প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

আমাদের দেশে কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষের সাঁড়াশি অভিযান সাধারণত ধারাবাহিক ও দীর্ঘমেয়াদী হয় না। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য চাপের মুখে এবং হুমকিতে এমন অভিযান থেমে যায়। অধিকাংশ অভিযানই প্রতীকী হয়ে দাঁড়ায়। আবার চাপ ও হুমকি ছাড়াও অনেক অভিযান জনবলের অভাবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিশ্চিত করতে না পারার কারণে থমকে যায়, বন্ধ হয়ে যায়। এতে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং অপপ্রচার জোরালো হয়।
আমাদের দেশের মৎস্য অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ আরো কিছু অধিদপ্তর বা বিভাগকে ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারে’র মতো ভাবা হয়। কারণ, তাদের হাতে কঠোর আইন আছে এবং সর্দারের মতো রুদ্ররূপে ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ আছে। কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় উপকরণ ও চাহিদামাফিক জনবল নেই। সেজন্যে তারা আইনানুযায়ী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারে না।
এমন বাস্তবতায় তথা নানা সীমাবদ্ধতা ও সঙ্কটের মধ্যেও চাঁদপুরে পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মাঝে এমন কিছু সাঁড়াশি অভিযান চালায়, যাতে চমকে উঠতে হয়। যেমন, গত ৮ ডিসেম্বর বুধবার চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের সীমিত জনবল নিয়েই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুলিশের সহযোগিতায় চাঁদপুর সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইটভাটায় অভিযান চালায় এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে। এ ইটভাটাগুলো হচ্ছে : চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন পশ্চিম সকদী গ্রামে অবস্থিত মেসার্স এবিএম ব্রিকস্, নানুপুরে অবস্থিত মেসার্স নানুপুর ব্রিকস্, ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন মুন্সিরহাটে অবস্থিত মেসার্স মুন্সীরহাট ব্রিকস্, মেসার্স মামুন এন্ড ব্রাদার্স ব্রিকস্ ও নূরপুরে অবস্থিত মেসার্স উটতলী নূরপুর ব্রিকস্। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে ইটভাটা মালিকদের বৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করার জন্যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকার কথা জানানো হয়। নিঃসন্দেহে এমন আশ^াস প্রত্যাশিত।
সত্যি কথা বলতে কি, যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে আভিযানিক তৎপরতা ঘরের শত্রু বিভীষণের কারণেও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং থেমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বড় ধরনের অভিযানের অপেক্ষা বা প্রস্তুতির কথা বলে ছোটখাট অভিযান চালাতে বিলম্ব, গড়িমসি, এমনকি অপারগতাও প্রকাশ করা হয়। আমরা মনে করি, শুধু ইটভাটার বিরুদ্ধে বড় অভিযান নয়, পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর যে কোনো কিছু প্রতিরোধে যদি ছোট অভিযানও চালাতে হয়, তাতেও যাতে পরিবেশ অধিদপ্তর পিছপা না হয় কিংবা কোনো অজুহাত না খোঁজে। আমরা চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের বর্তমান সহকারী পরিচালক নাজিম হোসেন শেখসহ তার সকল সহকর্মীর অব্যাহত সক্রিয় তৎপরতা প্রত্যাশা করছি।