প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২১, ১১:১২
মডেল মসজিদ কেনো?
'বিশ্বে এই প্রথম কোনো সরকার একসঙ্গে এই বিপুলসংখ্যক মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে'
১০ জুন বৃহস্পতিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্ম বার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ৫০টি মসজিদ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নূরুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্যে মডেল মসজিদ কেনো এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, মসজিদ শুধু নামাজের জন্যে নয়, সমাজের আরও বিষয়গুলো মসজিদের সাথে একাত্মতা পোষণ করতে দেশের বৃহৎ প্রকল্পের মধ্যে মসজিদ নির্মাণ হলো দ্বিতীয় প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করা হবে। আজ প্রধানমন্ত্রী একযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেন।
|আরো খবর
এসব মসজিদে পবিত্র কোরআন চর্চার জন্যে হিফজখানা, হজযাত্রী ও ইমামদের জন্যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং মুসলি্লদের জ্ঞান আহরণের জন্যে মসজিদে নববীর আদলে ইসলামিক লাইব্রেরির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সের মধ্যে পৃথক ভবনে ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে থাকবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অফিস, কনফারেন্স রুম, গবেষণা কক্ষ, প্রতিবন্ধী কর্নার, হজযাত্রীদের প্রাক্-নিবন্ধন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবাসনের ব্যবস্থা ইত্যাদি।
মডেল মসজিদ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) শফিক তালুকদার গত বুধবার সাভার উপজেলা মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে এ প্রকল্পে মসজিদগুলোর অবস্থান এবং নির্মাণশৈলী ও সরকারের ব্যয়ের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন।
এই কর্মকর্তা বলেন, দেশে যুগান্তকারী ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৫০টির মতো মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও ১০০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। তিনি জানান, বিশ্বে এই প্রথম কোনো সরকার একসঙ্গে এই বিপুলসংখ্যক মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে। এ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে শফিক তালুকদার বলেন, ইসলামী মূল্যবোধ ও মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের প্রচারণার পাশাপাশি জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের মূল বাণী প্রচার করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সরকার সারাদেশে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিশ্বে এ ধরনের প্রকল্প নজিরবিহীন। পদ্মা বহুমুখী সেতুর পর নিজস্ব অর্থায়নে এটা সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প।
২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর।
চারতলাবিশিষ্ট প্রতিটি মসজিদে একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ জন মুসলি্ল নামাজ আদায় করতে পারবেন। আর তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদে একত্রে ৯০০ জন মুসলি্লর নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরিদুল হক খান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নুরুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। গণভবন থেকে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ পিএমও এবং গণভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে 'বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের পথিকৃৎ' শীর্ষক একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।
সরকারপ্রধান অনুষ্ঠান থেকে খুলনা জেলা মডেল মসজিদ, রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ এবং সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলা মডেল মসজিদের ধর্মপ্রাণ মুসলি্লদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ প্রকল্পের আওতায় জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে চারতলা এবং উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকায় তৃতীয় তলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। মূল মসজিদটি হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। নারীদের জন্যে পৃথক নামাজকক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী মুসল্লিদের নামাজকক্ষে সহজে প্রবেশের সুবিধার্থে র্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
যে ৫০টি মডেল মসজিদ নির্মিত হয়েছে সেগুলো হলো ঢাকার সাভার উপজেলায়, ফরিদপুরের মধুখালী ও সালথা উপজেলায়, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ও কুলিয়ারচর উপজেলায়, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলায়, শরীয়তপুর সদর ও গোসাইরহাট উপজেলায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, শেরপুর ও কাহালু উপজেলায়, নওগাঁর সাপাহার ও পরশা উপজেলায়, সিরাজগঞ্জ জেলা ও সদর উপজেলায়, পাবনার চাটমোহর উপজেলায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলায়, দিনাজপুরের খানসামা ও বিরল উপজেলায়, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায়, পঞ্চগড় সদর ও দেবীগঞ্জ উপজেলায়, রংপুর জেলা, সদর উপজেলা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলায়, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায়, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায়, ময়মনসিংহের গফরগাঁও ও তারাকান্দা উপজেলায়, চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলায়, জামালপুর সদর ও ইসলামপুর উপজেলায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও বিজয়নগর উপজেলায়, ভোলা সদর, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায়, খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায়, কুষ্টিয়া সদর, খুলনা জেলা, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায়।