প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুর মহাশ্মশানে এটা কেমন উপদ্রব?
চাঁদপুর পৌর এলাকা ও সন্নিহিত এলাকা সমূহের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সৎকার বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্যে প্রাচীন একটি শ্মশান হচ্ছে চাঁদপুর মহাশ্মশান। চাঁদপুর শহরের নূতনবাজার এলাকার পূর্ব-দক্ষিণে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে চার একর জায়গা নিয়ে এই শ্মশানটি অবস্থিত। এটি ইচলী গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আঃ মালেক ভূঁইয়া সড়কের পাশে অবস্থিত। এই শ্মশানের ভেতরে তিনটি মন্দির অবস্থিত। মন্দিরগুলো হচ্ছে : কালী মন্দির, শিব মন্দির ও ত্রিনাথ ঠাকুরের মন্দির। এসব মন্দিরে ৬জন ধার্মিক ব্যক্তি মহাশ্মশান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োজিত আছেন, যারা দিন-রাতে পূজা করে রাতে তাদের বাসায় চলে যান। আর একজন নৈশ প্রহরী আছেন, যাকে শ্মশানের ভেতরে সপরিবারে থাকতে দেয়া হয়েছে। শ্মশানের বিরাট এলাকাটির চারপাশে সীমানা বেষ্টনী আছে। যে কেউ চাইলে যখন তখন শ্মশানের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু একদল বিপথগামী কিশোর-তরুণ-যুবক সংঘবদ্ধভাবে গত ৭/৮ মাস যাবৎ শ্মশানের গেটে আঘাত করে সেই গেট খুলিয়ে জোরপূর্বক ভেতরে ঢুকে যায়। এদেরকে মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন বাধা দিলে তাদেরকে মারধর করতে তেড়ে আসে, এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বিষয়টি মহাশ্মশান কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে পুলিশকে জানিয়েছে।
|আরো খবর
এই বিপথগামী তরুণ-কিশোর-যুবক মূলত মাদক সেবনের জন্যে মহাশ্মশানে ঢুকে মন্দিরের দ্বিতীয় তলা কিংবা ছাদে অবস্থান নেয়। এরা রাতের বেলা নৈশ প্রহরীকে হটিয়ে নারী নিয়ে ঢোকার অভিযোগও রয়েছে। এমনকি রাতে দেশীয় অস্ত্রসহ সদলবলে ঢুকে অপকর্ম সংঘটনের জন্যে আবার সদলবলে বেরিয়ে যায়। চাঁদপুর মহাশ্মশান কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ আব্দুর রশিদের নির্দেশে চাঁদপুর নূতনবাজার ফাঁড়ি পুলিশের এসআই ইসমাইল হোসেন গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই ২০২১) দুপুরে মহাশ্মশানে ঝটিকা অভিযান চালায় এবং ৭জন তরুণ মাদকসেবীকে আটক করেন। এদের অধিকাংশ স্থানীয় প্রভাবশালী দুটি বংশের সন্তান এবং অন্যরা শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, মাদক সেবনকারীরা তাদের গোপন আস্তানা হিসেবে মহাশ্মশানের মন্দিরগুলোকে ব্যবহার করে আসছে এবং অন্যান্য অপকর্ম সম্পাদনের জন্যে পরিকল্পনা কেন্দ্র বানিয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে উক্ত অভিযানটি চালানো হয়। বস্তুত এ অভিযানের মধ্য দিয়ে অভিযোগটির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে।
আমরা মনে করি, যে কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানই পবিত্র জায়গা। সেখানে অপকর্ম সাধিত হওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ কাজে বাধা দেয়া বিবেকবান মানুষ মাত্রেরই কর্তব্যের আওতায় পড়ে। পুলিশ কিছুটা দেরিতে হলেও চাঁদপুর মহাশ্মশানে মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্ম সাধনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে, যেটা সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে করি। এসব অপকর্মকারী বিভিন্ন তদবির ও আইনের ফাঁক গলে আটকাবস্থা থেকে মুক্তি পাবে এবং আবারো শ্মশানে উপদ্রব চালাবে বলে ধারণা করা যায়। সেজন্যে পুলিশকে তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যথায় শ্মশানে পূর্বাবস্থা বিরাজ করতে পারে, যেটি কারো জন্যে মোটেও কাম্য নয়।