আহারে জীবন!

ছয় বছর ধরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাসরত প্রতীক জোশী ছিলেন এক পরিশ্রমী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। স্বপ্ন দেখতেন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে একটি সুখী, নিরাপদ ও ভালোবাসায় ভরা জীবন গড়ার। এই স্বপ্নের পেছনে দীর্ঘ সময় ধরে সংগ্রাম করেছেন কাগজপত্রের, প্রক্রিয়ার, আর ধৈর্যের লড়াইয়ে।

অবশেষে বহু প্রতীক্ষার পর সেই স্বপ্ন যখন বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে, তখনই তা থেমে গেল এক নির্মম দুর্ঘটনায়। দুই দিন আগে প্রতীকের স্ত্রী, ডা. কোমি, ভারতের একটি সরকারি হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তিন সন্তানকে নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে তারা পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন নতুন জীবনের পথে।

তারা এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১-এ চড়েন। বিমানে বসেই একসাথে একটি হাসিমাখা সেলফি তুলে আত্মীয়স্বজনদের পাঠান। মেসেজে লেখেন— "এই শুরু আমাদের নতুন জীবনের!" ছবিতে ফুটে উঠেছিল আশা, উত্তেজনা আর অজস্র ভালোবাসা।

কিন্তু সে ছবি এখন এক বেদনার প্রতীক। বিমানটি মাঝ আকাশেই দুর্ঘটনায় পড়ে। প্রতীক, তার স্ত্রী কোমি ও তাদের তিনটি নিষ্পাপ সন্তান কেউই আর বেঁচে ফেরেননি।

মাত্র কয়েক সেকেন্ডে সব শেষ হয়ে গেল। একটি পরিবারের সংগ্রাম, স্বপ্ন আর ভালোবাসা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল আকাশেই। জীবনের যে কতটা অনিশ্চয়তা—এই দুর্ঘটনাই যেন আমাদের নতুন করে তা স্মরণ করিয়ে দিল।

এই ঘটনা শুধু একটি পরিবার হারিয়ে যাওয়া নয়, বরং সমগ্র মানবতার জন্য এক অমূল্য বার্তা—জীবন খুবই অনির্ধারিত। আমরা যাদের ভালোবাসি, যাদের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই, তাদের জন্য সময় বের করা উচিত এখনই। আগামী মুহূর্তে কী আছে, তা আমরা কেউ জানি না।

পরিবার, ভালোবাসা, সহানুভূতি—এই তিনটিই জীবনের মূল রঙ। প্রতীক জোশীর পরিবারের স্বপ্ন আজ আমাদের চোখে জল এনে দিলেও, হয়তো তা আমাদের হৃদয়ে নতুন করে ভালোবাসার বীজ বপন করে দেবে।

আমরা দোয়া করি এই পরিবারের আত্মারা শান্তিতে থাকুক। আহারে জীবন! মাঝ আকাশেই থেমে গেল একটি সম্পূর্ণ জীবনের গল্প…

ডিসিকে /এমজেডএইচ