প্রকাশ : ২৬ মে ২০২২, ০০:০০
ডাকাতিয়ায় এমন ড্রেজিং কতোটা ফলপ্রসূ?
আমাদের দেশে নাব্যতা সঙ্কট নিরসনে নদীতে ড্রেজিং বলতে যা দেখা যায়, তার দৃশ্য অতি সাধারণ। নিয়োজিত ঠিকাদার ড্রেজার দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে মাটি, বালি ও পলি উত্তোলন করে নদীতে ফেলে দিচ্ছে কিংবা পাইপের সাহায্যে অন্যত্র স্থানান্তর করে বিক্রি করছে, নয়তো বাল্কহেড ভরাট করে নদীতেই বিক্রি করছে। এটা যে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত কাজ সেটা উপলব্ধি করার সক্ষমতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আছে। কিন্তু সেটা তারা বুঝে না কিংবা বুঝতে চায় না অর্থপূর্ণ কারণে। এর পেছনে উদ্দেশ্য তো রয়েছেই।
|আরো খবর
ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম স্ট্রাকচার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আনোয়ার হোসেনের একটি লেখা থেকে জানা যায়, নদী খনন করলে নদীর ইকোলজি বা বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন হয় বা নষ্ট হয়। এই নষ্ট হওয়াকে কম পর্যায়ে রেখে নদী খনন করা একটি কঠিন কাজ। দুটি অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করা যায়, যা বাংলাদেশে প্রয়োগ করা যেতে পারে। বেলজিয়ামের স্কেলড নদীর দূষণ রোধ ও নাব্যতা বৃদ্ধির জন্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্যে গেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. নীলস ডি পাউ সম্পৃক্ত হলেন। ইকোলজির অধ্যাপক হিসেবে আমরা এই প্রকল্প ফলো করি এবং বাস্তব জ্ঞান অর্জন করি। এখানে নদীকে আংশিক শুকিয়ে ফেলে পলি-কাদা তুলে ফেলা হয় এবং পলি-কাদা থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে দূষণ দূর করে কৃষি জমি ও গ্রীন হাউজে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ২০০০ সালের বন্যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া নদীগুলোকে ড্রেজিং করে নাব্যতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে বন্যার পানি দ্রুত নেমে যায়। পশ্চিমবঙ্গে উক্ত ড্রেজিংয়ের আগে নদীপাড়ের মানুষদের সম্পৃক্ত করা হয়। ড্রেজিং করা মাটি দিয়ে এলাকার হাজামজা গর্ত ও নিচু জমি ভরাট করা হয়। নদীর তলানির উপরাংশ আলাদাভাবে ড্রেজিং করে কৃষি জমিতে ব্যবহার করা হয়। ইকোলজির ক্ষতি কমাতে দুটি ক্ষেত্রেই থেমে থেমে আংশিকভাবে ড্রেজিং করা হয়েছে। অর্থাৎ ঘোলা পানি থিতিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত পরবর্তী অংশ ড্রেজিং করা হয়নি। কারণ, ঘোলা পানিতে মাছ ও জলজ প্রাণীর কানকুয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়।........বাংলাদেশের নদীগুলোকে রক্ষা এবং জলপথ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির জন্যে নদীর খনন তথা ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। সেই খনন প্রক্রিয়া ইলোলজি ও পরিবেশের যাতে ক্ষতি না করে, সেজন্যে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করা দরকার। পানি উন্নয়ন বোর্ড, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি বিভাগ ও বিআইডব্লিউটিএসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের বিশেষজ্ঞদের সাথে যৌথভাবে পরিকল্পনা ও প্রয়োগ কার্যব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। সে অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
গতকাল বুধবার চাঁদপুর কণ্ঠে ‘ডাকাতিয়ার ড্রেজিংকৃত বালিতে জলাধার ভরাটের হিড়িক’ শীর্ষক সংবাদ পড়ে মনে হয়েছে, কোনোরূপ সমন্বিত ব্যবস্থাপনা দূরে থাক, ন্যূনতম তদারকিতেও এ নদীর হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলা এলাকায় ড্রেজিং সম্পন্ন হচ্ছে না। জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীর নাব্যতা ধরে রাখা ও নৌপথ সচল রাখতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে তৎকালীন নৌপরিবহণ মন্ত্রী শাহজাহান খান হাজীগঞ্জে ড্রেজিং উদ্বোধন করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় নদী খননের বালি দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ব্যক্তিগত জলাধার ডোবা, পুকুর ইত্যাদি ভরাট করার অবাধ তৎপরতা। এতে দেশীয় মাছের আবাসস্থল ধ্বংস হওয়াসহ পরিবেশের জন্যে মারাত্মক হুমকি তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনসহ বিআইডব্লিউটিএ কিংবা অন্য কারো এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। কাজেই ডাকাতিয়া নদীর এমন ড্রেজিং কতোটুকু ফলপ্রসূ হবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি আসন (চাঁদপুর-৫)-এর এমপি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের করণীয় প্রত্যাশা করছি।