প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:২৯
এতোটা সাহস ওরা কোথায় পায়?
‘তাকওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ \ ৫ হাজার টাকা জরিমানা’ শিরোনামে গতকাল চঁাদপুর কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সেটি পড়ে পাঠকমাত্রকেই বিস্মিত হতে হয়েছে। কেননা এ সংবাদটি পড়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিককে অনেক ক্ষমতাধরই মনে হয়েছে। তারা তাদের অপকর্মের প্রতিবাদকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়কারীকে মেরে মামলার শিকার হয়েও জামিন লাভ করেছে এবং পূর্বের ন্যায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানো শুরু করেছে। এতে টনক নড়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। তারা অতিরিক্ত সাহস প্রদর্শনকারী এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং সে চ্যালেঞ্জে সফলতা খুঁজে পেয়ে আইনের খড়গে ওদের কুপোকাত করে। এখন দেখার বিষয়, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তায় ওরা কতোটা মাথা তুলে দঁাড়ায়।
উপরোল্লিখিত সংবাদটি পড়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসক চঁাদপুর শহরের বেশ ক'টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেন। সেমতে গত ১৪ নভেম্বর বিকেলে চঁাদপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) আল এমরান খানের নেতৃত্বে কাজী নজরুল ইসলাম সড়কে অবস্থিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
এ সময় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চঁাদপুর জেনারেল হাসপাতালের সম্মুখে কালেক্টরেট মসজিদের পাশে অবস্থিত নিউ তাকওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সকল কাগজপত্র মেয়াদোত্তীর্ণ থাকায় এ ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিকে নগদ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায় করা হয়। এরপর এটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন পূর্বে এই নিউ তাকওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষ ও দালালদের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী রাকিব ভূঁইয়ার উপর হামলা করে তাকে আহত করা হয়। তাৎক্ষণিক ঘটনা শুনে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে এসে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে এ ঘটনা শুনে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিক আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চঁাদপুর জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যান। এ ঘটনার পর আহত শিক্ষার্থী বাদী হয়ে উক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও দালালসহ কয়েকজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করলে সেই মামলায় জামিনে এসে পুনরায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি চালু করে মালিক পক্ষ। আর উক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির বিরুদ্ধে আবারো অভিযোগ উঠতে থাকে।
আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মব জাস্টিসে না গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে নিউ তাকওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে যে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটা যথার্থ বলে মনে করি। তারা এখন তাদের প্রতিবাদী চেতনাকে রুখে দেয়ার সাহস প্রদর্শনকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজপত্রের নবায়নে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কর্তাব্যক্তি সিভিল সার্জন যাতে কঠোর থাকেন, সে ব্যাপারে সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ রক্ষার অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষ মামলায় সহজে জামিন পাওয়ার মতো সিভিল সার্জন অফিস থেকে সহজে তাদের কাগজপত্রের বৈধতা পেয়ে যায়, তাহলে তারা আবার ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি খুলে দালাল নিয়োগ করে হাসপাতাল এলাকায় পূর্বের ন্যায় নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রয়াস যে চালাবে সেটাতে সন্দেহ নেই।
বলা দরকার, ‘তাকওয়া’ শব্দটির অর্থ আল্লাহ-ভীতি। এই নামে ডায়াগনস্টিক সেন্টার দিয়ে মালিক পক্ষ যদি সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী বাগিয়ে নেয়ার মতো অনিয়মের সাথে সর্বদা সংশ্লিষ্ট থাকে, তাহলে কি বলা যায়, তাদের আল্লাহ-ভীতি আছে? আমাদের মতে, আল্লাহকে ভয় করেন এমন কোনো লোক ন্যূনতম অন্যায় করতে পারেন না। অতএব, মোবাইল কোর্ট তথা ভ্রাম্যমাণ আদালতে শায়েস্তা হওয়ার পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ আদালত বিবেকেও শায়েস্তা হবার মানসিকতায় ভুগতে হবে তাকওয়ার মালিক পক্ষকে। নতুবা তাদের মাঝে পরিবর্তন আসবে না, তারা বারবার প্রতিবাদকারীর ওপর হামলে পড়ার সাহস দেখাবে। কথা হলো, তারা এতো সাহস পায় কোথায়? তাদের এই সাহসের উৎস সম্পর্কে জানতে নিতে হবে পদক্ষেপ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি।