বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   সৌদি প্রবাসীদের অনলাইন প্রতারণা থেকে সতর্ক করলো বাংলাদেশ দূতাবাস
  •   বরিশালে কৃষক দলের হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির কর্মসূচি পণ্ড
  •   শ্রীনগরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন
  •   গুমের ভয়াবহ চিত্র: তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য
  •   চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লেখা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তা

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৩

বিজয়ের ৫৩ বছর পরে আমাদের প্রত্যাশা

নুসরাত জাহান আয়েশা
বিজয়ের ৫৩ বছর পরে আমাদের প্রত্যাশা

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। তবে একদিনে আসেনি এই বিজয়। বহু সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে এবং এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই মাসের ১৬ তারিখ আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। পৃথিবীর প্রায় সকল স্বাধীন দেশেরই স্বাধীনতা দিবস থাকলেও অনেক দেশেরই বিজয় দিবস নেই। বাঙালি জাতি বছরের পর বছর স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রাম করেছে।

সেই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ শাসন-শোষণ, অত্যাচার-নির্যাতন থেকে মুক্তির পর পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনই এক পর্যায়ে এসে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে এসে এই স্বাধীনতা সংগ্রাম স্ফুলিঙ্গের মতো রূপ নেয়। স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে হানাদার বাহিনী সেই ২৫ মার্চ রাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ বাঙালিদের উপর। যার ফলে বাংলার সর্বস্তরের জনগণ রুখে দাঁড়ায় পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর এই ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের দ্বার প্রান্তে এসে পৌছে।

আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এক পর্যায়ে বাঙালির বীরত্বের কাছে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয়। বাঙালির মরণপণ যুদ্ধের কাছে টিকতে না পেরে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এই প্রেক্ষাপটে বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বিজয়ের ৫৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে। ৫৪ বছর পর, এই দিনটি শুধুমাত্র এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত নয় বরং একটি নতুন দিগন্তের সূচনা। এই দিনটি জাতির নিকট প্রত্যাশার প্রতিফলন হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৭১ সালে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ যে বিজয় অর্জন করেছিল, সে স্বপ্ন বাঙালির হৃদয়ে চিরকাল অমলিন হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ও মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময়ে বাংলার জনগণ এক বুক স্বপ্ন দেখেছিলেন। তারা চেয়েছিলেন একটি গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর বাংলাদেশ। যেখানে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, থাকবে না কোনো ভেদাভেদ। সকল নাগরিক তার মৌলিক অধিকারসমূহ ভোগ করতে পারবে।

ঠিক একই রকম স্বপ্ন নিয়ে ২০২৪-এ এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এটিও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাইরে নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আজও আমাদের অনেক স্বপ্নই অধরা। এখন, ৫৩ বছর পর, বাংলাদেশের কাছে আমাদের প্রত্যাশা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের জনগণ এমন এক সমাজ চায় যেখানে থাকবে না কোনো প্রকার বৈষম্য। যেখানে প্রতিষ্ঠিত হবে সুশাসন ও ন্যায়বিচার।

আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই যেখানে আবাসন সংকট, বেকার সমস্যা, মুদ্রাস্ফীতি, চোরাচালান, মাদকসহ সকল প্রকার অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দূরীভূত হোক। গ্রাম-গঞ্জে, শহর-বন্দরে শান্তির দূতাবাস সৃষ্টি হোক। মানুষ চলাচল করুক স্বাধীনভাবে, মত প্রকাশ করুক নির্ভয়ে, উঠতি বয়সী মেয়েরা স্কুল-কলেজে যাতায়াত করুক নির্ভয়ে-নির্ঝঞ্ঝাটে, শহরে-গ্রামে সর্বত্র বখাটেপনা নির্মূল হোক, নারী নির্যাতন দূর হোক, মাদকের ছোবল থেকে ছেলে-মেয়েরা দূরে থাকুক। আমাদের কোনো ভাইবোন যেন বেকার সমস্যার জন্যে তাদের মূল্যবান জীবন নষ্ট না করে এজন্যে নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার। একই সাথে শিক্ষার মানোন্নয়ন করাও জরুরি।

অতএব, বিজয়ের ৫৪ বছর আমাদেরকে একটি শক্তিশালী জাতি হওয়ার পথ দেখিয়েছে। কিন্তু এ যাত্রার মূল লক্ষ্য অর্জনে একে অন্যকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে একটি উন্নত, দারিদ্র্যমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব। বিজয়ের এ আদর্শকে ধারণ করে, দেশবাসী একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে আমরা গড়তে পারি এক নতুন বাংলাদেশ, যা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্যে এক শক্তিশালী ভিত্তি।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট; সূত্র : মানবকণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়