প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০০:৪৫
ফরিদগঞ্জে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ঝাঁজরা হলো চা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির দেহ
'ডাকাত ডাকাত' চিৎকার করেও শেষ রক্ষা হলো না রুহুল আমিনের

ছবি :ফরিদগঞ্জে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত রুহুল আমিন
করোনাকালে ঢাকা থেকে বাড়ি চলে আসেন। নিজের পরিবারের আর্থিক সংস্থানের জন্যে শুরু করেন করোনাকালীন সুরক্ষা উপকরণ মাস্কসহ অন্যান্য উপকরণ বিক্রি। প্রথমে ঢাকা থেকে ক্রয় করে বিক্রি, পরবর্তী সময়ে উদ্যোক্তা হিসেবে মাস্ক তৈরি করে ফরিদগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করতেন। এতে তার সংসারে সুখের হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু করোনা-পরবর্তী সময়ে এসব সামগ্রীর বিক্রির হার হ্রাস পেলে গত ক’বছর বিভিন্ন কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করেন। সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাসে সিটি গ্রুপের বেঙ্গল টি’র বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। সেই কোম্পানির কাজ করতে গিয়ে দুর্বৃত্তের গুলিতে নির্মম খুনের শিকার হন রুহুল আমিন (৩৭)। গত মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর ২০২৫) রাতে ফরিদগঞ্জের রূপসা উত্তর ইউনিয়নের রুস্তমপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত রুহুল আমিন ফরিদগঞ্জ পৌরসভা এলাকার পূর্ব বড়ালী গ্রামের মিজি বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মাওলানা মাহমুদুল হাসানের ছেলে। তিনি বায়েজিদ হাসান নামে ৭ বছরের এবং রোয়াইফ নামে ৫ বছর বয়সী দু পুত্র সন্তানের জনক।
|আরো খবর
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রফিকুল ইসলাম জানান, দু যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে আরেক মোটরসাইকেল আরোহীকে ধাওয়া করে। এ সময় ওই ব্যক্তি ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার করেন। একটু পর স্থানীয় সমিতির পুলের কাছে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন মোটরসাইকেল আরোহী রুহুল আমিনকে।
সোহাগ নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দয়াগাজী বাড়ি মসজিদের সামনে একটি মোটরসাইকেলে মুখোশধারী দু আরোহী অপর একটি মোটরসাইকেলের আরোহীকে ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার দিয়ে আমার সামনে এসে পড়ে। এ সময় দুজন আরোহী মোটরসাইকেল থেকে অপর মোটরসাইকেল আরোহীকে গুলি করে নিজেরা ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা কাউসার আহমেদসহ অনেকে বলেন, গুলির শব্দ শুনে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন মোটরসাইকেলসহ সড়কের ওপর একজনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে আছে।
নিহত ব্যক্তির চাচা মো. আলী হোসেন মিজি বলেন, সিটি গ্রুপের বেঙ্গল কোম্পানির চা-পাতা বিক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন রুহুল আমিন। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকালেও মোটরসাইকেলযোগে কোম্পানির পণ্য নিয়ে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বের হন। রাতে মোবাইলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ভাতিজার মরদেহ শনাক্ত করি।
ছবি :ফরিদগঞ্জে দুর্বৃত্তদের গুলিতে সন্তানের মৃত্যুতে পিতার আহাজারি
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা যায় হত্যাকাণ্ডের শিকার রুহুল আমিনের বাবা, চাচাসহ স্বজনদের। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ বিচার দাবি করছেন তারা।
রুহুল আমিনের বাবা মাহমুদুল হাসান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাসা থেকে যাওয়ার সময়ে রুহুল আমিন আমার জন্যে ওষুধ নিয়ে আসবে এবং তার ছোট ছেলের রোয়াইফের জন্যে খেলনা নিয়ে আসার কথা বলেছিল। কিন্তু ছেলেতো এলো, তবে রক্তাক্ত নিথর দেহ হয়ে। আমার ছেলেতো কোনো অপরাধ করেনি। তাহলে কেন তাকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে বুক ঝাঁজরা করে দিলো? আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
রুহুল আমিনের সদ্য বিধবা স্ত্রী সোনিয়া বেগম জানান, এভাবে আমার স্বামীকে হারাবো ভাবতে পারছি না। এখন আমার কী হবে? অবুঝ দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হবে? এভাবে যেন কোনো সন্তানকে তার বাবাকে হারাতে না হয়।
এদিকে ফরিদগঞ্জ বিক্রয় প্রতিনিধিদের সংগঠনের সভাপতি শাহাদাত হোসেন টুটুল ও সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা এখন আতঙ্কে রয়েছি। আমাদের সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করতে হয়। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে আমরা ছুটে গিয়েছি। সংবাদ পেয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার আব্দুর রকিব, পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্যে কাজ করছে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ছবি : ফরিদগঞ্জে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত রুহুল আমিন জানাজার নামাজে বক্তব্য রাখছেন লায়ন মো. হারুনুর রশিদ
এদিকে রুহুল আমিনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার বাদ আসর পূর্ব বড়ালী ইব্রাহিমিয়া নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ খুনিদের চিহ্নিত করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে।
ডিসিকে / এমজেডএইচ








