শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:১৭

বৃত্তাতিক্রান্ত কক্ষপথ

বিমল কান্তি দাশ
বৃত্তাতিক্রান্ত কক্ষপথ

এক পলকে সমগ্র বিশ্বে ঘটমান ঘটনা প্রবাহ আমাদেরকে প্রত্যক্ষ করানোর যন্ত্রটি হলো ‘টেলিভিশন’। এর আবিষ্কারক হলেন ‘জন বেয়ার্ড’--একজন ইলেকট্রো মেকানিক্যাল প্রকৌশলী। এই যন্ত্রটি কিন্তু একই সাথে ‘দেখা ও শোনার’ অর্থাৎ অডিও ভিজ্যুয়ালভাবে কার্যকর। ইতালীয় বিজ্ঞানী গুলিয়েলমো মার্কনী এবং বাংলাদেশি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু সমসাময়িক সময়েই বেতার বার্তা যা ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ চুম্বক তরঙ্গ রূপে বেতার বার্তার গ্রাহক এবং প্রেরক যন্ত্র হিসেবে (ব্যবহৃত হয়) আবিষ্কার করেছেন। তবে মার্কনী একটি অতিরিক্ত ব্যবহারিক রেডিও-গ্রাফ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন বলেই মার্কনী রেডিও-এর আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃত হন।

আবার আমেরিকান বিজ্ঞানী ‘মার্টিন কুপার’ ঐ তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করেই অতি সহজে পরিবহণযোগ্য যোগাযোগ মাধ্যম মোবাইল ফোন উদ্ভাবন করেন ১৯৭৩ সালে। ‘অ্যালান টুরিং’ হলেন আধুনিক কম্পিউটারের জনক। ১৯০৫ সালে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের পদার্থ ভিত্তিক ভর ও শক্তির মধ্যে নিহিত ঊ=সপ২ সম্পর্কের ভিত্তিতে আধুনিক কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয়। এ গুলোই হলো “গরৎধবষব ড়ভ সড়ফরৎঁ ধফাবহঃঁৎব” পরবর্তী কালে ১৭ শতকে ‘গটফ্রিড ঊইলহুম’ পূর্ণাঙ্গ গাণিতিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। এতোসব আবিষ্কার মানব সভ্যতায় যেমনি ত্বরণ সৃষ্টি করেছে, তেমনি সমহারে জড়তাও এনে দিয়েছে। যা এই বাংলায় আবহমানকাল থেকে চলতে থাকা সামাজিক-অর্থনৈতিক-পারিবারিক অবয়বে একটা উদ্ভট পরিবর্তন এনে দিয়েছে। তাতে সামাজিক এবং পারিবারিক জীবনে যুক্ত হয়েছে এক নতুন মাত্রা। যেখানে পারস্পরিক আন্তরিকতা বিসর্জিত।

জ্ঞানশক্তি এবং পারস্পরিক প্রেম-শক্তি পৃথিবীতে অনন্য মানবীয় অলংকার।

মধ্যযুগীয় একজন কবির ভাষায় : মিথ্যাতো শুনিনি ভাই, হৃদয়ের চাইতে বড় কোন কাবা-মন্দির তো নাই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় বিশ্বকবির খেদোক্তি ছিল, ‘সাড়ে সাত কোটি সন্তানের ও মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।’ আমাদের জাতীয় কবির উক্তি : ‘অসহায় জাতি আজি মরিচে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ।’ আবার রূপসী বাংলাপ্রেমিক কবি জীবনানন্দের অনুরণন, ‘আমি এক বার দেখি বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ।’ সেই বাংলা আজি অপরাজেয়। ধরিত্রীর জল-স্থল-অন্তরীক্ষ সদর্পে-সগৌরবে জয় করে ফেলেছে।

