সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২২, ০০:০০

অসহায় এই শিক্ষকের পাশে দাঁড়ানো উচিত
অনলাইন ডেস্ক

আজকাল গণমাধ্যমে মানবিক আবেদন সমৃদ্ধ প্রতিবেদনের আধিক্য নেই বললেই চলে। কালেভদ্রে ২-১টি এমন প্রতিবেদন চোখে পড়ে, তবে সেটা খুব গুরুত্বের সাথে নয়। গণমাধ্যমের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, এমন প্রতিবেদন ভালো ট্রিটমেন্ট পায় না। এর কারণও আছে। সেটি হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীদের নানা অনুষ্ঠান বা কর্মসূচিভিত্তিক অসম্ভব ব্যস্ততা। আজকাল গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতিদিনের কার্যসূচি তৈরি হয় প্রধানত বিভিন্ন সংগঠনের নেতা, জনপ্রতিনিধি কিংবা বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ফোন, অনুরোধ, তাগিদ ইত্যাদির ভিত্তিতে। পরিস্থিতি এমন, এসব এড়ানোর মতো গণমাধ্যমকর্মী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, তিনি যে বিট বা বিষয়েই কাজ করুন না কেনো। প্রকৃত সাংবাদিকতার রূপরেখায় এমন প্রচারধর্মী কর্মকাণ্ড মূল্যহীন হলেও মুক্ত গণমাধ্যমের যথার্থ পরিবেশ না থাকায় এবং ন্যায্য পারিশ্রমিকের নিশ্চয়তা না থাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের বলা যায় নব্বই ভাগই ইচ্ছাকৃত/অনিচ্ছাকৃত ব্যস্ততায় দিনাতিপাত করেন। লজ্জাজনক হলেও বলতে হয়, কোনো কোনো গণমাধ্যমকর্মী প্রভাবশালী কারো কারো ক্রীড়নক কিংবা মুখপাত্রে পরিণত হতে বাধ্য হয়।

এমন কঠিন বাস্তবতাতেও কোনো কোনো গণমাধ্যমকর্মী সংবেদনশীলতায় এবং বিবেকের তাড়নায় ভোগেন। যে থেকে তারা অনেক পরিশ্রম করে (অধিকাংশ সময় পারিশ্রমিক না পাবার সম্ভাবনার মধ্যেও) অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং মানবিক আবেদনসমৃদ্ধ প্রতিবেদন তৈরি করেন। এমন একটি প্রতিবেদনই গত বুধবার প্রকাশিত হয়েছে চাঁদপুর কণ্ঠে। কামরুজ্জামান টুটুল কর্তৃক পরিবেশিত এ প্রতিবেদনের শিরোনাম হয়েছে ‘সন্তানরা থ্যালাসেমিয়া আর নিজে কিডনি রোগে আক্রান্ত। শিক্ষক শাহপরানের টাকা নেই, নিজের অপারেশন নেই, ২ সন্তানের চিকিৎসা নেই।’

এ প্রতিবেদনটি পড়ে জানা যায়, শাহপরান কোনো সরকারি বা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নন, তিনি হাজীগঞ্জ শহরের একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক। তার প্রথম সন্তান মেয়ে। এ মেয়েটি ভূমিষ্ঠ হবার পর দেড় বছরের মধ্যে তার থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। চিকিৎসার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা মেয়েটি এখন অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ২২ মাস আগে তার একটি ভাইয়ের জন্ম হয়, ১৭ মাস বয়সে যারও কিনা থ্যালাসেমিয়া শনাক্ত হয়। এছাড়া সে দাঁতের মাড়ি ও পায়ুপথে ক্ষতজনিত রোগে আক্রান্ত। এ দু সন্তানের চিকিৎসায় স্বল্প বেতনভুক শাহপরান যখন সর্বস্বান্ত ও ক্লান্ত, তখন জানা গেলো, তিনি নিজেই কিডনিতে পাথরজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। দ্রুত অপারেশন না করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ।

সরকারিভাবে শাহপরান দশ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন। স্থানীয় এমপি মহোদয় চিকিৎসাসংক্রান্ত কাগজপত্রসহ তার নিকট থেকে অনুদানের আবেদন নিয়েছেন এবং ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। অসহায় ও নিরূপায় শাহপরান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তাও চেয়েছেন। আমরা আশাবাদী, কোনো না কোনোটাতে তিনি কমণ্ডবেশি সাড়া পাবেনই।

আমরা মনে করি, হাজীগঞ্জের অসহায় শিক্ষক শাহপরানের প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে এবং সমাজের বিত্তবান-চিত্তবান যে কোনো মানুষেরই সামর্থ্যানুযায়ী সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের উদ্যোগে পুরো জেলার শিক্ষার্থীদের তথা অভিভাবকদের নিকট থেকে অনুদান সংগ্রহের কর্মসূচি হাতে নেয়া দরকার। শাহপরানের পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে তিনজনের অসুস্থতা সত্যিই উদ্বেগজনক, সবচে’ বড় কথা মর্মস্পর্শী। সংবেদনশীলতার সর্বোচ্চটুকু প্রয়োগ করে এ অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্যে আমরা ন্যূনতম সামর্থ্যবানদের প্রতিও অনুরোধ জানাচ্ছি। পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তা তাঁর অনন্ত করুণায় শাহপরানের পরিবারের অসুস্থ তিনজনকে দ্রুত সুস্থ হবার ব্যবস্থা করে দিন-এ প্রার্থনাও জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়