্ত্র, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের এসি, স্ট্যান্ডবাই ওটি, সিলিং লাইট, স্ট্যাবিলাইজারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম বহুলাংশে নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে উপজেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন এ হাসপাতালে সাশ্রয়ী মূল্যে কিংবা বিনা মূল্যে অস্ত্রোপচারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলো। বিশেষ করে চরম ভোগান্তিতে পড়ে গরিব-অসহায় রোগীরা। তারা অগত্যা হাজীগঞ্জ উপজেলা সদরে গড়ে ওঠা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে গলাকাটা বিলের মুখোমুখি হয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালটিতে শীর্ষ কর্তাব্যক্তি তথা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডাঃ মোঃ গোলাম মাওলা। তিনি এখানকার অপারেশন থিয়েটার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার বিষয়ে অস্বস্তি বোধ করেন। তিনি তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে শুরু করেন অপারেশন থিয়েটার কক্ষের সংস্কার কাজ। তিনি বিদ্যমান যন্ত্রগুলোর কিছু মেরামত ও কিছু নূতন কিনেন। তবে অর্থাভাবে অ্যানেসথেশিয়া মেশিন ও এসি চাল করতে না পারায় অপারেশন থিয়েটার চালু করা যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় উক্ত কর্মকর্তা ব্যক্তিগত দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে অনিবার্য সমস্যা দূর করে গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট ২০২২) অপারেশন থিয়েটারটি চালু করতে সক্ষম হন। রাখি সাহা নামের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে অপারেশন থিয়েটারটি চালু করে তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার চার লাখ মানুষের মাঝে আশার আলো সঞ্চার করেন।
অতীতে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালনকারীদের সাথে তুলনা করলে বর্তমানে কর্মরত ডাঃ মোঃ গোলাম মাওলাকে রোগীবান্ধব অসাধারণ এক উদার মহৎপ্রাণ চিকিৎসকই বলতে হবে। সরকারি চিকিৎসকদের মানসিকতা থাকে কীভাবে হাসপাতালে বসে প্রাইভেট ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নানা অজুহাতে রোগী পাঠিয়ে বাড়তি রোজগার করা যায়, সেখানে ডাঃ গোলাম মাওলার নিজ অর্থায়নে ছয় বছর বন্ধ থাকা অপারেশন থিয়েটার চালুর দৃঢ় মানসিকতা নিঃসন্দেহে অবাক করার মতোই বিষয়। এটা অবশ্যই তাঁর বদান্যতা। আমরা এজন্যে তাঁকে স্যালুট জানাই।