এই উপমহাদেশের কতেক রাজ্য শাসক দু-ধারি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মোসাহেবের চাটুকারিতায় ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। তন্মধ্যে (১) স্বাধীন বাংলাদেশের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। তার সভাসদস্যগণের ৯০% ছিলেন দুর্নীতিবাজ। (২) আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুর অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন। কিন্তু কখনো স্ব-কপোলকল্পিত সিদ্ধান্ত নিতেন না। তাঁর সভাসদ উজির-নাজির এবং আমির-ওমরাহগনের তৈলাক্ত জ্বি হুজুন, জ্বি-হুজুর বেলেল্লাপনা থেকে দূরেই থাকতেন। একান্তই ছদ্মবেশে চলতে চলতে পথে ঘাটে দেখা পাওয়া পাগল এবং মুশাফিরদের সাথে মন খুলে আলাপ করতে করতেই সমস্যার সমাধান পেয়ে যেতেন। আব্বাসীয় খলিফাগণ শুধু ইতিহাসের পাতায় এবং যুগ যুগ ধরে মানব অন্তরেও ঠাঁই করে নিয়েছেন। (৩) ভারত সম্রাট আকবরের রাজসভার প্রধান তেলবাজ ছিলেন ‘বীরবল।’ (৪) নদীয়ার মহারাজ কৃষ্ণ চন্দ্রের সভাসদগণের মধ্যে কৌতুকবাজ এবং তৈলবাজ ছিলেন গোপাল ভাঁড় ইত্যাদি।

একদা বাগদাদ কেন্দ্রিক উমাইয়া বংশের রাষ্ট্র পরিচালনার কুৎসিত সংকীর্ণতাকে উচ্ছেদ করে আব্বাসীয় বংশের সুশাসনের রেশ ধরে আব্রাহাম লিংকন সংজ্ঞায়িত গণতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল। যাহা বিশ্বে বহুজাতিক রাষ্ট্রের সূচনা চিহ্নিত করে। এই শাসন ব্যবস্থা অবশ্য অবশ্যই অনুকরণীয় ছিলো, বিশেষ করে পাক-ভারত উপমহাদেশের সার্বিক মঙ্গলের স্বার্থে। ক্ষমতায় আরোহন করা কোনো শাসকই স্বাভাবিক গতিতে ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। এই কুপ্রবৃত্তি এদেশে সৃষ্টি করেছিল 'আয়নাঘর' বা হাওয়া ভবন। যাতে সৃষ্টি হয়েছিল ‘গণ আন্দোলন’ এবং ছাত্রদের কোটা আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান। যার ফলে এদেশে সৃষ্টি হয়েছে নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুছের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার এক গণমনোনীত সরকার। যেখানে প্রতক্ষণেই বিচ্ছুরিত হচ্ছে অযাচিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এবং মতের সমাহার, যা গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা বিরোধী নবগঠিত সরকারের প্রথম কাজের ধাপ ঘোষিত হয়েছে দেশের সার্বিক সংস্কার। এদেশে প্রচলিত প্রতিহিংসার রাজনীতি সাময়িক ভাবে স্থগিত রেখে দেশের উন্নয়নের রাজনীতিতে মনোনিবেশের সংস্কার করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। এতে দেশ এবং জাতি প্রভূত উপকৃত হবে। কারণ স্রষ্টার বিধানেই দুর্নীতিবাজ সরকারের অপকর্মই তাকে তৃণসম দহন করবে এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। এদেশে শাসন করা সকল সরকারই উন্নয়ন করেছে, যা সর্বমাঙ্গলিক নয়। এ জন্যেই সৃষ্টি হয়েছে এবং চলছে মনান্তর মতান্তর এবং ক্ষতান্তর।

বিধাতা যেন মানব মনের শুভ সংস্কার এবং ক্ষমতাধরদের অযাচিত ক্ষুণ্নিবৃত্তি করে দেন, এতেই দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।

বিমল কান্তি দাশ : কবি ও প্রবন্ধকার; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়