শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০২

এমন মৃত্যু ঠেকাতে দরকার পরিপূর্ণ সতর্কতা

অনলাইন ডেস্ক
এমন মৃত্যু ঠেকাতে দরকার পরিপূর্ণ সতর্কতা

ফরিদগঞ্জে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের রড ওঠানোর সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মো. মমিন খান (৪০) নামের এ নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। বুধবার (১৯ নভেম্বর ২০২৫) সকালে ফরিদগঞ্জ পৌর সদর এলাকার কালিরবাজার চৌরাস্তা নামক স্থানে এই ঘটনা ঘটে। পরে অচেতন অবস্থায় তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক মো. মমিন খানকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি একই উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চররাঘবরায় গ্রামের মাকসুদ খানের ছেলে। মৃতের বাবা জানান, আমার ছেলে প্রতিদিনের ন্যায় সকালে কাজে গিয়ে ছিলো ঘটনাস্থলে। সেখানে ছাদের নিচ থেকে রড ওঠানোর সময় পাশ দিয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে আমার ছেলের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে এসেছি। তিনি আরও বলেন, ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় কাউকে অভিযুক্ত করছি না, তবে তার স্ত্রী ও চার সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে টেনশন হচ্ছে। ভবনের কাজের ঠিকাদার নজরুল ইসলাম জানান, গত দুবছর ধরে এই ভবনের কাজ চলছে। আমরা সকল কাজই সাবধানে করছিলাম। আজকে মমিন খান অসাবধানতাবশত ভুল স্থান দিয়ে রড ওপরে ওঠাতে গিয়ে নিজে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তার পরিবার যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমি এর সাথে একমত। পাটওয়ারী প্লাজার মালিক পক্ষের একজন ফরহাদ পাটওয়ারী জানান, আমাদের সাততলা ভবনের ওপরে উঠানোর সকল কিছুই পশ্চিম পাশ দিয়ে করা হয়। মৃত মমিন খান নিজেই সর্বদা এই বিষয়ে সতর্ক ছিলেন। কিন্তু আজ নিজেই দুর্ঘটনার শিকার হন।

নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের রড ওপরে ওঠাতে গিয়ে কর্মরত শ্রমিকের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। ঠিকাদার ও ভবন মালিকের পরিপূর্ণ সতর্কতার অভাবে এমনটি ঘটছে, যেটা নিয়ে বিতর্ক করার কিছু নেই। গ্রামে নিশ্চয়ই ইউনিয়ন পরিষদ, আর শহরে পৌরসভা থেকে যে কোনো ভবনের প্ল্যান পাস করাতে হয়। যারা এই প্ল্যান পাস করেন, তারা সাধারণত ভবন নির্মাণস্থলে যান না। যেতে চাইলেও ভবন নির্মাণের উদ্যোক্তা বা নিয়োজিত ঠিকাদার বা অন্য কেউ ঘুষ দিয়ে সে যাওয়াটা ঠেকান। প্ল্যান পাস যারা করেন, তারা সরজমিন পরিদর্শনে গেলে যদি সন্নিহিত স্থানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পল্লী বিদ্যুতের তার দেখেন, তাহলে নিশ্চয়ই পূর্ব সতর্কতার বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করবেন। তারা বিদ্যুৎ লাইন সরিয়ে নেওয়ার কিংবা নিজ খরচে কোটেড তার লাগাতে পরামর্শ দেবেন। এ পরামর্শ মানতে গেলে ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের বাড়তি খরচের প্রশ্ন এসে যায়। এ খরচ এড়াতেই তারা গেঁাজামিলপূর্ণ সতর্কতা কিংবা আংশিক সতর্কতা অবলম্বন করে। যেমনটি ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার কালিরবাজার চৌরাস্তা নামক স্থানে করা হয়েছে, যে কারণে গত বুধবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভবনের মালিক ও ঠিকাদার আত্মপক্ষ সমর্থনে যতোটুকু বলেছেন, সেটা যথেষ্ট নয়। সে কারণে বিদ্যুস্পৃষ্টে নিহত মমিন খানের পরিবারকে কম-বেশি ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি যৌক্তিকতাপূর্ণ, যেটি তারা এড়াতে পারেন না। এ ক্ষতিপূরণ আদায়ে সচেতন ও সংবেদনশীল কাউকে না কাউকে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখার ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। আর নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে রড ওঠাতে গিয়ে যাতে আর কোনো মৃত্যু না ঘটে সে ব্যাপরে ভবন নির্মাণের উদ্যোক্তা ও নিয়োজিত ঠিকাদারদের পরিপূর্ণ সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদে তাদের প্রতি নির্দেশনা জারির জন্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়