প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:২২
হাজীগঞ্জে সামাজিক সম্প্রীতি সমাবেশ
পূজা মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তার ঘাটতি থাকবে না : জেলা প্রশাসক
শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনের জন্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে : পুলিশ সুপার
হাজীগঞ্জে সামাজিক সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। এ সময় তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, পূজা মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি থাকবে না। শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকারিভাবে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি পূজা মণ্ডপ কমিটি, স্বেচ্ছাসেবক, রাজনৈতিক দল, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় কমিউনিটির সার্বিক সহযোগিতা থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা আমাদের নিশ্চিত করেছেন। আমরা সবাই নীতি কথা বলি। কিন্তু আমাদের কাজে সেই নীতি কথার প্রতিফলন ঘটে না। তবে আমি বলতে চাই, যারা দুষ্কর্ম ও অপকর্মে জড়িত, তারা কোনো ধর্মের নয়। যারা এসব কাজে জড়িত থাকে বা থাকবে আমরা কাউকে ছাড় দিবো না। তিনি আরো বলেন, অপরাধ করে কেউ কোনো দিন পার পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না। সরকার কাউকে ছাড় দেয়নি। কারণ, রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ নেই। কেউ বিরূপ মন্তব্য করলে আপনার-আমার প্রতিবাদ করার অধিকার আছে। তবে তা হতে হবে শান্তিপূর্ণ। আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। গণমাধ্যমকর্মী ও আলেম সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেলা প্রশাসক বলেন, এ পর্যন্ত দেশে যত ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম সংঘটিত হয়েছে, তার বেশিরভাগ গুজব ও মিথ্যার ওপর ভিত্তি করেই হয়েছে। অনেকে গুজবে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। তাই গুজব প্রতিরোধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আপনাদের ভূমিকা রাখতে হবে। স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, টিম বেশি হলে মিস ম্যানেজমেন্ট হতে পারে। তাই যেসব দল ও যারা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করবেন, তারা সমন্বয় করে নিবেন। কারণ, একজন বা এক দলের পক্ষে ২৪ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। সমন্বয় করে ২৪ ঘন্টাকে ভাগ করে দায়িত্ব পালন করবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনের জন্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক আনসার ও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ, মোবাইল টিম, ডিবি ও র্যাব, সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এই সম্প্রীতি সমাবেশ শুধুমাত্র পূজাকেন্দ্রিক নয়। আমাদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে এবং সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কোনো তথ্য পেলে প্রথমেই ধরে নিবেন এটা গুজব। পরে যাচাই-বাছাই করবেন। তিনি আরো বলেন, আপনারা এলাকায় বসবাস করেন। কে বা কারা মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, চুরি, কিশোর গ্যাংসহ অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িত, আপনারা আমাদের চেয়ে ভালো জানেন। তাই আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। আমরা ব্যবস্থা নিবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীলের সভাপ্রধানে ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌ. মো. জাকির হোসাইনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনীর হাজীগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. আরিফ হোসাইন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন মাজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন মডেল মসজিদের পেশ ইমাম মো. মিজানুর রহমান ও গীতা থেকে পাঠ করেন বলাখাল শরদাঞ্জলি গীতা নিকেতনের শিক্ষক দীপঙ্কর চক্রবর্তী সৈকত। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মো. আব্দুর রউফ, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রোটা. রুহিদাস বণিক, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম পাটওয়ারী, জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমীর বিএম কলিমুল্লাহ, হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি মো. যুবায়ের হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা প্রচার ও দাওয়াত বিষয়ক সম্পাদক মো. কামাল গাজী। আরো বক্তব্য রাখেন হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান মাহমুদ, ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষে বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিলন, শ্রীরামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের পুরোহিত স্বামী সেবাময়ানন্দ, বেলচোঁ কারিমাবাদ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মো. মিজানুর রহমান, পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাধাকান্ত দাস রাজু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে, কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম, ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, গোলাম মোস্তফা স্বপন, মজিবুর রহমান, নুরুল আমিন হেলাল, হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু ছাইদ ও মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দীপক চন্দ্র শীল। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সুশীল সমাজের লোকজন।